ঢাকারবিবার , ১৯ মে ২০২৪
  1. সর্বশেষ

সামাজিক অবক্ষয় ও আমাদের নৈতিকতা

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

আসাদুল্লাহ আল গালিব

আমরা সবাই সমাজে বসবাস করি এ তো চিরন্তন সত্য । সমাজ ই আমাদের কে নিজেদের দায়িত্ব, কতর্ব্য ও নৈতিকতা শেখায় । সমাজের ভিন্নতার কারণে সামাজিক নিয়মাবলীরও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় । সমাজ হলো এমন এক ব্যবস্থা, যেখানে একাধিক চরিত্র একত্রে কিছু নিয়ম-কানুন প্রতিষ্ঠা করে একত্রে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলে। মানুষের ক্ষেত্রে একাধিক ব্যক্তি একত্র হয়ে লিখিত কিংবা অলিখিত নিয়ম-কানুন তৈরি করে; এরকম একত্র বসবাসের অবস্থাকে সমাজ বলে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত এর পৃথক কোনো ভৌগলিক ও জাতিগত পরিচয় ছিলনা।তখন এই অঞ্চলকে ভারত সাম্রাজ্যের একটি অংশ হিসাবে ধরা হতো এবং ব্রিটিশ সময় থেকে একে সমগ্র বেঙ্গল এর পূর্ব অংশ হিসাবে গঠন করা হয়, যা শাসিত হতো ব্রিটিশ শাসক ও হিন্দু সমাজপতি, বণিক, এবং জমিদার দ্বারা। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে, বর্তমান বাংলাদেশের নেতৃত্ব অমুসলিম কর্তৃত্ব থেকে পাকিস্তানের পশ্চিমা অ-বাঙ্গালী মুসলিম অভিজাত শ্রেণীর দখলে আসে। অতঃপর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরই একটি নতুন জাতি এবং নতুন সামাজিক কাঠামো হিসাবে জন্ম হয়।

এবার আসি সামাজিক অবক্ষয়ে।
অবক্ষয় শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘ক্ষয়প্রাপ্তি’ ।
‘ সামাজিক মূল্যবোধ তথা সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ধৈর্য, উদারতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, নান্দনিক সৃজনশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ, পারস্পরিক মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলী লোপ পাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়াকে সামাজিক অবক্ষয় বলে ।

আমরা ক্রমেই এক নিষ্ঠুর সময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি যেখানে মানবিকতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, দয়া, মমতা এসব শব্দের কোনো অস্তিত্বই নেই! তার জায়গা দখল করে নিয়েছে অনৈতিকতা, অমানবিকতা, নিষ্ঠুরতা, স্বার্থপরতা, জিঘাংসা, হিংসা, বিদ্বেষ কিংবা এ জাতীয় সব নেতিবাচক শব্দের কালো হাত। প্রতিদিনের খবরের কাগজে এমন অনেক খবর আসে, যা দেখলে যে কোনো সভ্য মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।

বর্তমান সময়ে সামাজিক অপরাধগুলোর মাত্রা অতিক্রম করতে চলেছে। এ অবস্থায় এখনই লাগাম টেনে ধরা না গেলে আগামী ১০/১২ বছরে ভয়াবহ রূপ নেবে সামাজিক অপরাধ। দেশে ভয়াবহ ব্যাধির মতো দানা বাঁধছে সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়। আর নীতি-নির্ধারক মহলের অবহেলা আর নজরদারির অভাবে সামাজিক অবক্ষয়ের শিকার ব্যক্তিদের প্রাণহানির ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অর্থের প্রতি অতি লালসা এবং শ্রেণি, পেশা নির্বিশেষ সব মানুষের অসম প্রতিযোগিতা, নৈতিক মূল্যবোধের অভাব,সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা, অন্য দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা, দাম্পত্য কলহ ও স্বামী-স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাসহীনতা, সামাজিক উন্নয়নে পদক্ষেপ না নেওয়া, বিষণ্নতা ও মাদকাসক্তি, রাষ্ট্রের উদাসীনতা ইত্যাদি। সামাজিক অপরাধের পেছনে বিষণ্নতা দায়ী। দেশে বর্তমানে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ লাখ মানুষ অতিমাত্রায় বিষণ্নতায় আক্রান্ত। বিষণ্নতা থেকে যদি তাদের ফিরিয়ে আনা না যায় তবে সামাজিক অপরাধের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। বর্তমান সময়ে আমাদের পরিবারগুলোতে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার চর্চা কতটা হয়? দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সম্পর্ক সূত্রে ও কর্মকাণ্ডে নৈতিক মূল্যবোধ কতটা রক্ষিত হয়? এ ছাড়া পরিবারের সদস্যরা পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে কতটা সতর্ক? পরিবার তো শুধু খাওয়া ও শোয়ার জায়গা নয়, এর চাইতে আরও বেশি কিছু। এ বিষয়ে সচেতনতার অভাবে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বাড়তে থাকে অভিযোগের মাত্রা। এখান থেকেই উৎপত্তি হয় ক্ষোভ, বিষণ্নতা, বিশ্বাসহীনতা। পরিবারের সদস্যরাই সমাজে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেখানে তাদের মানসিকতা ও কর্মকাণ্ডের প্রতিফলন ঘটে। চারিদিকে যে সামাজিক অবক্ষয় ও তারুণ্যের অবক্ষয় চলছে তার কি কোন প্রতিষেধক নেই ? আমরা কি সমাজকে কখনোই কলুষিত মুক্ত করতে পারবো না ?
– পারব । তবে তার জন্য যারা সমাজকে কলুষিত করছে, সমাজের মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার ক্ষুণ্ন করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। যে করেই হোক সামাজিক সুস্থতা ফিরে আনতে হবে।

মূলত: এই সর্বগ্রাসী সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি। সেই সাথে ধর্মীয় অনুশাসনের অনুশীলন, পরমত সহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করাসহ সর্বক্ষেত্রে অশ্লীলতাকে শুধু বর্জনই নয় প্রতিরোধ করা আজ আমাদের সকলের দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। যার শুরুটা হতে হবে গৃহাভ্যন্তর থেকেই। এটা সকলেরই মনে রাখা উচিত যে, সামাজিক সমস্যা দূর করতে রাষ্ট্রের সহযোগিতার হয়তো প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু মূল দায়িত্বটি কিন্তু পরিবার তথা সমাজকেই নিতে হবে । আর নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে একজন আদর্শবান নাগরিক ও সত্যিকারের মুসলিম হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারলেই এই মরণব্যাধি অবক্ষয় থেকে জাতি, সমাজ এবং দেশকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

লেখক : আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।

160 Views

আরও পড়ুন

বিচ্ছুর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

শারমিন মীমের কবিতা “ভেজাল”

শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

শার্শায় ভোটগ্রহণ নিয়ে কর্মকার্তাদের সাথে নির্বাচন কমিশনারের ব্রিফিং

নাগরপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপি নেতা দুলাল বহিষ্কার

গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে বুটেক্স শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

রূপগঞ্জের জাঙ্গীর কুদুর মার্কেট-নদীরঘাট রাস্তাসহ ড্রেন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন

নাগরপুরে হেভিওয়েট প্রার্থী না থাকায় জমেনি উপজেলা নির্বাচন

“রাখে আল্লাহ, মারে কে” : নাইক্ষ্যংছড়ি ছালামী পাড়ায় মোটরসাইকেল মার্কার সমর্থনে উঠান বৈঠকে চেয়ারম্যান প্রার্থী তোফাইল

কবি ফিরোজ খানের কবিতা

নাইক্ষংছড়িতে প্রিজাইডিং সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ !!

লোহাগাড়ার আজিজ কাতারে মারা গেলো স্ট্রোকে