———
পুরো বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে স্থিমিত হয়ে পড়েছিল। অফিস-আদালত, ব্যাবসা-বাণিজ্য,গার্মেন্টস-কলকারখানা, দোকান-পাট সবকিছুই এক প্রকার বিধি-নিষেধের মধ্য দিয়ে চলছিল। মানুষজন খাবারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই সংগ্রহ করতে পারছিল না। ঠিক তখনই ঘরবন্দি কিছু মানুষের চোখে মুখে জেগে উঠেছে নতুন কিছু করার স্বপ্ন। তারা অন্য ঘরবন্দিদের প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের অনলাইন ও অফলাইন ব্যবসা-বাণিজ্যের। কেউ প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, কেউ নিজের তৈরি হরেক বাহারের পিঠাপুলি, কেউবা প্রয়োজনীয় পোষাক বা শখের গহণা, আর্ট ও ক্রাফটসহ বিভিন্ন দ্রব্য নিয়ে উপস্থিত হয়। এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে, এক শহর থেকে আরেক শহরে পৌছে যায় গ্রহীতার চাহিদাকৃত পণ্য ও খাদ্যদ্রব্য। এভাবে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণির উদ্যোক্তা। এই ঘরবন্দি সময়, অবসর ও বেকার তরুণ-তরুণীদের খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার এক নতুন দ্বার।
কিছুদিন আগেও যারা চাকরির আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছিল, বেকার বসে ছিল, বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিল। আজ তাদের অনেকেই হয়ে উঠেছে সাহসী উদ্যোক্তা। বুক বেধেঁছে নতুন আশায়। ব্যস্ত সময় ও কর্মমুখর জীবনে কেউ কেউ নিজের সৃজনশীলতা , নিজের ভালো লাগাকে হারিয়ে ফেলেছিল। এই অবসর ঘরবন্দি সময় তাদের নিজেদের খুঁজে পাবার সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। কেউ তো নিজের মেধা, পরিশ্রম, সাহস আর সততার বলে হয়ে উঠছে পরিচিত ব্যাবসায়ী কিংবা উদ্দোক্তা। অনেকে দেশের বিলীন হওয়া হস্তশিল্পসহ বিভিন্ন দেশীয় পণ্য ঘরে ঘরে পৌছে দিচ্ছে। দেশ ফিরে পেয়েছে তার হারানো ঐতিহ্য। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে দেশের অর্থনীতির চাকা আরো সচল হবে।
চীন, আমেরিকা, জাপানের মত রাষ্ট্রগুলো এত উন্নত কেন? কারণ তারা নিজেরা নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে এবং অন্যের কোন ক্ষুদ্র কাজকেও তারা ছোট করে দেখে না। তারা জানে এক একটি ক্ষুদ্র কাজই বড় কিছুর আঞ্জাম দেয়। আমাদের দেশেও অনেক সম্ভবনাময় কর্ম আছে। কিন্তু যে কোন ছোট কাজ কিংবা ব্যতিক্রমধর্মী কাজকে শুরুর দিকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয় এবং সেসব কাজে অনুৎসাহিত করা হয়। আজ আমরা এতো পিছিয়ে আছি এই অবমূল্যায়নের কারণেই।
যেদিন আমরা মনে করতে পারব, আসলে কোন কাজই ছোটো নয়, সেদিন থেকে আমরা উন্নয়নের পথে হাঁটার মানচিত্র খুঁজে পাব। যে জাতি যতদ্রুত ছোট-বড় যে কোন কাজকে মূল্যায়ন করতে শেখে, তারা তত শীঘ্রই উন্নতি লাভ করে।পরিশেষে আমাদের সকলের উচিত, নতুন উদ্যোক্তাদের পাশে দাড়ানো এবং তাদের কাজে উৎসাহিত করা। প্রয়োজনে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করা। যাতে তারা তাদের আজকের ক্ষুদ্র কর্ম উদ্যোগকে ছড়িয়ে দিতে পারে বিশ্ব পরিমণ্ডলে।
তাসমিদা মাহমুদ।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়