ঢাকারবিবার , ১৯ মে ২০২৪
  1. সর্বশেষ

আন্তঃআফগান শান্তি আলোচনা: কেমন হবে আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৫:৫২ অপরাহ্ণ

Link Copied!

আল মাসুম সাকিল

২০০১ পরবর্তী আফগান বাস্তবতা ইতিহাস হতে চলেছে, যুদ্ধের ময়দান ছেরে শান্তির ডাকে সাড়া দিয়ে আলোচনার টেবিলে বসেছে ভবিষ্যত আফগানিস্তানের রূপকাররা। কেমন হবে এই নয়া আফগানিস্তান?

দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের যুদ্ধের ফলাফল এখন আর কারো অজানা নয়। আফগানিস্তানে আমেরিকার প্রতি সৈন্যের পেছনে বছরে খরচ হয় ১০ লাখ ডলার। ২০০১ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত যুদ্ধের খরচ প্রায় ৯ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। এই যুদ্ধে তাদের প্রায় ২ হাজার ৩০০ সৈন্য মারা গেছে আর ২০০০০ এর কাছাকাছি সৈন্য আহত হয়েছে। স্পষ্টতই প্রতীয়মান যুক্তরাষ্ট্র পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় আরেকটি ভিয়েতনাম পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সম্প্রসারণ নীতি পরিত্যাগ করে দীর্ঘস্তায়ী শান্তির পথে হাটছে।

যদিও প্রশ্ন থেকে যায় সেই শান্তি কতটুকু দীর্ঘস্তায়ী হবে আর কতটুকুই বা শান্তি? নাকি যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় টিকে যাবার অনুঘটক। সে যাই হোক, পরিবর্তন প্রত্যাসন্ন আর আর তার হাওয়া কোন দিকে মোড় নেয় সেটাই দেখার বিষয়।

গত ফেব্রুয়ারিতে কাতারে তালেবান-যুক্তরাষ্ট্র যে শান্তি চুক্তি হয়েছিলো সেখানে উভয়পক্ষ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছিলো। যুক্তরাষ্ট্র তালেবানকে দরকষাকষিতে রাজি করানোর বিনিময়ে সৈন্য সরিয়ে নেয়ার দাবি আমলে নিয়েছে, আফগান সরকার-তালেবান উভয়ের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের বিষয়টিও সেখানে ছিলো। যদিও আফগান সরকার এবং তালেবানের মধ্যে পরিষ্কার ভাবে চিন্তা-চেতনা, সংস্কৃতি, দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য বিরাজমান। ফলে, এই কয়েক মাসে বিষয়টির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নে উভয় পক্ষের মধ্যে যথেষ্ট মতবিরোধ লক্ষ্য করা গেছে, আফগান সরকার কিছু বন্দির মুক্তি আটকে দিয়েছিলো তাদের অপরাধের ধরন বিবেচনায়, পাশাপাশি উভয়ের একে অপরকে স্বীকৃতিগত দ্বন্দ, আফগান সরকার পরিচালনায় আশরাফ ঘানি-আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহর দ্বন্দ্ব সহ সমসাময়িক কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব শান্তি প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ ‘আন্ত-আফগান’ আলোচনাকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো। তবে এখানে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ভূমিকা আফগান-তালেবান দুই পক্ষকেই শেষ পর্যন্ত আলোচনার টেবিলে এক করতে পেরেছে।

গত সপ্তাহে তালেবান পক্ষের প্রধান আলোচক মোল্লা আব্দুল গনি বারদার আলোচনার শুরুর বক্তৃতায় তাদের ইসলামিক আমিরাত প্রতিষ্ঠার কথা পুনর্ব্যক্ত করছেন অপরপক্ষে আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ও আফগান সরকারের অবস্থান তুলেধরেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও স্বাধীন ভাবে তাদের মধ্যকার আলোচনা এগিয়ে নেবার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু এই আলোচনা থেকে ঐকমত্যে পৌছানোর সম্ভাবনা কতটুকু যেখানে উভয়ের শান্তির ধারনার মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য বিদ্যমান। আফগান প্রতিনিধি দলের নেতা আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ বলেছেন তারা একটি ন্যায্য ও মর্যাদাপূর্ণ শান্তির সন্ধান করছেন। পশতুন প্রধান তালেবানদের সেই ধারনায় নারী ও সংখালঘুদের অবস্থান কোথায় সেসব ভাববার বিষয় বটে।

ভবিষ্যৎ বিজয়ীরা নির্ধারন করবে, সেই বিবেচনায় আফগানিস্তানে সামনের দিনগুলো কেমন হবে তা ধারনা করা যায় কিছুটা। আফগানিস্তানের এই রাজনৈতিক মিমাংসায়, তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে তাদেরকে ছাপিয়ে আসলে পেছন থেকে ভূমিকা রাখবে বৃহৎ আর আঞ্চলিক শক্তিগুলোর নিজেদের স্বার্থের চুলচেরা বিশ্লেষণ। যুক্তরাষ্ট্র যদিও সৈন্য সরিয়ে নেবার কথা বলেছে তারপরও তারা যে এখান থেকে একেবারে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে তা কিন্ত নয় যেহেতু এখান থেকে সহযেই নজরে রাখা যাবে তার বৈশিক ও আঞ্চলিক পরমাণু শক্তিধর শত্রু-মিত্রদের। অপরদিকে রাশিয়াও তার পুরনো অবস্থান আবার ফিরে পেতে চাইবে, এমনকি ফেলে দেয়া যায় না আগামী দিনে রাষ্ট্রগঠনে চায়নার বিনিয়োগ এর প্রভাবও, ইরানও চাইবে তার অবস্থান সুদৃঢ় রাখতে আর ভারত পাকিস্তান দৈরথে আফগানিস্তান হয়ে উঠছে সম্ভাব্য কাশ্মীর, সে ইঙ্গিত ইতোমধ্যে তাদের কূটনীতিক তৎপরতায় অনেকটা টের পাওয়া গেছে। এইসব বিবেচনায় আফগানিস্তানে সামনের দিনে একটি যুদ্ধের অবসান হলেও অপেক্ষা করছে আরো অসংখ্য সংঘাত।

বর্তমান যুদ্ধের সূচনা বড়জোর ১৯৭৯ সালের সোভিয়েত আগ্রাসন হলেও ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ভূ-কৌশল গত গুরুত্বের বিবেচনায় বারংবার আফগান ভূখণ্ড বিদেশি আক্রমণের কবলে পরেছে তবুও তাদের পরাভূত করা সম্ভবপর হয়ে উঠে নি। এটাই হয়ত আফগানদের জন্য সবচে প্রেরণার বিষয়, তবে অভ্যন্তরীণ জাতিগত বিভিন্নতা তাদের এইশক্তির জায়গাকে বরাবর সংঘাতে টেনেছে। এবারও তার ব্যাতিক্রম কিছু ঘটছে না। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে দীর্ঘদিনের যুদ্ধে জর্জরিত আফগানিস্তানে শান্তি, একটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি সব পক্ষেরই কাম্য।

তার প্রেক্ষাপট আফগানদেরই রচনা করতে হবে। সেই বিবেচনায় চলমান আন্ত আফগান আলোচনায় ভবিষ্যৎ আফগানিস্তানের শাষন কাঠামোর রূপরেখা নির্ধারণে তাদের মতৈক্যে পৌছার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। তালেবানরা যদিও বর্তমানে অধিকাংশ ভূখণ্ডের দখলে আছে এবং একটি স্বাতন্ত্র্য ব্যবস্থা চালু রেখেছে, তারা অনেক সময় ধরে যুদ্ধের ময়দানেও টিকে আছে সফলভাবে। তবে রাজনৈতিক ময়দানের সফলতার জন্য তাদের অভ্যন্তরীণ ঐক্য যেমন বজায় রাখা প্রয়োজন তেমনি বৈদেশিক পরাশক্তিদের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতিও অতীব জরুরী। তালেবানদের জন্য এছারা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়াতে পারে শান্তি আলোচনায় অনিচ্ছুক দলত্যাগীরা, যাদের অনেকেই আল কায়েদা, আইএস এ যোগ দেবার সম্ভাবনা আছে যা নিরাপত্তা কাঠামোকে নতুন করে পরিবর্তন করতে পারে। সর্বাপরি, পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায়, সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ঐক্যবদ্ধ আফগানিস্তান তখনই সম্ভব যখন সকল আফগান জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান প্রতিষ্ঠিত হবে। নয়ত আবার হাল আমলের উদাহরণ সিরিয়ার মত বৈশ্বিক আর আঞ্চলিক পরাশক্তি সমূহের ছায়া যুদ্ধের ময়দান হয়ে উঠবে আফগানিস্তান নতুন কোন গৃহযুদ্ধের আয়োজনে।

লেখক :

শিক্ষার্থী: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

49 Views

আরও পড়ুন

বিচ্ছুর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

শারমিন মীমের কবিতা “ভেজাল”

শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

শার্শায় ভোটগ্রহণ নিয়ে কর্মকার্তাদের সাথে নির্বাচন কমিশনারের ব্রিফিং

নাগরপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপি নেতা দুলাল বহিষ্কার

গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে বুটেক্স শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

রূপগঞ্জের জাঙ্গীর কুদুর মার্কেট-নদীরঘাট রাস্তাসহ ড্রেন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন

নাগরপুরে হেভিওয়েট প্রার্থী না থাকায় জমেনি উপজেলা নির্বাচন

“রাখে আল্লাহ, মারে কে” : নাইক্ষ্যংছড়ি ছালামী পাড়ায় মোটরসাইকেল মার্কার সমর্থনে উঠান বৈঠকে চেয়ারম্যান প্রার্থী তোফাইল

কবি ফিরোজ খানের কবিতা

নাইক্ষংছড়িতে প্রিজাইডিং সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ !!

লোহাগাড়ার আজিজ কাতারে মারা গেলো স্ট্রোকে