নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
২০২০ সালের মার্চ মাসে যখন করোনা মহামারীতে দেশের মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছিল, তখন বোয়ালখালী উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া খাতুনের ডাকে সাড়া দিয়ে ত্রাণ বিতরণের কাজে পুরো বোয়ালখালী চষে বেড়িয়েছিলেন। ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি অসহায় মানুষদের পাশে থেকে সহায়তার হাত বাড়িয়েছিলেন নিজের সাধ্য মতো। অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আবাসন বরাদ্দের আবেদন যাচাই বাছাই পূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের লক্ষে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করে। মাঝে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতা কিছুদিন দমিয়ে রাখলেও সুস্থ হবার পর আবারো মানবিক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বলছিলাম, বোয়ালখালী উপজেলার দক্ষিণ কড়লডেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক ইসলামের কথা। করোনাকালীন মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন নিরবে। লকডাউনে যখন জনজীবন স্থবির, তখন আশপাশের গরিব, অসহায় ও দুস্থ মানুষের দুর্দশা দেখে নিজের ফেসবুক আইডিতে বন্ধুদের কাছে সাহায্য চেয়ে একটা স্ট্যাটাস দেন তিনি। তার স্ট্যাটাস দেখে মানবিক সহায়তায় হাত বাড়ান দেশ-বিদেশের অনেক ফেসবুক বন্ধু। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে শুরু করেন “মানবতায় বাঁচি, মানবতায় হাসি” নামে মানবিক সহায়তা প্রোগ্রাম। প্রথম পর্যায়ে দেশ-বিদেশের বন্ধুদের দেয়া অর্থে খাদ্য সমাগ্রী পৌঁছে দেন ৩০টি পরিবারে। ৩০টি পরিবারে সহায়তা দিয়ে কিছু গরিব আর দুস্থ মানুষের মুখে আহারের সংস্থান করলেন। আস্তে আস্তে তার চলমান এই কার্যক্রম দেখে অনেকেই তাদের সাধ্যমতো সহায়তা প্রদান শুরু করলেন। দ্বিতীয় ধাপে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে আরো ২৮টি গরিব এবং দুস্থ পরিবারে পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্যসামগ্রী। ফেসবুক বন্ধুদের এমন সাড়া পেয়ে মানবিক শিক্ষক ফারুক ইসলামের কর্মস্পৃহা যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রতিনিয়ত অসহায়দের সাহায্যার্থে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
মানবিক এই শিক্ষক বলেন, করোনাকালীন অসহায় মানুষের কষ্ট দেখে তাদের জন্য কিছু একটা করার তাড়না ছিলো মনে। কিন্তু আমার একার পক্ষে অনেক মানুষকে সহায়তা করাটা ছিলো দুঃসাধ্য। একদিন নিজের ফেসবুক আইডিতে অসহায়দরে জন্য সহায়তা চেয়ে একটা স্ট্যাটাস দিই। ঐ স্ট্যাটাস দেখে দেশ বিদেশের অনেক বন্ধু সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাদের পাঠানো অর্থ দিয়ে এই পর্যন্ত ৫৮টি অসহায়, দুস্থ পরিবারের মাঝে খাদ্যসমাগ্রী হিসেবে চাল, ডাল, পিঁয়াজ, আলু ও তেল বিতরণ করি। এসব খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করতে গিয়ে দেখেছি মানুষের মাঝে কতোটা অসহায়ত্ব বিরাজ করছে। আমার এই কার্যক্রম হয়তো ছোট্ট পরিসরে পরিচালিত হচ্ছে, কিন্তু আমরা প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে এভাবে অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর কাজে এগিয়ে আসি তাহলে অনেক দুস্থ পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারবো। তিনি আরো বলেন, তার এই কার্যক্রম চলমান, যে কেউ চাইলে মানবিক এই প্রোগ্রামে সহায়তার হাত বাড়াতে পারবেন। এ পর্যন্ত তার মানবিক কার্যক্রমে যারা হাত বাড়িয়েছেন তিনি তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, শিক্ষক মো. ফারুক ইসলাম বোয়ালখালী উপজেলার শেষ প্রান্তের দক্ষিণ কড়লডেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করলেও, তার নেতৃত্বে বদলে গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই বিদ্যালয়টির চেহারা। ২০১৭ সালে কর্মদক্ষতার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি চট্টগ্রাম জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়ে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা সফরে ফিলিপাইন যাবার সুযোগ পান। এছাড়া ২০১৯ সালে বোয়ালখালী উপজেলার শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক নির্বাচিত হন। করোনাকালীন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে তিনি করোনা যোদ্ধার স্বীকৃতিও পান।