ঢাকারবিবার , ২৪ নভেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

কুতুবদিয়া দ্বীপ : পর্যট‌নের অপার সম্ভবনা

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
৩ জুলাই ২০২৪, ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা কক্সবাজারের সাগরবেষ্টিত অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। বিখ্যাত ধর্মীয় সাধক কুতুবউদ্দীনের নামানুসারে এই দ্বীপের নামকরণ করা হয় কুতুবদিয়া। দ্বীপের নৈসর্গিক সৌন্দর্য যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমণবিলাসী পর্যটকদের। চোখ জুড়ানাে বিস্তৃত সমুদ্র সৈকতে বিশাল বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশির বিরামহীন আঁচড়েপড়া ঢেউয়ে যেন বিমােহিত হয়ে যায় মনপ্রাণ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন দ্বীপের প্রতিটি কোনায় কোনায় সজ্জিত করছেন বিধাতা আপন মহিমায়। দ্বীপের সর্ব দক্ষিণে বাইন, কেওড়া, পশ্চিমে ঝাউগাছের বাগানে গেলে যেন মনে হয় সুন্দরবনের কোনো একটা অংশে বিচরণ করছি। আর উত্তরে বাতিঘর দেখতে যেমন চোখ ধাঁধানাে দৃশ্য, ঠিক তেমনি রাতের বেলা বিশাল সাগরের বুকজুড়ে নাবিকের দিক নির্দেশনায় উঁকি দিয়ে যায় অভিরাম আলাের খেলা।

দ্বীপের উল্লেখযােগ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে– ঝাউবেষ্ঠিত ২২ কিমি সমুদ্র সৈকত, বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, পশ্চিমে জেগে উঠা নতুন চর (মায়াদ্বীপ), দেশে স্থাপিত প্রথম বাতিঘর, দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিখ্যাত সাধক শাহ আবদুল মালেক (রহ.)-এর মাজার, প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন কালারমার মসজিদ, শুটকি মহালে অর্গানিক শুটকি উৎপাদন, মাঠ থেকে সরাসরি লবণ উৎপাদনের দৃশ্য, সৈকতের সারি সারি ঝাউগাছ, সিটিজেন পার্ক, কুতুবদিয়া চ্যানেলসহ আরাে অনেক অদেখা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

দ্বীপের অবিচ্ছিন্ন প্রায় ২২ কিলােমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, যা পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার সৈকতের আদলে গড়া। স্বল্প খরচে মনােরম পরিবেশে উত্তম ভ্রমণ পিপাসুদের পিপাসা মেটানাের সবচেয়ে ভালো সুযােগ এই দ্বীপ। একদিকে যেমন কক্সবাজারের স্বাদ নেওয়া যায় অপরদিকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের স্বাদ মিলবে পর্যটকদের একই জায়গায়। জীব বৈচিত্র্যময় দ্বীপের সমুদ্র সৈকতে রয়েছে লাল কাঁকড়া, সামুদ্রিক কাছিম, শামুক, ঝিনুক, গাঙচিল, বক, মাছরাঙা ও সমুদ্রের বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ বহু প্রজাতির চেনা অচেনা প্রাণী। তুলনামূলক পরিচ্ছন্ন ও কোলাহলমুক্ত বালুকাময় এ সমুদ্রসৈকত যেকোনো ভ্রমণবিলাসীর মনকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে।

সদর ইউনিয়ন বড়ঘােপের ঠিক পশ্চিম পার্শ্বে সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন রয়েছে পার্ক, যেখানে রয়েছে পর্যটকদের বসে বিশ্রামের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা। পার্কে পর্যটকরা বসে বিশ্রামের সাথে সাথে উপভােগ করতে পারবে বেলাভূমিজুড়ে বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশির অভিরাম আঁচড়ে পড়ার অনাবিল সৌন্দর্য। সাগরের বুক ছুঁয়ে বহমান মুক্ত মৃদু বাতাসে ঝাউগাছের সারিতে হাটতে হাটতে হারিয়ে যাই স্বর্গীয় পরিবেশে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তও দেখা যায় কুতুবদিয়ার সৈকত থেকে। অগণিত গাঙচিল সমুদ্রপৃষ্ঠ ও বাতাসে ভেসে বেড়ায় মুক্ত ডানা মেলে।

ব্যস্ত জেলেরা পাড়ি দিচ্ছে নৌকা নিয়ে বঙ্গোপসাগরের গর্ভে মৎস্য আহরণের নিমিত্তে, ফিরে আসে মুখ ভরা হাসি আর জাল ভর্তি মাছ নিয়ে, সেটাও সরাসরি দেখার সুযােগ মিলবে কুতুবদিয়ার সৈকতে। সমুদ্র কিনারায় সৈকতের ধার ধরে উত্তরে অগ্রসর হলেই দেখা মিলবে ঐতিহাসিক বাতিঘরের আর সৈকতের ধার ধরে দক্ষিণে অগ্রসর হলেই দেখতে পাবেন বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের। এছাড়াও যেকোনো গাড়িযােগে উভয় স্থানে যাওয়া যায় খুব সহজেই।

মাঠে গিয়ে দেখা মিলবে দেশের বৃহত্তম লবণ উৎপাদন শিল্পে সরাসরি লবণ উৎপাদনের দৃশ্য। মৌসুমী ফসলের ক্ষেতে দেখা মিলবে টাটকা মৌসুমী ফল ও সবজির। দেখা মিলবে শুটকি মহালজুড়ে ব্যস্ত জেলেদের অর্গানিক শুটকি উৎপাদনের মহাকর্মযজ্ঞ। বড় বড় পাখার ঘূর্ণনের ভনভন শব্দ যেন জানান দিচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের উপস্থিতি। বনভােজনের জন্য এমন সুন্দর ও নিরাপদ স্থান আর হয় না। কুতুবদিয়ার অতিথিপরায়ণ ও ভদ্র স্বভাবের মানুষগুলাের আতিথেয়তায় আপনি মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিখ্যাত সাধক আবদুল মালেক শাহ’র মাজারে বহু যুগ আগে থেকেই রয়েছে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভক্তদের নিয়মিত আনাগােনা। মাজারে রয়েছে আগত ভক্তদের বিনামূল্যে থাকা ও খাওয়ার ব্যাবস্থা। রয়েছে সাধক আবদুল মালেক শাহ’র কবর জেয়ারতের মাধ্যমে ধর্মীয় পরিতৃপ্তি লাভের সুযােগ।

প্রাচীনকাল থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে দেশী-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের সমস্যা নিরসনে সবচেয়ে প্রাচীন ও দেশের প্রথম বাতিঘর স্থাপিত হয় এ কুতুবদিয়ায়। বাতিঘরের বিচ্ছুরিত আলো ২৫-৩৫ কি.মি গভীর সমুদ্র থেকে দেখা যায়। বাতিঘরের নির্মাণকাল ১৮৪৬ সাল এবং ঘূর্ণায়মান বাতি স্থাপিত হয় ১৮৯২ সালে।

দীর্ঘদিন ধরে কুতুবদিয়া দ্বীপের গঠন প্রক্রিয়া শুরু হলেও এ দ্বীপ সমুদ্র বক্ষ থেকে জেগে উঠে চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে। ধারণা করা হয়, পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে এ দ্বীপে মানুষের পদচারণা। হযরত কুতুবুদ্দীন নামে এক কামেল ব্যক্তি আলী আকবর, আলী ফকির, এক হাতিয়া সহ কিছু সঙ্গী নিয়ে মগ পর্তুগীজদের বিতাড়িত করে এ দ্বীপে আস্তানা স্থাপন করেন।

অন্যদিকে আরাকান থেকে পলায়নরত মুসলমানেরা চট্টগ্রামের আশেপাশের অঞ্চল থেকে ভাগ্যান্বেষণে উক্ত দ্বীপে আসতে থাকে। জরিপ করে দেখা যায়, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, পটিয়া, চকরিয়া অঞ্চল থেকে অধিকাংশ আদিপুরুষের আগমন। নির্যাতিত মুসলমানেরা কুতুবুদ্দীনের প্রতি শ্রদ্ধান্তরে কুতুবুদ্দীনের নামানুসারে এ দ্বীপের নামকরণ করেন কুতুবুদ্দীনের দিয়া, যা পরবর্তীতে কুতুবদিয়া নামে স্বীকৃতি লাভ করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে এই দ্বীপে বসবাস শুরু করে। এই দ্বীপের বয়স ৬০০ বছর পেরিয়ে গেছে। এই দ্বীপের আয়তন প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে এবং এখনও সাগরের ঢেউয়ের প্রভাবে ভেঙ্গে সমুদ্রে পরিণত হচ্ছে সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগরকন্যা কুতুবদিয়া দ্বীপটি।

বাংলাদেশের যেকোনো জায়গা থেকে কুতুবদিয়ায় আসার সহজ উপায় হচ্ছে : দূরপাল্লার যে কোনো গাড়িতে করে চট্টগ্রামে এসে নতুন চাঁদগাও থানার মােড় ও ৩য় কর্ণফুলী সেতুর গােড়া থেকে বাসযােগে (এস আলম ও সানলাইন) বাঁশখালী হয়ে পেকুয়ার মগনামা ঘাটে আসতে হবে কিংবা সিএনজি চালিত ট্যাক্সি অথবা রিজার্ভ যে কোনো গাড়ি নিয়ে একই পথে ঘাটে পৌঁছাতে পারবে। ঘাট থেকে নৌকা যােগে (ডেনিশ বােট) ২৫ – ৩০ মিনিটের স্বল্প দৈর্ঘের দূরত্বে কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিয়ে কুতুবদিয়ার বড়ঘােপ ঘাট ও দরবার ঘাটে নামতে পারবে অনায়াসে। একই পথে স্পীডবােটযােগে ৬ – ৮ মিনিটেও দ্বীপে পা রাখতে পারবে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে চ্যানেলের পরিবেশ শান্ত থাকে, এসময় চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার যাত্রাটি বিশেষভাবে উপভােগ্য ও তুলনামূলক নিরাপদ হয়ে থাকে। বড়ঘােপ ঘাট থেকে অটোরিক্সা, টমটম, ট্যাক্সি কিংবা মােটর সাইকেলযােগে সহজে যাওয়া যায় কুতুবদিয়ার যে কোনো প্রান্তে। গাড়ির ড্রাইভারদের কাছ থেকেই আপনি সহজে পেতে পারেন দর্শনীয় স্থানগুলােতে যাওয়ার দিকনির্দেশনা।

রাত্রি যাপনের জন্য রয়েছে বিভিন্নমানের পর্যাপ্ত ও মানসম্মত হােটেল। খাবার হােটেলে পাবেন টাটকা সবজি ও সুস্বাদু সামুদ্রিক সবরকমের মাছ। খাওয়ার খরচ অন্য সব পর্যটন এলাকার তুলনায় অবিশ্বাস্য কম। কুতুবদিয়ার এই সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পকে আরাে উন্নত করতে সরকারের বিশেষ পরিকল্পনা ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে উদ্যোগ নিলে কুতুবদিয়া দ্বীপ দেশের অন্যতম পর্যটন স্পটে পরিনত হবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

আলী ওসমান শেফায়েত
কুতুবদিয়া, কক্সবাজার।
ইমেইল: aliosmansefaet@gmail.com

195 Views

আরও পড়ুন

বোয়ালখালীর নব যোগদানকৃত শিক্ষা অফিসার হারুন উর রশীদকে বরণ

জামালপুরে মৃত আইনজীবী হলেন অতিরিক্ত জিপি

তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদ্রাসা, সাইনবোর্ড শাখার বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

সাইফুল ইসলামের কবিতা : শীতের আমেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ইসলামি বক্তা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

পাবনার হেমায়েতপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ : নিহত ১

কাপাসিয়ায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির বিশাল শোভাযাত্রার আয়োজন

কাপাসিয়ায় ইসলাম শিক্ষা শিক্ষক পরিষদের উদ্যোগে সিরাতুন্নবী উপলক্ষে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন

কক্সবাজারের ঈদগাহতে ফুলকুঁড়ি আসরের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন

জবিস্থ শরীয়তপুর জেলা ছাত্রকল্যাণের নেতৃত্বে সৌরভ – মনির

কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের কারা নির্যাতিত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটনকে সংবর্ধনা ও ফুলেল শুভেচ্ছা

দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে জাতীয় ঐক্যমত্যের বিকল্প নেই–মিয়া গোলাম পরওয়ার