ঢাকাশনিবার , ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

ইতিহাসের স্মরণীয় একটি দিন ১৬ই ডিসেম্বর

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
১৬ ডিসেম্বর ২০২০, ৩:২৯ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় সোনালী একটি দিন ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর। রক্তনদী পেরিয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা সেদিন বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলো। বাংলার আকাশে সেদিন উদিত হয়েছিলো বিজয়ের রক্তিম সূর্য। লালসবুজের পতাকা নিয়ে পথচলা শুরু হয়েছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের। এই সূর্য এখনো আলোড়িত করছে বাংলার প্রতিটি নাগরিক ও জনপদকে।

স্বাধীনতা প্রতিটি জিনিসের জন্মগত মৌলিক অধিকার। কিন্তু খোদাপ্রদত্ব এ মৌলিক অধিকারে অনেক সময় হস্তক্ষেপ করে ক্ষমতায়উম্মত্ত কিছু মানুষ। আর তখনই অপরিহার্য হয়ে উঠে মুক্তি-সংগ্রামের। জান-বাজি রেখে লড়াই করে পৃথিবীতে যারা অধিকার আদায় করে নিয়েছে, বাঙালি জাতি তাদের অন্যতম। স্বাধীনতার এ সংগ্রামে সেদিন কোনো বিবেদ ছিলো না। ছিলো না দল, মত বা ধর্মের কোনো বিভাজন। হাতে হাত ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো মুক্তির এ মহান লড়াইয়ে। বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের গগনবিদারী সেই ঘোষণা, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দিবো। বাংলার মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ’। দৃঢ়প্রত্যয়ী সেই ‘ইনশাআল্লাহ’র প্রেরণাতেই হানাদার মুক্ত হয়েছে এ মাটি। মূলত মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালির জীবন সংগ্রাম ও বেঁচে থাকার একটি প্রেরণা ও চেতনার মূল উৎস। জামিআ মাদানিয়া খুলনার প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিস মাওলানা ইমদাদুল্লাহ কাসেমী এ বিষয়ে বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধটা ছিলো মূলত স্বপক্ষ শক্তির লড়াই। এ দেশ ও জাতির অধিকার রক্ষার ও নিজস্ব স্বপ্ন বাস্তবায়নে এ ছিলো এক অবধারিত বাস্তবতা। অস্ত্রশস্ত্র ও কলাকৌশলে দুর্বল ও ছোট হওয়া সত্ত্বেও সময়ের প্রয়োজনে পুরো জাতি একতাবদ্ধ হয়েছিলো মুক্তির এ সংগ্রামে।

মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল যদিও ১৯৭১ এর ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের সংক্ষিপ্ত এ সময়টুকু। কিন্তু আমরা বলতে পারি সূচনা হয়েছিলো অনেক আগেই। সংগ্রাম ও লড়াইয়ের দীর্ঘ এক প্রক্রিয়ার শেষ অধ্যায় হলো একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ। বিশেষত ১৯৪৭ এর ভারত বিভক্তি এটিকে অপরিহার্য করে তুলেছিলো বিশেষভাবে। তাই একাত্তরের এ সংগ্রাম যেমন নিজেদের অধিকার আদায়ের তেমনি ইংরেজদের সুবিধাভোগী শাসকগোষ্ঠীর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলী প্রদর্শনও বটে। এজন্য মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর সঠিক ইতিহাসগুলো সবার জানা উচিৎ। বর্তমানপ্রজন্ম সঠিক ইতিহাস থেকে অনেক দূরে রয়েছে।

সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তাহীনতা ও মৌলিক অধিকারে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর অবৈধ হস্তক্ষেপই সশস্ত্র একটি লড়াইয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলো। এটা স্বাভাবিক যে , যখনই জুলুম নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়, মাজলুমদের মুক্তির আকাঙ্খাও তখন তীব্র হয়। একাত্তরের এ মহান সংগ্রাম ছিলো জালিমের বিরুদ্ধে মাজলুমানের লড়াই। জুলুমি শক্তির মুকাবেলায় ৭১ এ ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো দৃঢ়ভাবে। এতেই আমাদের ভৌগোলিক মুক্তি অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নৈতিকতার চরম অবক্ষয় ও চারিত্রিক অধঃপতনের কারণে আমরা যেন সেই আগের অবস্থানেই ফিরে গিয়েছি। যে সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্নে মুক্তিকামী জনতা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো স্বাধীনতার সংগ্রামে। তা এখনো অধরাই রয়ে গেছে। বরং নিত্যনতুনপন্থায় সমাজ আরো কলুষিত হয়েছে। তাই স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের সামাজিক সংস্কারটা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। এ জন্য আলেম উলামাসহ সমাজের দায়িত্বশীল সবার এ বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য করা উচিৎ। কারণ নৈতিক অবক্ষয়ই পরাধীনতাকে টেনে আনে ও বরণ করে নেয়। তা ছাড়া ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণেও তিনি জনগণের সাংস্কৃতিক মুক্তির কথা বলেছেন। তাই এখানে প্রশ্ন রয়েই যায় যে, সাংস্কৃতিকভাবে মুক্তি আমরা কতটুকু অর্জন করেছি। একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমাদের পূর্ববর্তী আলেমদের নেতৃত্বে ব্রিটিশ বিরোধী যে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিলো, এর পরিসমাপ্তিই হলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ।

আর এ মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের সক্রিয় অংশগ্রহণও ছিলো। ভারত পাকিস্তানের আলেমরাও সাহায্য করেছিলো আমাদের এ মুক্তির সংগ্রামে। বিশেষভাবে ফিদায়ে মিল্লাত আসআদ মাদানী রহ. এ ক্ষেত্রে বেশ জোরালো ভূমিকা পালন করেছিলেন। বাংলাদেশ থেকে যে বিপুলসংখ্যক শরণার্থী ভারতে অর্থসংগ্রহ করে রিলিফের ব্যবস্থা করেন। তাছাড়া বাংলাদেশ অভিমুখে আমেরিকার সপ্তম নৌবহর পাঠানোর প্রতিবাদে তিনি দশ হাজারেরও বেশী মানুষ নিয়ে দিল্লীস্থ মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তার অকৃত্রিম এই ভালোবাসার প্রেক্ষিত অতি সম্প্রতি বালাদেশ সরকার তাকে বিদেশী বন্ধু স্বাধীনতা সম্মাননা প্রদান করেছে। ২০১৩ সালে জাতীয় স্বাধীনতা পদক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে তার পক্ষে এ পদক গ্রহণ করেন তার সুযোগ্য সন্তান সাইয়্যিদ মওদুদ মাদানী। তাই একাত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলন শুধু এ দেশের ভূখ- কেন্দ্রীক কোনো সংগ্রাম নয়। বরং সামরাজ্রবাদী ব্রিটিশ বেনিয়াদের কবল থেকে মুক্তির শেষ ধাপও বটে।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যদিও পুরো জাতির অংশগ্রহণ ও সমর্থন ছিলো। তবে এর বিরোধিতাও করা হয়েছিল। ইসলামের নাম ভাঙিয়ে কিছু মানুষ এ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু অধিকাংশ আলেমসমাজ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল। কারণ যেখানেই জুলুম নির্যাতন ও শোষণ হয়েছে, সেখানেই আলেমসমাজ প্রতিবাদ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা হুসাইনুল বান্না বলেন, নির্দিষ্ট একটি দল ইসলামের লেভেল লাগিয়ে ইসলামের বিরোধিতা করেছিলো। কোনো হক্কানী আলেম মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে সভা সমাবেশ বা সক্রিয় কোনো কার্যক্রম করেনি। বরং সক্রিয়ভাবে দেওবন্দী ধারার কোনো আলেম মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী কর্মকণ্ডেও লিপ্ত ছিলো না।

বিজয় ও মুক্তির সুন্দর এক স্বপ্ন নিয়ে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো স্বাধীনতা সংগ্রামে। হাজারও ত্যাগ ও জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। স্বাধীনতা যেমন আল্লাহর প্রদত্ত সব সৃষ্টির মৌলিক অধিকার তেমনি তা অর্জনও হয়েছে সবার সম্মিলিত প্রচষ্টায়। আর ইতিহাসের এ স্মরণীয় দিনটি ছিল ১৯৭১এর ১৬ই ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস।

অতএব, শিক্ষিত অশিক্ষিত, কৃষক শ্রমিক চাকুরে, বণিক, আলেমসমাজসহ সবার দায়িত্ব হলো কষ্টে পাওয়া এই বিজয়কে রক্ষা করা। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন তথা সুখী সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলাটাই এখন মূখ্য বিষয়। বিজয়ের আনন্দে হারিয়ে যাওয়ার চেয়ে বিজয়মাল্য বয়ে বেড়ানো কঠিন। প্রয়োজন আত্মার বলীষ্ঠতা। আর সুন্দর ও বলীষ্ঠ আত্মাবিনির্মাণে কাজ করেন উলামায়ে কেরাম।

মোঃ হুসাইন আহমদ
শিক্ষার্থী, তাকমিল (মাস্টার্স ডিগ্রী)
দারুস-সুন্নাহ টাংগাইল।

175 Views

আরও পড়ুন

নীলফামারী ডিমলায় সমন্বয়ক দাবি করে চাঁদাবাজির অভিযোগ।

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তিতে দোয়া কামনা

সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

শান্তিগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ

বুটেক্সে শিক্ষক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে একাডেমিক কার্যক্রম

লোহাগাড়ায় প্রবাসী বাইক আরোহীকে চাপা দিয়ে পালালো অজ্ঞাত গাড়ি

বুটেক্সে চলছে তিন দিনব্যাপী ইসলামিক বুক ক্যাম্পেইন

এক মহাজাগতিক বিরল ঘটনার সাক্ষী হতে চলছে বিশ্ব

সাংবাদিক তৈয়বুরের বাবার মৃত্যু, দাফন সম্পন্ন : শান্তিগঞ্জ প্রেসক্লাবের শোক

চলে গেলেন কবি মার্জেনা চৌধুরী