———-
পৃথিবীর অন্যতম রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক শক্তিশালী মহাদেশ হল ইউরোপ। ইউরোপ মহাদেশ গণতন্ত্রের আশ্রয়স্থল এবং সূতিকাগার। প্রাচীন গ্রিসকে গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলা হয় এবং পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন গণতান্ত্রিক দেশ বলা হয় যুক্তরাজ্যকে।অন্যদিকে পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান উত্তর আমেরিকা মহাদেশে।উত্তর আমেরিকা মহাদেশও অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক দিক থেকে পৃথিবীর অন্যান্য মহাদেশ থেকে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে।বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ সম্পর্ক চরম উত্তেজনার ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যালয় পেন্টাগন প্রধান পিট হেজ ব্রাসেলসে ন্যাটো মিটিং উপলক্ষে তার প্রথম দাপ্তরিক সফর করেন ইউরোপে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর তার প্রথম ভাষণ দিতে প্যারিস সফর করেন।রাশিয়ান-আমেরিকান বন্দি বিনিময়ের কথা শুনে আমেরিকানরা আশ্চার্যন্বিত হন।যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনে যুদ্ধ বিরতি এবং শান্তি স্থাপনের জন্য দীর্ঘক্ষণ ফোনে কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদোমির জেলেনিস্কির সাথে। জার্মানিতে বার্ষিক মিউনিখ সম্মেলনে ভ্যান্স কি বলেন তার জন্য সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এবং তার ওপর নির্ভর করবে ইউরোপ-আমেরিকার পরবর্তী দ্বিপক্ষীয় পররাষ্ট্রবিষয়ক সম্পর্ক কি হতে চলেছে। নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের ইউরোপ নিয়ে পররাষ্ট্রনীতি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মতো।ভ্যান্স তার বক্তব্যে ইউরোপীয় মিত্রদেশের সামরিক খাতে অপর্যাপ্ত তহবিল এবং ইউরোপে রাশিয়ার সৈন্যদের সামরিক উপস্থিতির কড়া সমালোচনা করেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্র নীতির পরিবর্তন সংগঠিত হয়েছে। ইউরোপের প্রতিরক্ষার জন্য বাইডেন প্রশাসন ৪০% এর বেশি অর্থ ব্যয় করেছেন ওবামা প্রশাসনের চেয়ে।২০২১ সালে ট্রাম্পের শাসনামল শেষ হলে বাইডেন প্রশাসন ইউরোপে বিশাল পরিমাণ প্রশিক্ষিত সৈন্য প্রেরণ করেন। ট্রাম্প ইউরোপের বিদ্যুৎখাত মজবুত ও শক্তিশালী করার জন্য কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।ইউরোপিয়ানদের রাশিয়ান গ্যাস নির্ভরতা থেকে উত্তোলন করতে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে এল.এন.জি রপ্তানি করছে।ট্রাম্প রাশিয়ার নর্ড স্ট্রিম টু গ্যাস পাইপলাইনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। যার ফলে ইউরোপের গ্যাস ও বিদ্যুৎ নিরাপত্তার অবনতি হতে পারে। ওবামা প্রশাসন এর পরে ট্রাম্পই ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী অস্ত্র প্রদান করে কিন্তু তারপরও তারা রাশিয়ার কোন ক্ষতিসাধন করতে পারেনি। রাশিয়ান গোয়েন্দা সংস্থার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পতন ট্রাম্পের শাসনামলেই।যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল এবং সানফ্রান্সিসকো থেকে কূটনীতিকদের সরিয়ে নেয় রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া কেউ কারো প্রতি দুর্বল বা উদাসীন নয়। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে দ্বিদলীয় সচেতনতা জাগ্রত করে যাতে চায়না যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থে আঘাত করতে না পারে। ট্রাম্প প্রশাসন মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে জাতীয় নিরাপত্তার কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে পূর্ব এশিয়া।যাইহোক যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিও বলেন বর্তমানে বহুমাত্রিক পৃথিবীতে যুক্তরাষ্ট্রকে শুধু একটি অঞ্চলের দিকে নজর দিলে চলবে না। ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক দিক বিবেচনা করে সৈন্য সামন্ত সরিয়ে এশিয়ার দিকে নিয়ে আসতে চাচ্ছে।
আমেরিকার অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইউরোপ অত্যন্ত মঙ্গলজনক।ইউরোপ মহাদেশ এবং উত্তর আমেরিকা মহাদেশের জিডিপি একত্রে পৃথিবীর মোট জিডিপির অর্ধেক। আমেরিকার তিন ভাগের দুই ভাগ বৈদেশিক বিনিয়োগ আসে ইউরোপ থেকে। তাছাড়া আমেরিকার বৃহত্তম রপ্তানি বাজার হলো ইউরোপ। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাষ্ট্রের মধ্য ৪৮ টি রাষ্ট্র ইউরোপে সরাসরি পণ্য রপ্তানি করে। ব্যবসায় অভিজ্ঞ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অন্যান্যদের চেয়ে ব্যবসায় ভালো বুঝবে এটাই স্বাভাবিক। রাশিয়াও পুরোপুরিভাবে ইউরোপে তাদের ব্যবসায়িক স্থায়িত্ব বাড়াতে চাচ্ছে যেটি আমেরিকান শ্রমিক এবং আমেরিকানদের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমেরিকার বৃহত্তম রপ্তানি বাজার এবং বৈদেশিক বিনিয়োগকারী ইউরোপের নিরাপত্তা দিতে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য উপস্থিত থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন আমেরিকান বিশেষজ্ঞরা।পরিশেষে বলা যায় যে,ইউরোপ নিরাপদ থাকলে আমেরিকার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির বৃদ্ধি ঘটবে এবং রপ্তানি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।
মোঃ ওসমান গনি শুভ,
সাবেক শিক্ষার্থী,পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়