ঢাকাসোমবার , ২১ এপ্রিল ২০২৫
  1. সর্বশেষ

বেগম রোকেয়া: নারী জাগরণের অগ্রদূত

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
১৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:৫২ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

বাঙালি মুসলমান সমাজ যখন সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতায় আবদ্ধ ছিল তৎকালীন নারী সমাজের শিক্ষার আলো নিয়ে এসেছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। বেগম রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ই ডিসেম্বর রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে। বাঙালি লেখক, শিক্ষাবিদ, বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়াকে স্মরণ করে এবং তার কর্ম ও আদর্শকে উদযাপনের লক্ষে জন্ম ও মৃত্যুদিন ৯ ডিসেম্বর কে রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে তিনি হয়েছিলেন বাঙ্গালি নারী জাগরনের অগ্রদূত।তার পিতা আবু আলী হায়দার সাবের বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী হলেও মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে ছিলেন রক্ষণশীল। বড় দুই ভাই বোনের সহযোগিতায় তিনি গোপনে শিক্ষালাভ ও সাহিত্যচর্চা করেন।
১৮৯৮ সালে বিহারের ভাগলপুরের সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।তিনি ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন একজন উদার মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তি।স্বামীর সুদূরপ্রসারী প্রভাবের কারণেই তার জ্ঞানচর্চার পরিধি বিস্তৃত হয় । ইংরেজি ভাষার দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি দেশ-বিদেশে লেখকদের রচনা সাথে পরিচিতি ঘটতে থাকে। ১৯০৯ সালে স্বামী মারা গেলে বেগম রকেয়া নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন।
১৯০২ সালে নভপ্রভা পত্রিকায় ‘পিপাসা’ প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতি পান।১৯৫০ সালে মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য রচনা ‘Sultana’s Dream’, যার অনূদিত রূপ ‘সুলতানার স্বপ্ন’ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি সর্বজন পরিচিত হয়ে ওঠেন। এটিকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক ধরা হয়। তার অন্যান্য গ্রন্থ হলো- পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী, মতিচুর।প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আর লিঙ্গসমতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। হাস্যরস আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সাহায্যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসম অবস্থান ফুটিয়ে তোলেন তিনি।
২০০৪ সালে বিবিসি বাংলা একটি জরিপের আয়োজন করে। ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ তিরিশ দিনের ওপর চালানো জরিপে শ্রোতাদের ভোটে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ২০ জনের জীবন নিয়ে বিবিসি বাংলায় বেতার অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। সেই শ্রেষ্ঠ কুড়ি জনের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে ছিলেন আমাদের বেগম ৱোকেয়া। বিবিসি বাংলা প্রথম তথ্যচিত্র নির্মাতা বাণী দত্ত জানান কিভাবে কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে তিনি নারীদের শিক্ষাদানে ব্রতী হয়েছিলেন, কিভাবে নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ বিসর্জন দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাই স্কুল। যেটি আজ কলকাতার লর্ড সিনহা রোড এর প্রথম সারির স্কুল। বেগম রোকেয়াৱ সাংগঠনিক কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ততা ছিল। ১৯১৬ সালে তিনি আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম নামে একটি মহিলা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন এটি নারীদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের নিয়ে কাজ করতো।
বেগম রোকেয়ার অসামান্য অবদানের জন্য তিনি এখনো সর্বজন স্মরণীয় হয়ে আছেন। বেগম রোকেয়া ১৩৭ তম জন্মদিনে গুগল তার নামে একটি ডুডল তৈরি করে। ২০০৮ সালের ৮ অক্টোবর রংপুর বিভাগের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।যা ২০০৯ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নামকরণ করা হয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী দের জন্য আবাসিক হল বেগুম রোকেয়া হল নির্মাণ করা হয়। বাংলাদেশ সরকার বেগম রোকেয়া স্মরণে গণউন্নয়ন মূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে স্থাপন করা হয় বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র। যা বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।ঈ
তিনি প্রথম নারীদের সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার কথা ভেবেছিলেন। বেগম রোকেয়া ছিলেন আত্মশক্তিতে বলীয়ান। অনেক দুঃখের বোঝা মাথায় নিয়েও দিয়ে কখনো অসহায় ভাবেননি। নারী শিক্ষার গুরুত্ব তিনি তার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝেছিলেন। তিনি কখনোই নারীতান্ত্রিক কিংবা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন নারী ও পুরুষ উভয়ের যাতে সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বাঁচেন। হয়তো তিনি নারী-পুরুষকে একটি গাড়িৱ দুটি চাকাৱ সঙ্গে তুলনা করেছেন। নারীজাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন, নারীর পরাধীনতায় হয়েছিলেন সোচ্চার। বর্তমানে নারীদের ভোটাধিকার, শিক্ষার অধিকার,কর্মসংস্থানের সুযোগ হতো না যদি কেউ নিজ থেকে উদ্যোগ না নিত অথবা নারী শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারত। বেগম রোকেয়া তার লেখনীর মাধ্যমে তার সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে নিচের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে বিসর্জন দিয়ে হাজার নারীর মাঝে তার চেতনা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার অনুপ্রেরণা মূলক কাজে বর্তমানে নারীদের এতদূর নিয়ে এসেছে। নারীদের কাছে একজন অনুপ্রেরণীয় ব্যক্তিত্ব। তাইতো ৯ ডিসেম্বর কে বেগম রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়। নারীদের শিক্ষা অর্জনের পথের কাঁটা সরাতে পেরেছিলেন বলেই আজ নারীদের সর্বক্ষেত্রে বিচরণ রয়েছে।
——————
ইয়ামিন আখন্দ
শিক্ষার্থী ;লোক প্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

211 Views

আরও পড়ুন

সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে জেলা সুজনের মানববন্ধন

ইসলামপুরে সাপধরী ইউনিয়ন বিএনপি নেতৃবৃন্দ স্বচ্ছ রাজনীতির চর্চায় ঐক্যবদ্ধ

কাপাসিয়ায় কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের বৃত্তি পরীক্ষার পুরস্কার বিতরণ

কাপাসিয়ায় নবাগত লেখক ও সাংবাদিকদের সাথে সাংবাদিক ফোরামের মতবিনিময় সভা

নীলফামারীতে হবে চিন সরকারের হসপিটাল: স্বাস্থ্যের ডিজি

ঝিনাইগাতীতে কূপ খনন করতে গিয়ে নিহত দুইজনের পরিবারের পাশে বিএনপি

ঠাকুরগাঁওয়ে ব্রাইট স্টার মডেল স্কুল এন্ড কলেজের বর্ষবরণ ও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন

জুরীতে ২৫ নারী উদ্যোক্তাদের গবাদি পশু ও তাঁত শিল্প সামগ্রী বিতরণ

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শেরপুরের দুই ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার

চট্টগ্রাম পিটিআইয়ের প্রশিক্ষণার্থীদের স্কাউটসের ওরিয়েন্টেশন কোর্স

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সহায়তায় জবি ছাত্রদলের হেল্প ডেস্ক

আজ বিশ্ব লিভার দিবস: জেনে নিন লিভার সম্পর্কে