অপেক্ষা
মাইশা আক্তার নিশিলা
এইতো সেই একুশ.
সোনাঝরা সেই একুশ.
যে একুশ কেড়ে নিয়েছে
আমার শৈশব!
যে একুশে পেয়েছি আমি
এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ!
এই সোনাঝরা রোদ সেদিন সকালেও ছিলো,
ছিলো স্নিগ্ধ নীরবতার রেশ।
সেই স্নিগ্ধ নীরবতা-ই ধারণ করেছিলো
আগুন ফুলকির বেশ!
বায়ান্নর এই একুশের সকালেই বাবা গিয়েছিলো রমনার রৌদ্রদগ্ধ মাঠে,,
আমার জন্য ভাষা আনতে।
শেষ বিদায়ে আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলো…
“ভয় পেয়ো না খোকা, প্রয়োজনে দানবের
সামনে বুক পাতবো..তবুও তোমার জন্য
এক ঝুড়ি মায়ের ভাষা আনবো”।
সেদিন বাবার কথার গভীরতা
ওতোটা বুঝতে পারি নি।
শুধু বুঝেছিলাম বাবা আমার জন্য,
আমাদের জন্য, গোটা বাংলার জন্য
কিছু একটা আনতে যাচ্ছে।
তারপর……
কত একুশ যে এলো গেলো,
শুধু এলো না আমার বাবা!
ভাষা এলো, স্বাধীনতা এলো,
শুধু জীবন থেকে হারিয়ে গেলো
সেই শব্দটি “বাবা”!
তীরবিদ্ধ হরিণের মতো
অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগলাম।
অপেক্ষা!!
আমৃত্যু অপেক্ষা!
অশ্রু সিক্ত চোখে আজও
চলমান অপেক্ষা!
শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা!
কই, বাবা তো এলো না।
আজও এলো না।
এক সময় মা ও তার জীবনের ইতি টানলো!
গোটা বিশ্ব একুশের ইতিহাস
ভালোবাসে জানলো।
তবুও শেষ হলো না
আমার অপেক্ষা!
দীর্ঘ ছাপ্পান্ন বছর পেরিয়ে,
আজ আমি মৃত্যুর প্রান্তরে,
তবুও বহমান আমার অপেক্ষা!
আমার এই অপেক্ষার প্রথম এবং একমাত্র সাক্ষী আমার মা..আজ নেই!
শুধু আছে…
রমনার ক্যানভাসের রক্তরাঙ্গা
ঐ কৃষ্ণচূড়া গুলো।
ওদের দেখলে মনে হয়,
ওরা বোধহয়,
আমারই মতো রেয়েছে
এক অতৃপ্ত অপেক্ষায়।
আমার মতো অনেক খোকা আজও আটকে আছে…
ছোট্ট এই শব্দটায়।
প্রিয়জন ফিরে পাওয়ার
এক অতৃপ্ত অপেক্ষায়!
মাইশা আক্তার নিশিলা।
শিক্ষার্থী,লোকপ্রশাসন বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।