নজরুল ইসলাম, কুতুবদিয়া প্রতিনিধিঃ
কক্সবাজারের পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীতে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের মহেশখালী রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা ইউসুফ উদ্দিন (৩০) গ্রামের বাড়ি কুতুবদিয়ায় শায়িত হয়েছেন। বৃহষ্পতিবার জানাযা নামাজ শেষে তাকে উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের উত্তর মগডেইল পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার জানাযায় অংশ নিতে হাজার হাজার মানুষের ঢল দেখে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্ধারিত সময়ের আগেই স্বল্প পরিসরে নামাজে জানাযা শেষ করতে বাধ্য করে।
উল্লেখ্য, ইউসুফ গত ৩০ জুলাই মহেশখালীতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। রোগীর অবস্থা গুরুতর দেখে সেখান থেকে রেফার করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে আটদিন লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহষ্পতিবার (৬আগস্ট) ভোর ছয়টার দিকে মারা যান তিনি।
ইউসুফ কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপের মগডেইল গ্রামের নেজাম উদ্দিনের মেজ ছেলে।
জানা যায়,গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি বনবিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে মহেশখালীতে সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।
ইউসুফের পিতা নেজাম উদ্দিন জানান, ইউসুফ শান্ত, সহজ-সরল স্বভাবের ছেলে। মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতানুল আলম চৌধুরীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তার ছেলেকে প্রাণ দিতে হয়েছে। শুরু থেকেই সুলতানুল আলমের সাথে ইউসুফের মতবিরোধ ছিল। যা তার ছেলের প্রাণ নাশের কারণ বলে অভিযোগ করেন তিনি। ইউসুফের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেছে তার পরিবার।ইউসুফের মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
এদিকে, মহেশখালীতে বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতানুল আলম চৌধুরী ও বিট কর্মকর্তা আহসানুল কবিরের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে হাজারো জনতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেছেন, “রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতানুল আলম চৌধুরী এবং বিট কর্মকর্তা আহসানুল কবিরকে তারা নিয়মিত টাকা দিয়ে বনাঞ্চলের সংরক্ষিত ভূমিতে পানের বরজ, চাষ এবং গৃহ নির্মাণ করে আসছে।
তারা বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় পানের বরজ তৈরির অনুমতির জন্যও আমরা ওই কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকা দিই। এরপর তাদের অনুমতিক্রমেই আমরা বরজ নির্মাণের কাজ শুরু করলে ইউসুফ উদ্দিন নামের তাদের একজন ফরেস্টার অফিসার এসে আমাদের কাজে বাধা দেয়। সাথে নাটকীয়ভাবে বিট কর্মকর্তা আহসানূল কবিরও ছিলেন। তবে সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তার অভিযানের বিষয়টি রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতানুল আলম চৌধুরী আমাদের আগেই অবহিত করে রাখেন এবং মানুষজন নিয়ে হামলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন। তখন ওনারা অভিযানে আসলেই আমরা বিট কর্মকর্তা আহসানুল কবিরের ইঙ্গিতে সহকারী রেঞ্চ কর্মকর্তা ইউসুফ উদ্দিনকে লক্ষ্য করে হামলা চালাই। কিন্তু এরপর নাটকীয়ভাবে মামলা দিয়ে তারাই আবার আমাদের ফাসাচ্ছেন।”
নিহতের ভাই মিনহাজ জানিয়েছেন , চাদাবাজি এবং ঘুষ বাণিজ্যের বিরোধীতা করায় দীর্ঘদিন ধরে সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা ইউসুফ উদ্দিনকে সরানোর চেষ্টা করে আসছিলেন মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতানুল আলম চৌধুরী এবং বিট কর্মকর্তা আহসানুল কবির। তাই সুযোগ বুঝেই তাকে হত্যার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে নেমেছিলেন তারা।
বন বিভাগের এসব নাটকীয় ঘটনায় হয়রানির শিকার মানুষ আজ রাস্তায় নেমেছে। দাবী তুলেছে উপরোল্লেখিত নাটকীয় ঘটনার মূল হোতা মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতানুল আলম চৌধুরী এবং বিট কর্মকর্তা আহসানুল কবিরের অপসারণ পূর্বক সাধারণ মানুষ হতে চাদাবাজি বন্ধের।
এই বিষয়ে জানতে মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতানুল আলম চৌধুরীর সাথে ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।