রফিকুল ইসলাম জসিম | মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার এক কৃতী মেয়ে সুমাইয়া সিরাজী তুলি লন্ডন থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। যুক্তরাজ্যের স্বনামধন্য কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন (Queen Mary University of London) থেকে তিনি এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।
সুমাইয়া তুলি কমলগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী সিরাজী ও ফাতেমা খাতুন দম্পতির একমাত্র কন্যা। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় কমলগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর এইচএসসি ও স্নাতক সম্পন্ন করেন মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে। একাগ্রতা, অধ্যবসায় ও পারিবারিক অনুপ্রেরণায় তিনি পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে—উচ্চশিক্ষার অভিপ্রায়ে।
লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের মধ্য দিয়ে তিনি নিজ জেলা মৌলভীবাজার এবং দেশকে গৌরবান্বিত করেছেন। সময়োপযোগী এই প্রযুক্তিগত ডিগ্রি তাঁর জন্য খুলে দিয়েছে ভবিষ্যতের বহু সম্ভাবনার দরজা।
তুলির পারিবারিক পরিবেশে শিক্ষা ও সংস্কৃতির অনুশীলন ছিল সবসময়। তাঁর বাবা ইয়াকুব আলী সিরাজী একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। মেয়ের এই অর্জনে তাঁদের পরিবারে বইছে আনন্দ, কৃতজ্ঞতা ও গর্বের আবহ।
সুমাইয়া তুলি বলেন,“আমি চাই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে এআই বিষয়ে আগ্রহী হোক। আমাদের দেশ থেকেও যেন আরও মেধাবীরা ভবিষ্যতের নেতৃত্বে আসতে পারে—এটাই আমার স্বপ্ন।”
তাঁর এই সাফল্যে কমলগঞ্জের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের মাঝে ব্যাপক আনন্দ বিরাজ করছে। তাঁরা মনে করছেন, তুলির এই অর্জন বর্তমান প্রজন্মের মেয়েদের জন্য এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
সুমাইয়ার বাবা ইয়াকুব আলী সিরাজী বলেন,
“আমার একমাত্র মেয়ে সুমাইয়া তুলি আজ লন্ডনের মতো জায়গা থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো জটিল বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছে—এটা শুধু আমার নয়, আমাদের পুরো এলাকার গর্ব। ছোটবেলা থেকেই ও অনেক পরিশ্রমী ছিল। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবার। কষ্ট করে হলেও ওর স্বপ্নকে থেমে যেতে দিইনি।
আমার স্বপ্ন ছিল, আমার সন্তান এমন কিছু করুক যাতে দেশের মানুষ গর্ব করতে পারে। সুমাইয়া আজ সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে। আমি সকল পিতা-মাতাকে বলব—ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষা দিতে ভয় পাবেন না। আমি চাই, আমার মেয়ের এই অর্জন যেন আমাদের কমলগঞ্জসহ সারা দেশের মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে।”
তুলির এই অর্জনকে শুধু পারিবারিক গর্ব নয়, কমলগঞ্জ উপজেলা তথা পুরো মৌলভীবাজার জেলার একটি বড় উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। একজন তরুণী, যিনি ছোট শহর থেকে উঠে এসে লন্ডনের মতো প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ একটি দেশে এমন একটি চাহিদাসম্পন্ন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছেন—এটি নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয়। তাঁর এ অর্জনে কমলগঞ্জসহ মৌলভীবাজারের সামাজিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রবাসী মহলে আনন্দের ছোঁয়া লেগেছে। অনেকে বলছেন, সুমাইয়ার এই পথচলা বর্তমান প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা। তিনি প্রমাণ করেছেন—স্বপ্ন থাকলে, চেষ্টা থাকলে, সীমাবদ্ধতা জয় করে অনেক দূর যাওয়া যায়।