অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটনঃ
কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, শ্রমজীবি ও সাধারন মানুষের কাছের মানুষ,দুর্গাপুর ইউনিয়নের তারাগজ্ঞ অঞ্চলের কৃতি সন্তান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা। তিনি একাধারে শ্রমিক নেতা, বরেণ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজহিতৈষী। খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা’র বর্নাঢ্য জীবনের কিছু দিক তুলে ধরা হলো।
১.জন্মঃ
খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা ১৯৫০ সালের ১৩ মার্চ উপজেলার নাশেরা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম খন্দকার হাবিবুর রহমান ও মাতা মরহুমা শাহজাদী বেগম।
২. শিক্ষা জীবনঃ
তিনি ১৯৬৬ সালে তারাগঞ্জ এইচ এন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৬৮ সালে কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৭৪ সালে জামালপুর মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।
৩. ছাত্র রাজনীতিঃ ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ছাত্রদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্র নেতা হিসেবে বিভিন্ন জাতীয় আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন।
৪. মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণঃ তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট( বিএলএফ) বাহিনীর সদস্য হিসেবে এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান করেন।
৫.শ্রমিক আন্দোলনঃ তিনি ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে( বিএডিসি) কর্মজীবন শুরু করেন। বিএডিসিতে যোগদানের বছরই তিনি বিএডিসি এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের(সিবিএ) যুগ্ম সম্পাদক বির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে ৪০ হাজার শ্রমিকদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন বিএডিসি এমপ্লয়িজইউনিয়নের মহাসচিব নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তিনি বিএডিসি কর্মচারী ইউনিয়নের মহাসচিব ছিলেন। তিনি স্কপের সদস্য ছিলেন। সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারীদের যৌথ সংগঠন “সংগ্রাম পরিষদের ” কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক ছিলেন। তিনি ২০০৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) কর্তৃক ব্যাংককে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
৬. রাজনৈতিক জীবনঃ স্বাধীনতা-উত্তর অবিভক্ত জাসদের শ্রমিক সংগঠন “জাতীয় শ্রমিক জোট” এর সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৯১ সালে সাবেক পাটমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল( অবঃ) আসম হান্নান শাহ এর হাত ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি)যোগদান করেন। তিনি গাজীপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি হিসেবে জেলা ও নিজ উপজেলায় দলের বিভিন্ন কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
৭.উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানঃ
খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
৮.ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনঃ
ছাত্র জীবন থেকেই তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, জামালপুর মহাবিদ্যালয় এর গভর্নিংবডির নির্বাচিত অভিভাবক প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি স্বাধীনতার পর থেকে ঐতিহ্যবাহী তারাগজ্ঞ স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা পরিষদ / গভর্নিংবডির একাধিকবার সভাপতি ও সদস্য হিসেবে শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৫ সালে তারাগজ্ঞ স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি থাকাকালীন সময়ে তিনি স্কুলের সাথে কলেজ শাখা প্রতিষ্ঠায় মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। তাছাড়া তিনি মীরপুর বিএডিসি উচ্চ বিদ্যালয়, নাশের উচ্চ বিদ্যালয়, দেইলগাও আজিজিয়া দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এলাকার মসজিদ, হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা, ঈদগাহ মিনার,পাঠাগার প্রতিষ্ঠা সহ বিভিন্ন আর্থ- সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে তাঁর অসামান্য অবদান অনস্বীকার্য। তিনি বিগত ৫০ /৬০ বছর যাবত নিজ এলাকায় জনকল্যাণমুখী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ৭৫ বছর। এ বয়সেও থেমে নেই তিনি। প্রতিদিন কাটে তাঁর দলীয় কর্মকান্ড এবং সামাজিক ও ধর্মীয় নানা মহতি কাজ করে।
লেখক –
মোঃ শামসুল হুদা লিটন সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক।