ঢাকারবিবার , ২৮ এপ্রিল ২০২৪
  1. সর্বশেষ

জীবনের গল্প : ব্যর্থতাই হতাশা নই বরং আত্মবিশ্বাসে সফলতা ছুঁই

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
১৩ মার্চ ২০২৪, ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

—————————–
এডভোকেট ইউসুফ আরমান

পবিত্র নগরী সৌদি আরবের জেদ্দাস্থ কিলো আরবাতাস মসজিদের নুর সংলগ্ন স্থানে জন্ম গ্রহণ করি। আমার পূর্বপুরুষের বাস স্থান চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার অন্তর্গত সাবরাং ইউনিয়নের ০২ নং ওয়ার্ডের রুহুল্ল্যার ডেপা গ্রামের। বর্তমান বসবাস কক্সবাজার পৌরসভাস্থ ০৬ নং ওয়ার্ডের বিজিবি স্কুল সংলগ্ন রোড়, দক্ষিণ সাহিত্যিকাপল্লীতে। আমি এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। আমরা ০৯ ভাই, ০৩ বোন। আমি আমার পরিবারের ৭ নম্বর সন্তান, আমার বড় ৪ ভাই, ২ বোন, আমার ছোট ৪ ভাই ১ বোন। সব মিলিয়ে ছোট বেলা অনেক ভালই কেটেছে সবার যেমন কাটে আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না। অনেক দুষ্টুমি , খেলাধূলা , মজা , হৈহুল্লুর আনন্দ উৎসবে মুখরিত কোন কিছুই কমতি ছিল না যাকে বলে দুরন্তপনার শৈশব। কোন জিনিসের অভাব কোন দিন উপলদ্ধি করি নাই। ১৯৯৩ সাল প্রথম শিক্ষা জীবন মাদ্রাসাদুর নুর এ পড়াশোনার সূচনা হয়।

কালের পরিক্রমায় ১৯৯৬ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি স্বপরিবারে মাতৃভূমি বাংলাদেশে চলে আসি। তখন বাংলাদেশে রাজনীতির প্রেক্ষাপটে সহিংসতা-নৈরাজ্য, হরতাল-অবরোধ থমথমে দেশের পরিস্থিতি। অবাক চোখে নীরবতায় এক নতুন পরিবেশে; অচেনা মানুষের সাথে আমাদের নিত্য নৈমিত্তিক বসবাস। প্রবল আন্দোলন এবং সহিংসতার মুখে আমার বাবার ইচ্ছে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কৃষি জমিতে চাষাবাদে জীবন জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু আমার মায়ের ইচ্ছে সন্তানদের কে শহরের পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত করা। দু’জনের দুই ভাবনায় আমরা বিপাকে পড়েছি। দু জনের মতের বিরোধে সন্তানদের আলোচনায় মুখ্য। তথা বড় সন্তানদের সাথে আলাপ-আলোচনায় মা-বাবার মতের বিরোধের সমাধান। সুতরাং শহরে বসবাসই প্রাধান্য পেল। তার প্রতিক্রিয়া পৃথিবীতে বেঁচে থাকা মানুষের মধ্যে কেউ বলতে পারবে না আমি সব সময় একই রকম ভাবে সময় কাটাই। আবার কেউ এটাও বলতে পারবে না আমি আমার জীবনে শুধু সুখে কিংবা দুঃখে দিন কাটাই। কিছু সময় খারাপ কিছু সময় ভালো এভাবে চলছে এবং চলবে মানুষের জীবন। আর অবশ্যই দুঃখ আছে বলেই সুখের এত মর্যাদা, আবার ওপর দিকে সুখ আছে বলেই দুঃখ এতটা কষ্টের।

শহরে বসবাসের সূচনাঃ
শহরে নিজেদের কোন জমি কিংবা বাড়ি নাই। ঠাই হিসেবে আশ্রয় নেয়া হলো কক্সবাজার উপজেলাস্থ দক্ষিণ ডিককুল গ্রামে থাকা আমাদের জেঠার বাড়িতে। সেখানে নানা অসুবিধার মধ্যে কেটে যায় কয়েক মাস। পরবর্তীতে ভাড়া বাসায় সুখে দুঃখে কেটে গেলো দুটি বছর। এরপর নিজস্ব জমি কেনা হলো কক্সবাজার শহরের বি.ডি আর ক্যাম্প বর্তমান বিজিবি স্কুল সংলগ্ন রোড়, দক্ষিণ সাহিত্যিকাপল্লী এলাকায়। শুরু হলো স্থায়ীভাবে বসবাস আজ অব্দি। বসবাস করতে গিয়ে ভিন দেশী ভেবে কখনো স্থানীয় জন সাধারণের রোষানলে, কখনো সন্ত্রাসীদের বন্দুকের মুখে বহু বাঁধার মুখাপেক্ষী উপেক্ষায় জীবন সংগ্রামে ক্লান্তিকর দেহখানি। যুদ্ধের বিভীষিকায় দেশের প্রতি তিক্ততায় পরিবারের সকল সদস্য ফের সৌদি আরবে চলে যেতে উদ্ভুদ্ধ। ইতিপূর্বে ভাই-বোন চলে যায়। ২০০৩ সালে মাথার বটবৃক্ষ মা ও ছোট বোন চলে যায় সৌদি আরবে। পরবর্তী বছর ২০০৪ সালে আরো ১ ভাই চলে যায়; একই বছর বাবা চলে যায়। আমরা ছোট ছোট ৫ ভাই দেশে বসবাসে অকুতোভয় দুঃসাহসী সংগ্রামে জীবন অতিক্রমে আজ প্রতিষ্ঠিত।

জীবনের গল্পঃ
সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছি আমরা। সেহেতু বাঙলা ভাষা তেমন ভাল বলতে পারি না। ভাষার সংমিশ্রণ থাকায় আমাদের কে অনেকে রোহিঙ্গা আখ্যা দিয়ে তকমা লাগিয়েছে। তৎকালীন আমলে অর্থাৎ ১৯৯৮ সালে জাতীয়তা সনদের প্রয়োজনে ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের ০৬নং ওয়াডের মেম্বারের কাছে স্বাক্ষরের নিতে গেলে তিনি বিতাড়িত করেন। সনদ দেয়া হয় নি। পরে বাবা গ্রামের বাড়ি থেকে জাতীয়তা সনদ এনে প্রযোজনীয়তা সেরে নেয়। কিন্তু সেই দিন বাবার চোখের পানি আমার রন্দ্রে রন্দ্রে প্রতিশোধের আগুন আর প্রতিবাদী হওয়ার শক্তি যোগায়। অতঃপর অস্তিস্থ রক্ষার লড়াই এবং নৈতিক কর্তব্যও বটে বরং প্রতিবাদী হই অন্যায়ের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ শক্তিতে নই কেবল বুদ্ধিতে করাই শ্রেয়। কলাকৌশলে অগ্রসর হতে হবে। এমন অভিপ্রেত নিয়ে আমার মনে নতুনত্বের ভাবনার জন্ম দিল। আমাকে পড়াশোনা ও লেখালেখি উত্তম পন্থার অবলম্বন। তৎ প্রেক্ষিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নের সূচনা। এরপর শুরু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিসরে লেখা দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকার ” ঝিকিমিকি পাতা” ও দৈনিক আজকের দেশ বিদেশ পত্রিকার “কিশোর কানন এবং কিশোর আনন্দ পাতা”ই ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ এবং মতামত-অভিমত, কলাম ইত্যাদি লেখা স্থানীয় পত্রিকা, বিভাগীয় পত্রিকা ও জাতীয় পত্রি, অনলাইন পোর্টালে লেখালেখির প্রচার-প্রসারিত। কাজেই আমার আক্ষেপ ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় লেখুনীর মাধ্যমে।

পরিচিতিঃ
ইউসুফ আরমান, পিতার নামঃ আলহাজ্ব সরাফত আলী, মাতার নামঃ আলহাজ্বা মাবিয়া খাতুন,
দাদার নামঃ মৌলানা মরহুম আমির হামজা, দাদীর নামঃ মরহুমা রোকেয়া বিবি।
জন্ম তারিখঃ ২৯-০২-১৯৮৮ ইং তারিখ। দিনটি সোমবার ছিল।স্থায়ী ঠিকানাঃ- রুহুল্ল্যার ডেপা, ০২ নং ওয়ার্ড, সাবরাং ইউনিয়ন, থানা- টেকনাফ, জেলা- কক্সবাজার। বর্তমান ঠিকানাঃ- দক্ষিণ সাহিত্যিকাপল্লী, বিজিবি স্কুল সংলগ্ন রোড়, ০৬ নং ওয়ার্ড, কক্সবাজার পৌরসভা, থানা ও জেলা- কক্সবাজার। শখঃ লেখালেখি ও ভ্রমণ করা।
বাবা কৃষক ছিল, জীবিকার তাগিদে পরবর্তী বিদেশ পাড়ি জমান ১৯৬৮ সালে। মা গৃহিণী হিসেবে বাবার সুখে দুখে পাশে ছিলেন।

শিক্ষা জীবনঃ
“My Life Is Full Struggle”
১৯৯৬ সালের এপ্রিল এর শেষের দিকে সৌদি আরবের জেদ্দাস্থ মাদ্রাসাতুর নুর-এ প্রাথমিক শিক্ষা / ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপ্ত হয়।
১৯৯৬ সালের আগষ্ট থেকে ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলা বর্ণমালার উপর পড়াশোনা।
১৯৯৮ সালে কক্সবাজার হাশেমিয়া কামিল মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে নিয়মিত অধ্যায়ন আরম্ভ করি পাশাপাশি হেফজ বিভাগে এবং ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ লেখার প্রচেষ্টা চলছে।
২০০০ সালে হেফজ শেষ।
২০০১ সালে রাজাপালং এম ইউ ফাজিল মাদ্রাসায় নবম শ্রেণীতে ভর্তি হই। ২০০৩ সালে দাখিল পাশ করি। একই মাদ্রাসা থেকে ২০০৫ সালে আলিম পাশ করি। ফাজিল এ ভর্তি রেখে উচ্চ শিক্ষা অর্জনে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। চট্টগ্রাম কলেজে বি.এ(অনার্স) ২০০৬-২০০৭ সেশনে ভর্তি। ইতিমধ্যেই ২০০৭ সালে ফাজিলও পাশ করি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০০৮ সালে ফাজিল বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে ডিগ্রি সম্মান অর্জন করি। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ২০১০ সালে অনার্স (স্নাতক) এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১০ সালে কামিল (মাষ্টার্স) সম্পন্ন করি। ভিক্টোরিয়া কলেজ কুমিল্লা থেকে ২০১১ সালে এম.এ (স্নাতকোত্তর) অর্জন করি। শিক্ষা অর্জনে আত্মার তৃপ্তি মেটানো হয় নি। সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ চট্টগ্রাম এ আইন বিষয়ে পড়াশোনা করতে ২০১৪-২০১৫ সেশনে ২ বছর মেয়াদী আইন বিভাগে ভর্তি। ২০১৫ সালে সফল ভাবে সম্পন্ন করি। এক্ষেত্রে কারো প্রতিভা থাকে জাগ্রত আবার কারো প্রতিভা থাকে সুপ্ত। সেই প্রতিভা কে জাগ্রত করতে প্রয়োজনে কঠোর অধ্যাবসায়-অক্লান্ত পরিশ্রম আর সাধনা। যা আমাকে অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে আর যোগ্যতা লাভ করেছি।
“জীবনের প্রতি অধ্যায়/ চাই দৃঢ় প্রত্যয়
চাই ঘাত-প্রতিঘাত / লৌহ কঠিন সত্য হৃদয়”।

জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
জীবনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলাে জ্ঞানার্জন করা একজন সৎ আদর্শিক আইনজীবি কিংবা লেখক হওয়া। একজন চরিত্রবান, আত্মবিশ্বাসী, নম্র-ভদ্র, বিনয়ী, সমাজসেবী, প্রভৃতি গুণ অর্জন করা। নিজেকে সুযােগ্য ও মহৎপ্রাণ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠা। এই সমস্ত অর্জন করা কেবল কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমে। সেই সাধনার মাধ্যমে আমি নিজের ভবিষ্যৎ উন্নতি ও উজ্জ্বল করার জন্য একটি সুন্দর পথ পদর্শক। সেই জন্য সমগ্র জীবন পরিবর্তনের জন্য তার মূল্য অত্যধিক। যদি জীবনটা কে একটি বৃক্ষের সাথে তুলনা করি, তাহলে জীবন হলো সেই বৃক্ষের মূল । সুতরাং জীবনে সাফলতা পেতে হলে সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সঠিক সংগ্রাম অনিবার্য।

কর্ম জীবনঃ
জীবনে সফল হতে কে না চায়? কাজের জায়গাটাতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে জীবনে উন্নতি করতে চায় সবাই। কিন্তু বিষয়টি মোটেও সহজ নয়। জীবনে উন্নতি করতে হলে ও সফলতা পেতে চাইলে পোড়াতে হয় অনেক কাঠখড়। প্রত্যেক মানুষই চায় অর্থপূর্ণ জীবন। অর্থহীন জীবন কারও কাম্য নয়। কিন্তু কীভাবে জীবন অর্থপূর্ণ হয় এ বিষয়ে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। ছাত্র জীবনে লেখালেখি করি কিন্তু আয়-রোজগার নাই। লেখালেখির প্রতি অনিহা চলে আসে। তবে শখের বশে লেখা কিন্তু পেশা হিসাবে নই। ২০০৫ সালের আগস্ট মাস, চট্টগ্রাম শহরের নতুন বাসিন্দা। আকাংক্ষা আর প্রতিক্ষা পরিবারের অর্থবিহীন জীবন প্রতিষ্ঠিত করা। এর ফলে অর্থ সংকটে হাহাকার জীবন। তথা গার্মেন্টসে চাকুরী নেয়া হলো৷ QC পদে। তারপর জীবন বেশ ভালই যাচ্ছিল। ২০০৬ সালের জুনে চাকুরী হতে অব্যাহতি নিয়ে ফেরা হলো ছাত্র জীবনে। এরপর ২০০৯ সালে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে পরিচিত এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে শেয়ার বাজারের আই.পি.ও এবং সেকেন্ডারিতে বিনিয়োগ করি এর পাশাপাশি রিফান্ড (অর্থাৎ চেক) কালেকশনের কাজ শুরু করি। কর্মময় জীবন সব সময় সুখময় হয়। বিশেষ করে আমি আমার ব্যক্তিগত অভিমতে বলতে পারি যে, আমি কাজের মাঝেই আনন্দ পাই। মনে করি, কর্ম জীবনে সফলতা অর্জন করতে হলে আগে প্রয়োজন নিজের ওপর আত্মবিশ্বাসী হওয়া। বেশ ভাল দিনকাল যাচ্ছে। হঠাৎ ২০১০ সালের দিকে শেয়ার বাজারে ধস। বাজারে অস্থিরতা বিরাজমান পরিস্থিতি। আমার ব্যবসারও মন্দা অবস্থা। সব মিলিয়ে বড় ধরণের ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খেয়ে গেলাম। ছাত্র জীবনের আয়কৃত ২৫,০০,০০০/- (পঁচিশ লক্ষ) টাকা হারিয়ে নিঃশ্ব। তখন খুব কাছের আপনজন- বন্ধু-বান্ধব-নিকটতম প্রিয়জন আমার কাছে ছিল না। একাকীত্ব জীবনে হারায় নি মনোবল আর আত্মবিশ্বাস। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় অবিরত।
সংকটময় জীবনঃ- ২০১০ সালে শেয়ার বাজারে যখন ধস নামে আমার পাশে কেউ নাই বা ছিল না। সাহস বা বৃদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়ার অবস্থা আমার ছিল না। সব পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওযার মতো ক্ষমতা, সাহস ও ইচ্ছা শক্তি সকলের থাকে না। প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন অনেক সময়। আমার মাঝে হতাশা-দুর্দশা-দূর্ঘটনা-ভয়াবহতা ছিল স্বাভাবিক বিষয়। হীনম্যনতায় ভূগেছি কিন্তু সিগারেটের কালো ধোঁয়া এবং মদের গ্লাসে চুমুক দেয় নি। সংকটময় জীবন কাটিয়ে উঠার বিরামহীন চেষ্টায় ছিলাম।

চাকুরী জীবনঃ
২০১১ সাল। মাষ্টার্স এ অধ্যায়নরত। নিজের যোগ্যতা লুকিয়ে রেখে এস.এস.সি পাশ দেখিয়ে কম্পিউটার অপারেটর পদে শাহ আমিন গ্রুপে চাকুরীতে যোগদান করি। অক্লান্ত পরিশ্রম আর বিশ্বাস জমিয়ে নিজের অবস্থান সৃষ্টি করেছি। ৬ মাসের মধ্যে হয়ে গেছি একই কোম্পানীর ওশান ওয়েল এর মার্কিটিং অফিস কন্ট্রোলার। আমার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সারা দেশের মার্কিটিং অফিসারগণ। যাদের সাথে আমার নিয়মিত সখ্যতা। সময় ঘনিয়ে যেতে না যেতে কোম্পানীর একাউন্টস ম্যানেজার পদে আসীন হয়। পালা বদলে ২০১৩ সালে চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে বিদায় নিলাম। ২০১৪ সালে চট্টগ্রামের অলংকারে হাসান শেয়ার স্টক এক্সচেঞ্জে চাকুরীতে যোগদান করি। টানা ২ বছর শেষে ফের ইস্তফা দিয়ে বিদায় নিলাম। সুতরাং এইভাবে নিজের জীবন কে ঘোচাতে সুন্দর স্বপ্ন ঘুমিয়ে দেখে আর আশা জেগে থাকে। ঘুম ভেঙ্গে গেলেই স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় আর আশা আমৃত্যু। স্বপ্নকে সত্যি করতে স্বপ্ন পূরণে যত্নবান হয়। নিজের যোগ্যতা, সামর্থ্য ও পারিপার্শ্বিকতা ইত্যাদির সঙ্গে সমন্বয় করি। ছুটে চলছি স্বপ্ন পূরণে। প্রত্যাশা- প্রাপ্তির সব সময় ইতিবাচক চিন্তা। ইতিবাচক চিন্তা ভাবনায় জীবন কে সহজ করি। ক্রমশঃ জীবনে জটিলতা সৃষ্টি হয় না। কিন্তু ভাগ্য এখনো অপরিবর্তনীয়।

পেশাগত জীবনঃ
২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ জীবনে আশা-হতাশা, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনায় পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে নিজের গন্তব্যে ফেরা আসা।
নিজের প্রতি আস্থা রেখে
কাজের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে।
কাজই হোক জীবন চলার সহায়ক। নিজের জ্ঞানকে কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করা। খারাপ সময় চুপ করে পরিস্থিতির সাথে আস্তে-ধীরে মানিয়ে নেয়া। কথা কম বলে সামনে অগ্রসর হওয়া খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সব সময়ই শেখার আগ্রহ বজায় রেখে ও শেখার জন্য সময়, ইচ্ছা শক্তি ও প্রয়োজনে অর্থহীন সময় ব্যয়িত করা। শেখার কোন বিকল্প নেই, শেখার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন ও দক্ষতা এবং পরিশ্রমের মানসিকতায় চলছে দিন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে বিচরণ করি আইনাঙ্গনে। কক্সবাজার জেলার আইনজীবী সমিতির সিনিয়র বিজ্ঞ আইনজীবী অরূপ বড়ুয়া তপু স্যার ও সিনিয়র বিজ্ঞ আইনজীবী রফিকুল ইসলাম ছিদ্দিকী স্যারের নিকট নিজেকে সপে দিলাম।

কষ্টের জীবনঃ

আমি সামান্য একজন কৃষকের ছেলে। বড় আইনজীবী হবার স্বপ্ন নিয়ে আইন পেশায় আসা।এখানে আছে ধৈর্য্য পরীক্ষা। যেহেতু এটি স্বাধীন ও মহৎ পেশা, গুরুবিদ্যা পেশা, হাতে-কলমে শিখা, ভালো কিছু করার শিক্ষা। কিন্তু এখানে নেই কোনো মাসিক বরাদ্দ। শুরুতে একজন জুনিয়র হিসেবে হাজারও কষ্ট। তবু ভালো কিছু শিখতে সিনিয়রদের সঙ্গে প্র্যাকটিসও করি নিয়মিত। দীর্ঘ সময় কোন আয় করতে পারি নি। অভাব অনটনের সংসারে হাহাকার। বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রণায় বোবা কাঁন্না। অশ্রু ভেজা চোখে যন্ত্রণার আর্তনাদ। তখনি কারো হাসির পাত্র, কারো কটুক্তির মন্ত্র, অহেতুক ঠাট্টা-বিদ্রুপ আমায় নিয়ে, কি হবে এত যোগ্যতায় যদি অযত্নে অবহেলায় দিন কাটে। যোগ্যতার প্রমাণ দিতে গিয়ে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল MCQ পরীক্ষায় ব্যর্থ। ২০২০ সালে MCQ পাশ করি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ২ বার লিখিত পরীক্ষায় ব্যর্থ। বার বার Fail করি আর সে ফেইলই হলো জীবনের স্বপ্ন ভাঙ্গার গল্প। তারপর হন্য হয়ে খোঁজি ফেইল FAIL মানে কি? পেয়েছি First Attempt In Learning (অর্থাৎ শিক্ষার প্রথম ধাপ)। এরপর কেবল শিখেছি।

সিনিয়রদের পরামর্শ ও সহযোগিতাঃ
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির দুই জন বিজ্ঞ আইনজীবী অরূপ বড়ুয়া তপু স্যার ও বিজ্ঞ আইনজীবী রফিকুল ইসলাম ছিদ্দিকী স্যারের পরামর্শ ও সহযোগিতায় চলছে জীবনের গতি। একটি প্রবাদ মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে;
আইনজীবীরা কখনো হারে না, হয় তো জিতেন, নয় তো শিখেন। সিনিয়রদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ এবং বিভিন্ন দিকনির্দেশনা আমায় শিখার প্রবনতা বৃদ্ধি করে। আমিও নাচোড় বান্দা হাল ছেড়ে দেয়ার লোক নই। বরং হাল না ছাড়ার গল্প রচনায় বদ্ধপরিকর। সময়ের ব্যবধানে সফলতার গল্পের রচনা করেছি।
সহকর্মীর সহযোগিতাঃ
২০১৬ সালে আইনাঙ্গনে সবেমাত্র বিচরণ করেছি। সেমিপাকা টিন সেট সেই সময় সিনিয়রদের ৩৭ নং চেম্বার ছিল। সেখানে দুই জন সিনিয়রদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য রাজিব দাশ রাজু ও নারায়ন দাশ নিহার নিয়োজিত ছিলেন। তাদের সাথে আমিও যুক্ত হলাম। এই দুই জন মানুষ আমাকে হাতে খড়ি শিখান এবং আদালত পরিচয় করিয়ে দেন। সারাক্ষণ তাদের সাথে চা,নাস্তা, দুপুরের খাবার অনায়েসে হতো এবং আজ অব্দি চালিয়ে যাচ্ছে। কোন ধরণের কার্পন্য করে নি। আমার যাতায়ত খরচ হিসেবে যা সম্ভব দিতেন। যে কোন প্রয়োজনে আর্থিক সহযোগিতা পেতাম। আমাকে দেয়া সময় ও আর্থিক সহযোগিতা কিংবা হাতে কলমে শিখানো কাজে রাজু- নিহার কে ভুলবার নই।
মা-বাবা-ভাইদের কাছে ঋণী আজীবনঃ
বাবা-মা জন্ম দিলেন। লালন-পালন করলেন। হাজারো কষ্ট সয়ে ধীরে ধীরে বড় করলেন। পড়াশোনা করালেন। প্রতিদান হিসেবে কিছু দিতে পারি নি। অথচ আমাকে আজ পর্যন্ত দিয়ে যাচ্ছেন। তবে কিভাবে মা-বাবা বৃদ্ধ অক্ষম। তাদের পক্ষে দেয়া কিভাবে সম্ভব! আমার অবুঝ বাবা-মা বড় ভাইদের প্রতি আকুতি জানায় আমার ছেলে (অর্থাৎ আমি) পড়াশোনা করছে তার খরচ প্রয়োজন। মা-বাবা আমরা বৃদ্ধ-অক্ষম হয়েছি। সুতরাং তাকে পড়াশোনার খরচ তোমাদের বহন করতে হবে। বাবা-মায়ের আকুতি প্রতিটি ভাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। ভাইদের কষ্টেই উপার্জিত অর্থ আমার পেছনে খরচ করেছে। তারা আমাকে অর্থের যোগান দিয়েছে বলে আজ আমি এত যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছি। সত্যিই আমি অভিভূত আমার ভাইদের ঐক্য-আচারণে। যেহেতু আমি বিয়ে করেছি। ৩ সন্তানের জনক হয়েছি। তবু আমায় ছেড়ে যায় নি। আমার দুঃখে তারা সব সময় পাশে ছিল-আছে-থাকবে ইনশাল্লাহ। ফলশ্রুতিতে আমি মা-বাবা-ভাইদের কাছে ঋণী আজীবন।
দাম্পত্য জীবনঃ
২০১৩ সালে বিয়ে করেছি। তখন আমার আর্থিক অবস্থা বেশ ভালই ছিল। কিছু দিন পর নেমে আসে ভয়াবহতা। দুর্দশার কবলে জর্জরিত জীবন। সহায়তার হাত বাড়িয়ে পাশে ছিল শ্বশুড় বাড়ীর লোকজন। সহধর্মিণী সমস্ত কষ্ট-যন্ত্রণা নীরবে সহ্য করেছে। খারাপ সময়ে আমাকে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস যুগিয়েছে। আমাকে স্পৃহা জাগানোর কাজেই সহধর্মিণী নিজেকে সপে দিয়েছে। আমার মাথা অনেকখানি গরম থাকলেও সকল কথা মেনে নিতেন এবং তিনি হেসে হেসে কথা বলতেন। কখনো মান-অভিমান, রাগ-অনুরাগ করে নি। আমার মতো রাগি মানুষের সাথে তোমার প্রস্থান না হওয়া আমার কাছে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের মতো। জীবনে কোচ (Coach) হিসেবেই ২০২৪ পর্যন্ত অন্যন্য ভূমিকা তোমার।
হতাশা নই সফলতা ছুঁইঃ
জীবনে আঁকাবাঁকা পথ অতিক্রম করেছি। বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে চড়াই-উৎরাই নিজের অবস্থানে দাঁড়িয়েছি। কোন বাঁধা তোয়াক্কা না করে নিজের স্বকীয়তায় বেগমান।
কেউ ব্যর্থতায় ধিক্কার দিয়েছে
কেউ সফলতা ছোঁয়ার অনুপ্রেরনা দিয়েছে।
কেউ আমাকে প্রাণ ভরে ঘৃণা করেছে,
কেউ আমাকে ভরসা দিয়ে সাহস যুগিয়েছে।
আমি আমার অবস্থানে অবিচল ছিলাম। কারো কটুকথা আমায় স্পর্শ করে নি। স্বপ্ন পূরণের নকশায় আমি অটুট ছিলাম। আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। যদি লক্ষ্য থাকে অটুট তবে দেখা হবে বিজয়ে এমন স্লোগানে আলহামদুলিল্লাহ হতাশা নই বরং সফলতা ছুঁই। কবিতা টির লাইন না দিলে লেখাটি অপূর্ণ হবে। ০৯-০৩-২০২৪ইং তারিখ আঁধার পেরিয়ে, আলোর দিশারী……..।
“মা-বাবা স্বপ্ন পূরণের প্রার্থনা
ভাই-বোন-ভাবীদের আশা-প্রত্যাশা
আত্মীয়-স্বজনের স্নেহ-ভালবাসা
বংশের প্রদীপ হৃদয়ের উষ্ণতা”।

লেখক
এডভোকেট ইউসুফ আরমান
কলামিস্ট ও সাহিত্যিক
ফাজিল, কামিল, বি.এ অনার্স,
এম.এ, এলএল.বি

355 Views

আরও পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষা যেনো সড়কে গড়াগড়ির কান্নায় স্বপ্ন হয়ে রয়ে গেল!

কুষ্টিয়ায় সর্বোচ্চ ৪১.৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড, তীব্র পানি সংকট

নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

উপজেলা নির্বাচন পরিক্রমা...
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ সাংসদ ইবরাহীমের বিরুদ্ধে

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঢাকায় প্রথম ফার্মা সামিট’২৪ অনুষ্ঠিত

ক্রিকেট ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি : কোনও রান না দিয়েই ৭ উইকেট

চুয়েট বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

এশিয়া এখন জ্বলন্ত উনুন চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ

কাটা হবে ৩ হাজার গাছ, বন বিভাগ বলছে ‘গাছ রক্ষার কোনো সুযোগ নাই’

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি !! 

শেরপুর প্রেসক্লাবের নয়া কমিটি ॥ দেবশীষ- সভাপতি, মেরাজ সা: সম্পাদক

রাজশাহীতে বিএসটিআই’র অভিযানে ৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা।