ঢাকাশনিবার , ২৭ এপ্রিল ২০২৪
  1. সর্বশেষ

করোনা সতর্কতা বিধির বিপরীতে বাস্তবতা ॥

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৮:৪৮ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

——————-

ঘড়িতে সময় ৮ টা বেজে ৫ মিনিট। আজও সময় মতো ক্লাসে পৌঁছাতে পারবো না,তবুও হল গেট থেকে দিলাম ছুট।যখন কলাভবনের সামনে তখন দেখি বটতলায় বসে অনেকে এই সকালেও আড্ডা দিচ্ছে,দেখে মনে হলো আমাদের ক্লাসটাও যদি ক্যান্সেল হয়ে যেত সবাই মিলে জমিয়ে আড্ডা দেয়া যেত। তবে বেশিক্ষণ ভাবার সময় নেই দ্রুত পায়ে ক্লাসরুমের সামনে গেলাম।ইতোমধ্যে ৮ টা ১২ বাজে। সাহস করে দরজাটা একটু ঠেলে যেই এক পা বাড়িয়েছে, স্যারের উচ্চস্বরে ধমক “এতো দেরি কেন? বেরিয়ে যাও ক্লাস থেকে” ঘুমটা গেল ভেঙে। হুম এটা কাল রাতে ঘুমের মধ্যে দেখা একটা স্বপ্ন ছিল।

তবে বিগত ছয় মাস আগেও প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনের চরম সত্যি ছিল এমন ঘটনা।ক্লাস,পরীক্ষা, টিউশনি,পড়াশোনা ,বন্ধুদের সাথে আড্ডা এসব করেই তাদের দিন কেটে যেত। মাঝে মাঝে নিজেরাও ক্লান্ত হয়ে যেয়ে ছুটি খুজতো।সবার জীবনে ছিল প্রাণের ছোয়া।

কিন্ত হঠাৎ সব কেমন বদলে গেল।সব রঙ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো,ছোট বড় সবাই যেন নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে।তার কারণ পৃথিবী জুড়ে করোনা ভাইরাসের ধ্বংসলীলা। ফেব্রুয়ারী ২০২০ এর মাঝামাঝিতে হঠাৎ করেই নিউস চ্যানেলগুলো দেখাতে শুরু করলো বিশ্ব জুড়ে এক ভাইরাসের আগমন ঘটেছে,প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ এতে সংক্রমিত হচ্ছে, প্রাণ হারাচ্ছে বহু মানুষ। বাংলাদেশও এই ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেলো না, ৮ মার্চ প্রথম শনাক্ত হলো এদেশে। বহির্বিশ্বে মৃত্যুর হার বাড়তেই থাকলো, বাংলাদেশেও সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করলো। বিশ্ব যেন অবাক চোখে দেখছিল এই মৃত্যুপুরীর মৃত্যু খেলা, কারণ করার কিছু নাই।এ যেনো এক অদৃশ্য শত্রুর সাথে খালি হাতে লড়াই।

করোনা ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক না থাকায় এবং প্রতিনিয়ত যখন সংক্রমণের হার বাড়তে থাকলো ,দেশবাসী তখন স্তম্ভিত। সরকার বাধ্য হয়ে ১৭ মার্চ সারাদেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলো,২৬ মার্চ অফিস আদালতেও ছুটি ঘোষণা করলো।মানুষ নিজেকে করলো গৃহবন্দী। দরকার ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে আসে না।সারাদেশ যেন নিরব। রাজধানী ঢাকার এত নিরব চিত্র করোনার জন্যই দেখা সম্ভব হয়েছে।মানুষ একদিকে নিজেকে ঘরবন্দী করছিল অন্যদিকে পরিবেশ প্রকৃতি যেন নিজেকে আরো সুন্দর করে সাজিয়ে তুলছিল। কখনো কখনো মনে হতো প্রকৃতিকে আমরা যে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছিলাম প্রকৃতি যেন তার প্রতিশোধ নিচ্ছিল।

করোনা ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক না থাকায় প্রতিরোধের চেষ্টায় একমাত্র অবলম্বন। সারা দেশে বিভিন্ন ভাবে সতর্কতা বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে-
*খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাবেন না।
*বাড়ির বাইরে গেলে মাস্ক পরুন।
*বার বার সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
*একে অপরের সাথে হ্যান্ডসেক সহ ,অপরের স্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
*রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার খান।
এরকম আরো অনেক সতর্কতা বিধি প্রনয়ণ ও প্রচার হয়েছিল এবং হচ্ছে ।জনগণও অদৃশ্য এই শত্রুর ভয়ে এবং মৃতের সংখ্যা দেখে নিজেরাও সমস্ত সতর্কতা বিধি মেনে চলার চেষ্টা করেছিল।কিন্তু কতদিন এইভাবে থাকা যায়। ২/৩ মাস পর ভয়কে জয় করে নিম্নবিত্ত মানুষ বেরিয়ে পড়লো কাজের খোজে, বসে বসে সংসার যে আর চলে না।

সরকারও নিজ দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে আস্তে আস্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস আদালত খুলতে শুরু করলো, বেসরকারি ও ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠানও খুলতে শুরু করলো, অর্থনীতির চাকা ঘুড়তে শুরু করলো।

আজ প্রায় ৭ মাসের কাছাকাছি সময় মানুষের জীবন এমন দুর্বিপাকে পরে আছে।আজও করোনা ভাইরাসের হার সন্তোষজনক পর্যায়ে কমেনি, মৃত্যু হতেই আছে। তবে মানুষ আজ এই পরিবেশের সাথে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে তাদের এই ভাইরাসকে আর ভয় লাগেনা।আজ কোথাও নেই কোন সতর্কতার বালাই,স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলে না। শহরাঞ্চলের মানুষের মাঝে কিছুটা সতর্কতা এখনো দেখা গেলেও গ্রাম পর্যায়ে এক অংশও খুজে পাওয়া দায়।
চায়ের দোকানে ,বাজারে মানুষ আজ বসে বসে এক্সাথে আড্ডা দেয়।মাস্ক পরিহিত মানুষ খুজে পাওয়াই কঠিন।গনপরিবহনেও আজ কোথাও কোন স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না,এখনো অনেক সময় সিটের অধিক যাত্রীও ওঠানো হয়ে থাকে।মানুষ যে এখন করোনা ভীতিকে জয় করেছে তার বড় প্রমাণ পর্যটন কেন্দ্র গুলো।কয়েকদিন আগেও লোকে লোকারণ্য ছিল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, যেন পৃথিবীতে সবকিছু স্বাভাবিক আছে। এখন আর কেউ মাস্ক পরে না, যারা পরে তাদের কেউ কেউ সেই মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকে না,কেউ বা কানের সাথে আটকিয়ে রাখে কেউ আবার রাখে পকেটে।

প্রতিনিয়ত নিউস চ্যানেল ,খবরের কাগজে বলা হচ্ছে বিশ্বের অবস্থা ,বাংলাদেশের অবস্থা, যার কোনটায় সন্তোষজনক নয়।এখনো কোন ভ্যাক্সিন সরকারের হাতে এসে পৌঁছায়নি।

তাই যারা করোনা ভাইরাস বা COVID -19কে খুবই হালকা ভাবে নিয়ে নিজেরা স্বেচ্ছাধীন ভাবে ঘরের বাইরে আসছেন কিন্তু সতর্কতা অবলম্বন করছেন না, তারা নিজের জন্য না হলেও পরিবারের জন্য হলেও সতর্ক থাকুন। পুরো বিশ্ব এই অদৃশ্য শক্তিকে পরাজিত করার চেষ্টা করছে, আমরা আশাবাদী। আমারা বিশ্বাস করি একদিন পৃথিবী সুস্থ হয়ে উঠবে। আবার প্রানচঞ্চল হবে সারা দেশ। তবে তার আগে নিজে সতর্ক থাকুন, নিজে বাচুন, দেশকে বাচাতে সাহায্য করুন।

লেখক:
সানজানা হোসেন অন্তরা
তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

74 Views

আরও পড়ুন

নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

উপজেলা নির্বাচন পরিক্রমা...
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ সাংসদ ইবরাহীমের বিরুদ্ধে

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঢাকায় প্রথম ফার্মা সামিট’২৪ অনুষ্ঠিত

ক্রিকেট ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি : কোনও রান না দিয়েই ৭ উইকেট

চুয়েট বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

এশিয়া এখন জ্বলন্ত উনুন চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ

কাটা হবে ৩ হাজার গাছ, বন বিভাগ বলছে ‘গাছ রক্ষার কোনো সুযোগ নাই’

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি !! 

শেরপুর প্রেসক্লাবের নয়া কমিটি ॥ দেবশীষ- সভাপতি, মেরাজ সা: সম্পাদক

রাজশাহীতে বিএসটিআই’র অভিযানে ৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা।

শেরপুরে চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার আসামী কানন মিয়া গ্রেফতার

আদমদীঘিতে অবৈধ ভাবে মাটি কাটার অপরাধে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা