মোসাব্বির রহমান:
জলাবদ্ধতা যেন ঢাকা শহরের চিরসঙ্গী। গত কয়েক বছর ধরে এই দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েছে কয়েকগুন। জলাবদ্ধতা জনিত সমস্যা যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না ঢাকাবাসীর। শুধু মাত্র ঢাকা নয় বন্দর নগরী চট্রগ্রামেও অল্প বর্ষণে জণগণের সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হয়। এই শহরগুলোতে হালকা বা ভারী বর্ষণের ফলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় এটি স্থায়ী জলাবদ্ধতায় পরিণত হয়েছে। জলাবদ্ধতার ব্যাপারটি এখন আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। এটি এখন মানুষের জন্য চরম বিরক্তি এবং অসহ্য যন্ত্রনাদায়ক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
দেখা যায় একঘন্টার বৃষ্টিপাতে তিন দিন পর্যন্ত থাকে জলাবদ্ধতা। যার কারণে ভোগান্তিতে পরে সাধারণ মানুষ। জলাবদ্ধতার কারণে গাড়ির ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করে রাস্তায় বিকল হওয়া, ময়লা ও পঁচা পানি মাড়িয়ে চলাচল ও অসহ্য জ্যামে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা সহ নানা ধরণের তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় নগরীর লোকজনের।
আবার রাজধানীর বিভিন্ন সরু গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যথাযথ ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি জমে থাকে যার ফলে কয়েক মিনিটের পথ পেরুতে সময় লাগে কয়েক ঘন্টা! ফলাফল, সময়মত গন্তব্যে পৌছাতে পারে না অফিসগামী মানুষ,স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থী সহ সব ধরনের মানুষ।
নগরীতে এ জলাবদ্ধতা দীর্ঘ দিনের সমস্যা। বৃষ্টি হলে তো আছেই আবার রাজধানী ঢাকায় এমনও অনেক জায়গা আছে যেখানে বৃষ্টি না হলেও সারা বছর জলাবদ্ধতা থাকে। রাজধানীর কদমতলী থানার আওতাধীন কোদারবাজার সংলগ্ন রাস্তাটি যার প্রত্যক্ষ উদাহরণ।
এই জলাবদ্ধতা সমস্যার দায় কার?
বিগত কয়েকবছর যাবৎ নগরবাসী প্রত্যক্ষ করেছে এক বিরল কাঁদা ছোড়াছুড়ির ঘটনা। ঢাকা ওয়াসা জলাবদ্ধতার দায়ভার দিতে চায় সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের উপর আবার সিটি কর্পোরেশন দায়ভার দিতে চায় ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের উপর।
আর এভাবেই দায়সারা ভাবেই চলছে আমাদের নগরায়ন।
তারপরও কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় প্রকৃতপক্ষে দায়িত্বটি কার?
এতকিছুর পরও কর্তৃপক্ষের কোন কার্যকরী উপযুক্ত উদ্যোগ নিতে না দেখে হতাশ নগরবাসী। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে অবকাঠামোগত সমস্যা, খাল-জলাশয় ভরাট, অপরিকল্পিত নগরায়ন, সুয়ারেজ লাইনের অব্যবস্থাপনা, নতুন সুয়ারেজ লাইনে নিম্নমানের জিনিসপত্রের ব্যবহার এবং নামমাত্র সিমেন্ট দিয়ে ঢালাইসহ জলাবদ্ধতা তৈরীর অনেক কারণ আছে। নগরবাসীর যত্রযত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলাও যার মধ্যে অন্যতম কারণ।
এই সমস্যা সমাধানে কাঁদা ছোড়াছোড়ি নয় বরং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জলাবদ্ধতা মুক্ত নগর গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করতে হবে। তবেই সুন্দর হবে সমাজ,সুন্দর হবে দেশ। গড়ে উঠবে সোনার বাংলাদেশ।