ইলমে দ্বীন, ইসলামি বই, পাঠাগার ও ইলমের গুরুত্ব তাৎপর্য এগুলো আমাদের মুসলিম ‘পাঙাল’ সমাজের কাছে মৌলিকভাবে প্রচার প্রসার দরকার। অনেকটা পরিতাপের বিষয় যে, দেশের মেধাবী ও যোগ্য আলিম ও ত্বলাবা ইলমরা যে বইগুলো আমাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন তার ‘অনেকাংশ’ মুহতারাম মরহুম ‘আব্দুস সুবহান [রহিমাহুল্লাহ] ইসলামি গণ ‘পাঠাগারে’ পড়ে আছে দিনের পর দিন। বই তো বের হচ্ছে তো হচ্ছেই গতকাল কিংবা আজও বই বের হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো। এগুলো হয়তো দু’দিন পরে ‘পাঠাগারে’ শোভা পাবে। কিন্তু পাঠক তো নেই।
মুসলিম পাঙালদের কাছে এসব বই এবং পাঠাগারের বইগুলো ব্যাপক প্রচার-প্রসার দরকার মনে করি। আমি গত দু’বার গিয়েছিলাম মরহুম [রহিমাহুল্লার] পাঠাগারে। সংগ্রহশালা গুলো দেখে মন ভরে গিয়েছিল। মরহুম [রহিমাহুল্লাহর] ছেলে ডা. কাইয়ুম উদ্দিন চাচা [হাফিযাহুল্লাহ]-উনার ইলমে দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম।
.
জেনারেল শিক্ষিতদের মাঝে একটা সুক্ষ্মভূল চিন্তা আছে যা অধিকাংশের বেশী বলতে হবে। সেটি হলো, আমরা এখনো মনেকরি আলিমরা তাদের বইতে শুধু কিচ্ছা-কাহিনী, দু’তিনটা ফজিলতের বায়ান, আখিরাতের কিছু লেখা ছাড়া বইতে আর কিছু পাওয়া যায় না। অথচ খোঁজ নিলে দেখা যাবে তার ঠিক উল্টো। বরং, সালাফু সালেহিনদের রেখে যাওয়া [পূর্ববর্তী নেককার আলিম] প্রাচীন কিতাব বা খালাফদের [পরবর্তী নেককার আলিম] অনেক কিতাবগুলো আলিম ও ত্বলাবা ইলমদের দ্বারা অনুবাদ হচ্ছে। এবং এই ইলমদ্বীনের ভান্ডারগুলো পরবর্তী প্রজন্মদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন কষ্ঠ ত্যাগ-তিতিক্ষা উপেক্ষা করে। আকিদা-ইতিহাস-ফিকহ-ফিতান-ইসলামি শরিয়াহ- সবক্ষেত্রে কাজ হচ্ছে। এছাড়া সমকালীন পাশ্চাত্য ফিতনা ‘জাহিলিয়াত, সেক্যুলারিজম, মডারেটিজম, লিবারেলিজম, হিউম্যানিজম, ডেমোক্রেটিস, ফ্রি-মিক্সিং, যৌনতা, নারীবাদ নিয়েও কাজ হচ্ছে। আলিমদের পাশাপাশি ‘জেনারেল’ শিক্ষিত ‘দ্বীনদাররাও’ ভূমিকা পালন করছে। যে টপিক গুলো বললাম সেই টপিকের বইগুলো ‘মরহুম [রহিমাহুল্লাহর] পাঠাগারে আছে কিন্তু অনুশোচনার বিষয় হচ্ছে এগুলোর প্রচার-প্রসার নেই। মুহতারাম ডা.কাইয়ুম উদ্দিন [হাফিযাহুল্লাহ] চাচার সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছিলাম যে তিনি কতোটুকু হতাশ। পরে আমি ও আমার বন্ধু ব্যাক্ত করেছিলাম প্রচার-প্রসারে সহযোগিতা করার। তিনি খুশি হয়েছিলেন।
মুসলিম পাঙালদের বিশেষ করে যুবক-যুবতিদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামি ইলমের[জ্ঞান] সাথে জুড়ে থাকাটা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের ঈমানের ভিত দুর্বল করে দেয়। এখানে ইসলাম ধর্মকে দু-চারটা ধর্মের মত দেখানো হয়। রবের দেওয়া বিধান এবং হালাম-হারামের ব্যাপারে আমাদের মাঝে শিথিলতা চলে আসে। জাহিলিয়াতকে আমাদের কাছে নরমালাইজেশন করে করে দেখানো হয়। সংশয়ের দানা বাধতে শুরু করে অজান্তেই। কেন? কারণ কি? কারণ হলো, ‘সে’ তো ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থার মূলনীতি ছাড়াই ১২-১৫ টি বসন্ত পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থার অধীনে পার করে দেওয়া এক আধুনিক সুটেড-বুটেড শিক্ষিত। দ্বীন-দ্বারী তার কাছে নছেত অমূলক লাগবেই। প্রয়োজনে সে ইবাদত করবে না হয় করবে না। ব্যাপারটা তার কাছে ‘আপেক্ষিক’। সংশয় বা শিথিলতা চলে আসাটা তো স্বাভাবিক। অথচ ‘মুসলিম’ শব্দের সাথে এগুলো কোনোভাবেই কাম্য না। আল্লাহ্ﷻ-এর দেওয়া বিধানকে তো আমরা ‘আপেক্ষিক’ বানাতে পারিনা তাই না?
সুতরাং ইলমেদ্বীন শিখতে ও জানতে হবে। আলিম হোন আর নন-আলিম হোন। কারণ, আল্লাহতা’লা আমাদের জন্য ইলমে দ্বীন শেখা ফরজ করে দিয়েছেন। আলিম না হলেও ‘ফরজ আইন’ ইলম শেখা আবশ্যক। মানে যতটুকু শিখলে আমি শরিয়ত মোতাবেক চলতে পারি। হালাল-হারাম ব্যাপারগুলো জানতে পারি। নব্য জাহিলিয়াত সম্পর্কে সতর্ক হতে পারি।
দিনশেষে আমার ঈমানটাই তো বড় তাই না? আর, আমরা তো একদিন আমাদের মালিকের কাছে প্রত্যাবর্তন করবো তাই নয় কী?