——
আফ্রিকান ইউনিয়ন হল আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্গত দেশসমূহ নিয়ে গঠিত একটি বৈশ্বিক সংগঠন। আফ্রিকান ইউনিয়নের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মাহমুদ আলী ইউসুফ। আফ্রিকা ইউনিয়নের প্রধান লক্ষ্য আফ্রিকার দেশসমূহের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা সাধন এবং স্বার্থোদ্ধার করা।১৯৬১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি আফ্রিকান রাষ্ট্রসমূহের অনুরোধে নাগরিকদের দায়িত্ব কর্তব্যগুলোকে পুনরায় সংঙ্গায়িত করেন। আফ্রিকা মহাদেশে বর্তমান ১.৪ বিলিয়ন মানুষ বসবাস করছেন। বর্তমান চলমান সংকটে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এবং বসবাসকারীদের একসাথে কাজ করতে হবে ।
এই মহাদেশীয় সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে বিভেদ এড়ানো এবং সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য। দুই দশক পর সংগঠনটির প্রাতিষ্ঠানিক আকাঙ্খা সন্তুষ্টিজনক।আফ্রিকায় বিগত বছরগুলোতে সামরিক সরকার, ভাড়াটে বিদেশী সৈনিক এবং বিদ্রোহীদের দ্বারা জাতীয় সীমান্তে যুদ্ধ লেগেই থাকতো।যদিও আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলোর নিয়ে আলোচনায় বসা হলে তারা কোন ঐক্যমতে পৌঁছাতে রাজি হয় না। দেশগুলোর মধ্যে জবাবদিহিতার অভাব এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার ব্যাপারে ঢিলেমি ভাব লক্ষ্য করা যায়। ইতোমধ্যে নতুন এবং পুরাতন বৈশ্বিক শক্তিগুলো আফ্রিকার সাথে বন্ধুত্ব এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের আগ্রহ প্রকাশ করছে। শক্তিধর দেশগুলো তাদের ঔপনিবেশিক মনোভাব থেকে বেরিয়ে এসে নতুন চেতনায় আফ্রিকার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে চায়।
আফ্রিকান ইউনিয়ন সংগঠনটি আফ্রিকানদের বেঁচে থাকার প্রশ্নের সাথে সম্পর্কিত।সুদানের সাহেল চরমপন্থীরা আফ্রিকায় বড় ধরনের বিভেদ সৃষ্টি করছে যেটি আফ্রিকান ইউনিয়নের সাহায্যে বন্ধ করা সম্ভব। শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সাহেল চরমপন্থীদের বধ করার ইচ্ছা প্রয়োজন। দাতা রাষ্ট্রগুলো আফ্রিকার কৌশলী প্রতিপক্ষদের গৃহযুদ্ধের আশঙ্খা থেকে আফ্রিকাকে বাঁচাতে চায়।২০২৩ সালে আফ্রিকান ইউনিয়নের জি-২০ তে প্রবেশ একটি প্রতীকী বিজয়। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব কমিয়ে জলবায়ু অর্থায়ন, ঋনমুক্তি এবং মুক্ত বাণিজ্যের জন্য কাজ করতে হবে।
আফ্রিকার জনসংখ্যাতাত্ত্বিক এবং অর্থনৈতিক কক্ষপথ প্রচন্ডভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০৫০ সালে আফ্রিকার জনসংখ্যা হবে পৃথিবীর চার ভাগের এক ভাগ। সবুজ অর্থনীতি এবং শক্তি সম্পদসহ পৃথিবীর তিনভাগের এক ভাগ খনিজ মজুদ আছে আফ্রিকা মহাদেশে।এই সুবিধাগুলো থাকা সত্ত্বেও আফ্রিকা মহাদেশ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং বৈশ্বিক শক্তির দিক থেকে। জলবায়ুঘটিত স্থানান্তর বৃদ্ধির কারণে এবং বিভিন্ন প্রকার দ্বন্দ্বের কারণে ২৩ টি আফ্রিকান রাষ্ট্র ঋনে জর্জরিত হয়েছে। এই মুহূর্তে আফ্রিকান ইউনিয়নকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনার জন্য চাপ প্রয়োগ করা জরুরী নয় বরং আফ্রিকান রাষ্ট্রসমূহের যুদ্ধ,দ্বন্দ্ব এবং চরমপন্থীদের থেকে আফ্রিকাকে নিরাপদ অবস্থানে আনায়ন প্রয়োজন।আফ্রিকান ইউনিয়নের রাষ্ট্রসমূহ খোলাখুলি আলোচনার মাধ্যমে জোরালো পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে এবং মহাদেশের বিশাল সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং বৈদেশিক সাহায্যের মজুদ করে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করতে পারে।
আফ্রিকান ইউনিয়নের আলোচ্যসূচির প্রধান বিষয়বস্তু হতে পারে মহাদেশের নিরাপত্তা এবং যুদ্ধ ও দ্বন্দ্বের রোধ। নিরাপত্তা ঝুঁকির জন্য আফ্রিকায় সাম্প্রতিক নীরব বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। স্থানীয় সৈন্যদের বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রমণের দিন আর নেই। তারা অনেকটা নমনীয় ও সহনীয় অবস্থানে আছেন। সাহেল চরমপন্থীরা কঙ্গো বেসিন এবং হর্ণ অব আফ্রিকায় বারবার সন্ত্রাসী আক্রমণ করছে ঐতিহ্যবাহী সেনাতত্ত্ব এবং কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে। পরিশেষে বলা যায় য, আফ্রিকান ইউনিয়নকে পরবর্তনীয় বিশ্বের সাথে খাপ খাওয়াতে হলে সাহেল চরমপন্থীসহ সন্ত্রাসী সংগঠন সমূহের দমন করতে হবে এবং অর্থনৈতিক গৌরব পুনরুদ্ধার করতে হবে খনিজ সম্পদ ও বৈদেশিক সাহায্য দ্বারা।
মো: ওসমান গনি শুভ
সাবেক সমন্বয়ক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম।