—জিয়া হাবিব আহসান, এডভোকেট
মরহুম এডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন স্যার ছিলেন এমন একজন প্রাতঃস্মরণীয় মহাত্না, যাঁর মধ্যে মনীষা ও মঞ্জুষার যুগপৎ সমন্বয় এবং আধ্যাত্মা চেতনার অলৌকিক ও অনির্বচনীয় আলোক দীপ্তি প্রোজ্জ্বল ছিলো। আইন জগতের ‘কিংবদন্তি’, ‘দিকপাল’ এবং ‘আইনের এন সাইক্লিপিডিয়া’ অভিধায় অভিষিক্ত ছিলেন তিনি। ছিলেন এমন একজন অসাধারণ আইনবিদ, আইনশাস্ত্রের প্রতিটি বিষয়েই সম্যক পারদর্শিতা ছিলো । যাঁর বিজ্ঞ বিচারক থেকে শুরু করে, উপস্থিত বিজ্ঞ এডভোকেটগণ, বিচার প্রার্থীরা পর্যন্ত তাঁর যুক্তির্তক মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতেন। মানবসেবার মহান ব্রত নিয়েই এই সিদ্ধ পুরুষের আইন পেশায় অভ্যুদয়।
ব্যক্তিগত জীবন ও আচারে তিনি যেমন ছিলেন সত্যনিষ্ঠ, সাত্তিক, আবার পেশাগত জগতেও মানবপ্রেমী এবং দুঃস্থ মজলুমদের অকৃত্রিম সুহৃদ। তিনি শুধু আইনবিদ ছিলেন না, ছিলেন যোগ্য ও বিচক্ষণ আইনবিদ তৈরির কারখানা । তাঁর যোগ্য জুনিয়ারদের মধ্যে বিখ্যাত আইনবিদ মরহুম এডভোকেট শামসুল হুদা (এম.পি ও সাবেক জিলা পরিষদ চেয়ারম্যান), মরহুম এম এ মান্নান (সাবেক সম্পাদক, চট্টগ্রাম বার এসোসিয়েশন), মরহুম এডভোকেট এ এম আনোয়ারুল কবির (সাবেক সভাপতি বার এসোসিয়েশন, সাবেক সদস্য বার কাউন্সিল ও প্রিন্সিপ্যাল, চট্টগ্রাম বঙ্গবন্ধু ল’ কলেজ), ব্যারিস্টার কামালুল আলম (সিনিয়র এডভোকেট, সুপ্রীম কোর্ট অব বাংলাদেশ), জাস্টিস একেএম আবদুল হাকিম, মরহুম এডভোকেট কাজী গোলাম সরোয়ার, এডভোকেট মোঃ আবুল কাসেম, এডভোকেট নিশাত সুলতানা, এডভোকেট শাহজাদা মাহমুদ চৌধুরী, মরহুমা ফেরদৌস আরা কবির, এডভোকেট শর্মা, এডভোকেট ফরিদুল মওলা, এডভোকেট আহমদ উল্লাহ্ চৌধুরী, মরহুম এডভোকেট বশিরুদ্দিন জিন্দেগির, নাজমা নিগার (বার এট ল) প্রমুখ।
এডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন ১৯২০ সালের ১ জানুয়ারি সন্দ্বীপের সন্তোষপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতা-জোবেদা খাতুন এবং পিতা-মুন্সী মুনির উদ্দিন আহমেদ। তিনি ছিলেন ৫ ভাইবোনের মধ্যে সকলের ছোট। মা তাকে আদর করে ডাকতেন ‘বাবু’। তার পিতা ন্যায়বান মানুষ হিসেবে বৃটিশ সরকার কর্তৃক টাইটেলপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তখন থেকেই তাঁর নামের সাথে যোগ হয় মুন্সী। এছাড়া বৃটিশ সরকার তাঁকে একটি সম্মানসূচক আংটি প্রদান করেছিলো। এডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন পিতা মৃত্যুর পূর্বে বলে গেছেন, তাঁর পরিবারের সবচেয়ে যোগ্য সন্তানটি এই আংটি পরার মর্যাদা অর্জন করবে। মুন্সী মুনির উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর পর, তাঁর বড় ছেলে শামসুদ্দিন আহমদ এবং পরবর্তীতে মোজাম্মেল হোসেন ঐ আংটি লাভ করেন।
মাত্র আড়াই বছর বয়সে তাঁর পিতা মারা যান। পিতার মৃত্যুর পর বড় ভাই পিতৃ¯স্নেহে তাঁকে মানুষ করতে থাকেন। এই বড় ভাইকে সারাজীবন তিনি বাবার মতোই শ্রদ্ধা করে গেছেন; তার যাবতীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিতেন। মোজাম্মেল হোসেনের মা-বাবা ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ। আর সে প্রভাব ছিলো পুরো পরিবার এবং সন্তানদের ওপর। বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন নম্র স্বভাবের এবং স্বল্পভাষী। দুঃখী মানুষকে সাহায্য করার জন্য মা এবং বড় ভাই বোনদের কাছে ছুটে যেতেন। এই মানবহিতৈষণা তাঁর উত্তর জীবন ব্যাপী লালন করেছেন। তিনি মসজিদে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকতেন এবং মায়ের পাশেই নামায পড়তেন । তিনি গান-গজল, হামদ-নাত পছন্দ করতেন ও খেলাধুলায়ও পারদর্শী ছিলেন ।
গ্রামের সম্মুখে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনান্তে তিনি সন্দ্বীপের কারগিল হাই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে প্রবেশিক্ষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অতঃপর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য গেলেন। কিন্তু এখানে একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। অফিস ক্লার্ক বাম হাতে ফরম দিয়েছিলেন বিধায় তিনি রাগে দুঃখে অপমানে ফরম ছিঁড়ে ফেলে, চলে গেলেন ফেনী কলেজে এবং মানবিক শাখায় ভর্তি হলেন। যদিও তার ইচ্ছে ছিলো চিকিৎসক হওয়ার, কিন্তু অনভিপ্রেত ঘটনার কারণে, শেষ পর্যন্ত তিনি আইনবিদ হওয়ারই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অতঃপর ঢাকা কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন এবং গণিত বিষয়ে এম.এ পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে গণিতশাস্ত্রে পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। সুস্থ হওয়ার পর চলে গেলেন কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। দেশ বিভাগের পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে তিনি চলে এলেন ঢাকায়। ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরীক্ষার বাকি তখন মাত্র আর ২১ দিন। কিন্তু অপরিমেয় মেধার অধিকারী মোজাম্মেল হোসেন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
অতঃপর জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করলেন আইন পেশা। কর্মক্ষেত্র নির্বাচন করলেন চট্টগ্রাম। সকলের প্রত্যাশা ছিলো তিনি ঢাকায় প্র্যাকটিশ করবেন । কেননা শিক্ষাজীবনে তাঁর যে কৃতিত্ব, জাতীয় ভিত্তিক বৃহত্তর পরিসরেই তিনি আইনবিদ হিসেবে নিজের অবস্থান করে নেবেন, তাই স্বতঃসিদ্ধ এবং সকলের জল্পনা ও প্রত্যাশা ছিলো। কিন্তু চট্টগ্রাম এবং সন্দ্বীপের দুঃস্থ মানুষের সেবায় ব্রতই ছিলো তাঁর মনোবাঞ্চা। কেননা ছোটবেলা থেকেই ছিলেন তিনি জন হিতৈষী। সন্দ্বীপের অভাবী ছাত্রদের শিক্ষা ব্যয় সম্পাদনে সহযোগিতার জন্যে কলকাতায় চাকরি করতেন। আর তার এই মানবসেবা আজীবন অক্ষুন্ন ছিলো। দান করতেন অকাতরে এবং তা সকলের অজ্ঞাতসারে। আদালতের কাজ সমাপনান্তে জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে অসহায় রোগীদের সেবা করতেন। তিনি অর্থের পেছনে দৌড়াননি, অর্থই তাঁর পেছনে দৌড়েছিলো । আর তিনি ছিলেন সততার মূর্ত প্রতীক, লোভ লালসাহীন এক মাধুর্যপূর্ণ চরিত্রের অধিকারী । তিনি বললেন – সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা ও চলার জন্য অর্থ দরকার, অঢেল ধন সম্পদ, বিরাট দালান কোঠা, ব্যাংক ব্যালেন্স এগুলোর জন্য মরিয়া হয়ে মনুষ্যত্ব বিসর্জন দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয় ।
ছিপছিপে এই সত্যবাদী মানুষটি আইনকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার পূর্বে সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির প্রস্তাব বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখান করেছিলেন।
১৯৪৯ সালে এডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম জজ আদালতে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালের তিনি ৩৪ বছর বয়সে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে সন্দ্বীপ থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং স্মর্তব্য, তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড়ো কৃতিত্ব সন্দ্বীপকে চট্টগ্রাম জেলার সঙ্গে সংযুক্তি। ১৮২১ সালে নোয়াখালী জেলা সৃষ্টি হলে, সন্দ্বীপকে চট্টগ্রাম থেকে কেটে নিয়ে নেয়াখালীর সাথে জুড়ে দেওয়া হয়। তখন থেকে সন্দ্বীপের গণমানুষ এ বিচ্ছিন্নকরণ মেনে নিতে পারেনি।
আইয়ুব খানের মার্শাল ‘ল’ জারির পর তিনি রাজনীতি ছেড়ে পুনরায় আইন পেশায় ফিরে আসেন এবং আমৃত্যু এই বৃত্তিতে নিজেকে গভীরভাবে নিবেদন করেন। এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমদের অভিমত প্রণিধানযোগ্য। তিনি গর্বের সঙ্গে বলতেন, “আইনের বিশ্লেষক বলুন আর গবেষক বলুক এমন কেউ যদি থেকে থাকে, তাহলে তিনি এডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন। আইনের প্রতিটি অঙ্গনে বিচরণ করার দক্ষতা, প্রজ্ঞা যদি কারো থাকে, তিনিও মোজম্মেল হোসেন। এককথায় তিনি হলেন আইনে এনসাইক্লোপিডিয়া । আইনের অসংখ্য ধারা উপধারা থাকে। কোন মামলায় কোন ধারা প্রযোজ্য তিনি সামান্য শুনেই বলে দিতে পারতেন’। কিন্তু এডভোকেট মোজাম্মেল হোসেনের জীবন দর্শন ছিলো ব্যতিক্রম তিনি আইন পেশাকে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে হিসেবে ব্যবহার করেননি। মানবকল্যাণই ছিলো তাঁর জীবনের মৌলিক অভীপ্সা। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্র বিন্দু ছিলেন । তিনি সামর্থ ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্থ ছিলেন ।
দেশাত্মবোধ ও দেশপ্রেমে সদা জাগ্রত এই মহাপ্রাণ ছিলেন মুক্তবুদ্ধি আন্দোলনের প্রোজ্জ্বল প্রতীক। বুদ্ধিবৃত্তির চর্চায় ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। রাত জেগে পড়াশোনা করতেন। ছিলেন স্বল্পাহারী এবং মিতবাক ও মিষ্টভাষী । দীর্ঘক্ষণ ধীরে ধীরে জেরা যুক্তিতর্ক করলেও কেউ বিরক্ত হতেন না । তিনি ছিলেন জ্ঞানের সাগর ও মহীরুহ ।
এডভোকেট মোজাম্মেল হোসেনের আর এক অন্যন্য কৃতিত্ব ছিলো চট্টগ্রামে হাইকোর্টের বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা। চট্টগ্রাম জেলা বার সমিতির সভাপতি হিসেবে তিনি এ ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি জুনিয়রদের প্রতি ছিলেন সদয় । নবীন আইনবিদের জন্য ছিলেন বন্ধু দার্শনিক এবং গাইড । ধর্মের প্রতি অগাধ আস্থা ও কর্মের প্রতি অবিচল মানুষটিকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার । ধীরে সুস্থে এমন সুন্দর বিনয়ী সাবমিশন শুনে ও দেখে থাকার মতো ছিল । তাঁর চেম্বার ছিল আইন-শিক্ষা ও গভীর গবেষণার কেন্দ্র । মামলায় পুরাপুরি প্রস্তুতি না নিয়ে তিনি কখনো শুনানী করতেন না । অন্য এডভোকেট চিঠি (এনওসি) লিখে না দিলে বিচারাধীন মামলার মাঝপথে কারো ব্রীফ তিনি নিতেন না ।
তিনি চট্টগ্রামে একটি স্থায়ী হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন । এরশাদ সরকারের আমলে চট্টগ্রামে হাইকোর্ট ব্যাঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি ঐ হাইকোর্ট বেঞ্চ বার সমিতির সভাপতি ছিলেন এবং ঢাকার বাইরে অবস্থিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সমূহের এডভোকেট বার এসোসিয়েশনের যুগ্ন আহ্বায়ক ছিলেন । মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও তিনি মরহুম এডভোকেট নুরুল হুদা স্যারকে বলেছিলেন, ‘১০০ ধারা বহাল আছে, তা দ্বারা হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ আনা সম্ভব, তোমরা এর জন্যে আন্দোলন চালিয়ে যাও ‘
মৃত্যুর পূর্বে তাঁর সংগৃহীত ব্যক্তিগত আইনের মূল্যবান বইগুলো দান করে গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম জেলা বার সমিতিকে। এছাড়া তিনি অসহায়দের মুক্তহস্তে দান করতেন অকাতরে।
জন্ম থেকেই তিনি পেয়েছেন পারিবারিক সুশৃঙ্খল এক আধ্যাত্মিক পরিবেশ। বাবা ছিলেন মাইজভান্ডারী দরবার শরীফের খলিফা । মা-ও ছিলেন আধ্যাত্মিক ধারার উচ্চপর্যায়ে অধিষ্ঠিতা। এই প্রেক্ষিতে উত্তর জীবনে পার্থিব সকল কর্মকান্ডে তিনি ইসলাম ধর্মের বিধি বিধান পালনে ছিলেন পরম নিষ্ঠ। তার প্রতিটি পদক্ষেপই ছিলো নৈতিকতা ও শরীয়তের আলোকে। সৎ চিন্তা, সৎকর্ম, সৎ মানসিকতা, সৎ সেবা অর্থাৎ এক পুণ্য যাপন ছিলো তাঁর ইহজীবন। ১৯৬৯ সাল থেকে তিনি বোয়ালখালী আহল্লা দরবার শরীফে যাওয়া শুরু করেন এবং আমৃত্যু তা অব্যাহত রাখেন। দরবার শরীফের সাথে যারা সম্পৃক্ত তারা তাঁকে একজন সুফী কামেল মানুষ হিসেবে জানতেন ও শ্রদ্ধা করতেন। দরবারের লোকজন মনে করতেন অধ্যাত্মিক সাধনায় তিনি অনেক উচ্চমার্গে পৌঁছে গেছেন এবং তাঁর পীর সাহেবের কাছ থেকে তিনি খেলাফত প্রাপ্ত হয়েছেন। এছাড়া তাঁর কথাবার্তা, আচার-আচরণ, ভবিষ্যদ্বাণী ইত্যাদির নিরিখে অনেক দৈব অলৌকিকত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাস্তব জীবনে তিনি কথা ও কাজে মিল রাখার চেষ্টা করতেন । শুনা যায়,তার পীর সাহেব হজরত মাওলানা আবুল মোকাররম মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম ছাহেব হতে খেলাফল প্রদান করতে চাইলে, তিনি সে খেলাফত সবিনয়ে তা তদীয় পীর ছাহেব কেবলার জেষ্ঠ পুত্র মাওলানা সেহাব উদ্দিন খালেদ ছাহেব কে অরপন করার জন্য অনুরোধ করেন। আহল্লা দরবারের ফয়েজ প্রাপ্ত এই আধ্যাত্মিক সাধকের কথা সর্বজন বিদিত।
১৯৪৬ সালে তিনি হাতিয়া’র রেজিয়া বেগম এর সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তিনি ৮ পুত্র কন্যার গর্বিত জনক। তার উচ্চ প্রতিষ্ঠিত সুশিক্ষিত সন্তান-সন্তুতি হচ্ছেন- রোকসানা বেগম, বোরহানা কবির, মোহাম্মদ সাইফুল (অকালপ্রয়াত), মোহাম্মদ আলী ফারুক (শাহীন), মোহাম্মদ আলী শাহিন, মোহাম্মদ আলী হাসিন, মোহাম্মদ আলী রাহিন, জোবেদা বেগম হাসনা ও মুনিরা হোসনা মোরিনা।
এই ক্ষণজন্মা মহীরুহ ছিলেন আমার মরহুম পিতা বরেণ্য এডভোকেট আবু মোহাম্মদ য়্যাহ্য়্যা পরম সুহৃদ । আব্বা ছিলেন তাঁর স্নেহধন্য একজন আইনবিদ । আইনবিদ পরিবারের সন্তান হিসেবে আমিও তাঁর দোয়া এবং সান্নিধ্য পেয়েছি । যখনি চেম্বারে যেতাম বই, নোট, দলিল পত্রের মধ্যে তাঁকে ডুবে থাকতে দেখতাম । তাঁর ড্রাফটিং যেমন ছিল চমৎকার আরগুমেন্টও ছিল তেমন চমৎকার ।এ দুটো গুণ সকলের একসাথে থাকে না ।
২০০৩ সালের ২৭ জুলাই আইন জগতের মহীরুহ এডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন ৮৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যূতে ২০০৩ সালের ২৪ আগস্ট রবিবার চট্টগ্রামের মুসলিম ইনিষ্টিউট হলে তাঁর স্মরণে এক নাগরিক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয় । চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তদানিন্তন মেয়র আলহাজ্ব মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল, তদানিন্তন বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী (এম পি), ছিলেন এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ এফ হাসান আরিফ, সুপ্রীম কোর্ট বার সভাপতি ব্যারিস্টার রুকন উদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী, প্রাক্তন এটর্নি জেনারেল ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিকুল হক প্রমুখ । তাঁর মৃত্যু আইনের জগতে এক গভীর শুন্যতা সৃষ্টি করলেও তাঁর সৎকর্ম ও জুনিয়রদের মাঝে তিনি আজো বেঁচে আছেন এবং অনাদীকাল বেঁচে থাকবেন । মহান আল্লাহ্ যেনো এই অসাধারণ আইনেবেত্তা, পবিত্র পুণ্যত্মাকে বেহশতে নসিব করেন।
লেখক – আইনবিদ, কলামিস্ট, মানবাধিকার ও সুশাসন কর্মী ।