—জিয়া হাবীব আহসান এডভোকেট
মেঘে ঢাকা এক সূর্যের নাম
ব্যারিস্টার ড.নুরুল ইসলাম
মহান আল্লাহতায়ালার দান
বীর চট্টলার কৃতি সন্তান।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানা ও উপজেলার আহল্লা গাজীর পাড়া গ্রামের অতি সাধারণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন বরেণ্য আইনবিদ ব্যারিস্টার নুরুল ইসলাম পিএইচডি। তিনি মরহুম হাজী চুন্নু মিয়ার একমাত্র পুত্র সন্তান । তিনি নিজের মেধা শ্রম ও সাধনায় নটরডেম কলেজে অধ্যয়ন ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন শেষে ঐ কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। পরবর্তীতে বিলাতের লিংকন্স ইন থেকে বার এট ল ডিগ্রী অর্জনে লন্ডন বারে প্র্যাকটিস শুরু করেন। সে-সময় হাতে গোনা কয়েকজন বাংগালী ব্যারিস্টার এর মধ্যে তিনিও একজন সৌভাগ্যবান বীর চট্টলার কৃতি সন্তান। শিক্ষা পাগল মানুষটি কঠোর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে জীবনের সার্থকতা লাভ করেন।তিনি বিলাতে আইনপেশায় সাফল্য লাভ করলেও দেশের কথা এক মূহুর্তের জন্যেও ভুলতে পারেননি। তাই মৃত্যুর পর তাঁকে দেশে এনে দাফন করতে পরিবারকে নির্দেশ দিয়ে যান। তাঁর পাড়া প্রতিবেশী বন্ধু বান্ধব থেকে জানা যায়,
ছাত্র জীবনে তিনি অত্যন্ত মেধাবী সজ্জন বিনয়ী চরিত্রবান ধার্মিক ও পরোপকারী ছিলেন।
তিনি ৩- অক্টোবর ১৯৯৫ ইং মংগলবার মাত্র ৫৫ বৎসর বয়সে লন্ডনের একটি হাসপাতালে ভোরবেলা মৃত্যু বরন করেন। তাঁর অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে বাংলাদেশে স্বীয় মাতৃভূমি বোয়ালখালীর নিজ গ্রামে ৯ অক্টোবর “৯৫ ইং সোমবার বাদ আসর স্থানীয় জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি এক স্ত্রী মিসেস আজিজুন ইসলাম , এক পুত্র ডেন্টাল সার্জেন ডা শরীফ , এক কণ্যা ফেরদৌসী ইসলাম ব্যাংকার ও অসংখ্য আত্মীয় স্বজন শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে যান।তিনি আখাউড়ার বিখ্যাত খাদেম পরিবার থেকে বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রী সন্তানরা লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। মাতৃভূমির প্রতি মরহুম ড. নুরুল ইসলাম বার-এট- ল এর আন্তরিক ভালোবাসা প্রণিধানযোগ্য।
বোয়ালখালী সরোয়াতলী হাই স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক বাবু ধীরেন্দ্র স্যারের উদ্যোগে একবার তাঁকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। তিনি নিয়মিত দেশে আসতেন এবং শিক্ষার মশাল জ্বালাতে সকলকে অনুপ্রাণিত করতেন। আল্লাহতাআলা মেহেরবানি করে তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের চিরস্থায়ী বাসিন্দা করে দিন, আমিন।এই ক্ষণজন্মা কৃতি সন্তানদের সম্মানিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মহান আললাহ উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মহীমা দান করুন। আমীন।
সংক্ষিপ্ত বংশ পরিচয় ঃ
মোহছেন আলী ছিলেন ব্যারিস্টার নুরুল ইসলাম এর দাদা। মোহসেন আলীর ৪ ছেলে -যথাক্রমে ১) গুন্নু মিয়া,২) হাজী চুন্নু মিয়া ৩) বদন মিয়া, ৪) হাজী আলী আহমদ প্রঃ খুইল্লা মিয়া। ব্যারিস্টার ইসলামের বাবা হাজী চুন্নু মিয়ার চার সন্তান ঃ- ১. ব্যারিস্টার নূরুল ইসলাম ২. আবিজা খাতুন ৩. ফয়জুন খাতুন ৪. ময়জুন খাতুন । মোহছেন আলীর অপর পুত্র বদন মিয়ার ১.মুক্তিযুদ্ধের বিশিশ্ট সংগঠক, বিমান বাহিনীর সাবেক কর্পোরাল, পরবর্তীতে সাব এসিস্ট্যান্ট ইন্জিনিয়ার (টি এন্ড টি) মোঃ নূরুছফা ২. হাজী আসররছ্ছফা ৩. মোঃ সৈয়দ ছফা ( টি এন্ড টি) ৪. আনোয়ারোচ্ছফা, ৫) আম্বিয়া খাতুন ৭) হাবিয়া খাতুন।
গ্রাম আহল্লা গাজীর পাড়া, পোস্ট – সরোয়া তলী, থানা- বোয়ালখালী, জেলা – চট্টগ্রাম । ব্যারিস্টার সাহেব পড়ালেখা চট্টগ্রামে শেষ করে ঢাকা নটরডেম কলেজে লেখাপড়া করেন এবং ঐ কলেজে শিক্ষকতা করেন । তিনি পড়ালেখায় বেশি ভালো ছিলেন তাই সবাই তাঁকে ব্যারিস্টারি পড়ানোর জন্য বিলাতে /লন্ডনে পাঠান । তখন সবাই তাঁকে উৎসাহিত করেন। পরিবার এবং বিশেষ করে তাঁর চাচাতো ভাই বিশিষ্ট সমাজ সেবক ইঞ্জিনিয়ার নুরুসাফা ও হাজী আমেনা বেগম এর অবদান সবচাইতে বেশি।নুরুছফা সাহেব তখন বিমানবাহিনীতে অফিসার কর্পোরাল হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ঢাকায় তাঁদের বাসায় থেকে তিনি লেখা পড়া করতেন । নুরুচ্ছফার বড় ছেলে বিশিস্ট সাংস্কৃতিক কর্মী মোহাম্মদ নজরুল হোসেন শুকুরিয়া বলেন, যখন তিনি ব্যারিস্টার হওয়ার পরে লন্ডনে প্র্যাকটিস শুরু করেন ,চাচা ব্যারিস্টার নুরুল ইসলাম এক সময় দেশের বাড়িতে আসেন। তখন দেখেছি আমার আব্বার সাথে ইংলিশে দুজন বাক যুদ্ধ শুরু করেন । কারণ আব্বা চাহেন তিনি এখানে এসে ব্যারিস্টারী ও চেম্বার করলে আমাদের সুনাম-পরিচিতি হবে । তখন সবাই দেখবেন আমাদের বংশে একজন আল্লাহর রহমতে ব্যারিস্টার আছেন। কিন্তু তিনি দেশে আসার সুযোগ পাননি। মাত্র ৫৫ বছর বয়সে চলে যান পরপারে। তাঁর উচ্চ শিক্ষার পেছনে ভগ্নীপতি সোবাহান সওদাগরেরও অবদান আছে, তাকে মানুষের মতো মানুষ হতে।তিনি লন্ডন থেকে এসে একসময় বিয়ে করেন। চট্টগ্রাম হতে বিয়ে করার জন্য অনেকে বলেছিলেন কিন্তু তিনি অবশেষে আখাউড়া কুমিল্লা হতে বিয়ে করেন বিখ্যাত খাদেম পরিবার হতে, বউকে লন্ডনে নিয়ে যান । সেখানে এক ছেলে এক মেয়ে হয় । মেয়ে ব্যাংকার, ছেলে ডাক্তার শরীফ তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসরত আছেন । চাচা পরিবারকে ওসিয়ত করে ছিলেন যে, আমার মৃত্যু হলে দেশে নিয়ে যাবে। কথামতো চাচার মৃত্যু হওয়ার পর একটা সুন্দর পেটিতে করে তাঁকে নিয়ে আসা হয়। তাঁর ছেলে কবর দেখে আমার ভাইমরহুম ডাক্তার আক্তার কে বলেন, ক্যান আই ইমাজিন, ইংলিশে ডাক্তারের সাথে কথা বলেন,আর বলন, আমার আব্বা কিভাবে এখানে থাকবে । চাচী আম্মা ও খুব ভালো মহিলা ছিলেন। আমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতেন । আমাদের কবরস্থান পালকিলা পুকুরে । খবর পেয়ে তখনকার এমপি সিরাজুল ইসলাম সাহেব এসে বললেন, এখানেএকজন ব্যারিস্টার আছেন আমরা তো জানি না । এক সময় আমাদের পিসি সেন সরোয়ারতলী স্কুলে একজন চাচার বন্ধু বীরেন্দ্র বাবু স্যার সেই ব্যারিস্টারকে স্কুলে একটি গণসংবর্ধনা দিয়েছিলেন
।গ্রামের নামঃ আহল্লা গাজীর পাড়া, পোস্ট – সরোয়া তলী, থানা- বোয়ালখালী, জেলা – চট্টগ্রাম । ব্যারিস্টার নুরুল ইসলাম পড়ালেখা চট্টগ্রামে শেষ করে ঢাকা নটরডেম কলেজে লেখাপড়া করেন এবং ঐ কলেজে শিক্ষকতা করেন । তিনি পড়ালেখায় বেশি ভালো ছিলেন তাই সবাই ব্যারিস্টারি পড়ানোর জন্য বিলাতে/ লন্ডনে পাঠান । তখন বিলাত যেতে উৎসাহিত ও সহযোগিতা করেন । বিশেষ করে তাঁর চাচাতো ভাই মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার নুরুসাফা ও তৎ স্ত্রী মরহুমা হাজী আমেনা বেগম এর অবদান এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি । নুরুছফা তখন এয়ার ফোর্স এ ছিলেন বিধায় সে সুবাদে তাঁর বাসায় থেকে লেখা পড়া করতেন । মিসেস নুরুছফাও তার উচ্চ শিক্ষায় নানাভাবে উৎসাহ ও প্রেরনা দেন। তিনি ব্যারিস্টার হওয়ার পরে লন্ডনে প্র্যাকটিস শুরু করেন । এক সময় বাড়িতে আসলে তখন তার চাচা নূরছফার তাঁকে এখানে দেশে এসে ব্যারিস্টারী ও চেম্বার করার জন্য বলেন। কিন্তু সে সূযোগ তাঁর হয়ে উঠেনি। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি লন্ডনে প্র্যাকটিস জমে উঠে। তার লেখাপড়ার জন্যে তাঁর ভগ্নিপতি সোবাহান সওদাগরের অবদানও প্রচুর । জনাব ইসলাম লন্ডন থেকে এসে এক সময় বিয়ে করেন। আখাউড়া কুমিল্লা হতে বিয়ে করেন খাদেম পরিবার হতে,তার পর স্ত্রীকে লন্ডনে নিয়ে যান । সেখানে এক ছেলে এক মেয়ের জন্ম হয় । মেয়ে ব্যাংকার ও ছেলে ডাক্তার শরীফ। তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসরত করছেন । তিনি পরিবারকে ওসিয়ত করে ছিলেন যে তাঁর মৃত্যু হলে দেশে নিয়ে যাবে। কথা মতো তাঁর মৃত্যুর পর একটা সুন্দর বক্স/ পেটিতে করে তাঁর কফিন নিয়ে আসা হয় । ছেলে বাবার কবর দেখে বলেন তাঁর চাচাতো ভাই ডাক্তার আক্তার কে বলেন, ক্যান আই ইমাজিন ইংলিশে বলে আমার আব্বা কিভাবে এখানে থাকবে । Shukria Nazrul বলেন,আমার চাচী আম্মা মিসেস ইসলামও খুব ভালো ছিলন। আমাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করতেন। আমাদের কবরস্থান পালকিলা পুকুরে । খবর পেয়ে তখনকার এমপি সিরাজুল ইসলাম সাহেব এসে বলল্লেন এখানে একজন ব্যারিস্টার আছে আমরা তা তো জানি না । এক সময় বোয়ালখালী পিসি সেন সরোয়ারতলী স্কুলে তাঁর একজন বাল্য বন্ধু বীরেন্দ্র বাবু স্যার সেই ব্যারিস্টারকে স্কুলে একটি সংবর্ধনা দিয়েছিলেন । তাঁর স্ত্রী পুত্র কণ্যাদের সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেল না।
মেঘে ঢাকা এ প্রতিভাধর মানুষটিকে আজ আমরা ভুলতে বসেছি। অথচ একজন সাধারণ পরিবার থেকে নিজের প্রচেষ্টায় উঠে আসা মানুষটি হতে পারতো তরুন প্রজন্মের কাছে চেতনার বাতিঘর।
লেখক :
আইনজীবী,লেখক, গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী।।
কৃতজ্ঞতা /তথ্য সূত্র ঃ Shukria Nazrul