ঢাকাসোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

ভয়াল ২৯ এপ্রিল ৯১ : যে স্মৃতি আজো কাঁদায়!!

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
২৯ এপ্রিল ২০২৩, ৫:৩৮ অপরাহ্ণ

Link Copied!

————————-

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল দক্ষিন অঞ্চলের মানুষের জন্য এক দুঃসহ বেদনাবিদুর দিন। এ দিন অনেকেই হারিয়েছে তার প্রিয়জনদের।

প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল আসলে সেই ভয়ংকর রাতের কথা মনে করে ভীত সন্ত্রস্ত ও স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর হয়ে পড়ে অনেকে।

আজো সে রাতের কথা মনে পড়লে দুঃসহ রাতের ভয়াল চিত্রগুলু শক্তভাবে নাড়া দিয়ে যায়।

♦১৯৯১ সাল, তখন ৩য় শ্রেনীর ছাত্র। সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর আকাশের ঘুমোড় অবস্থা দেখে বেশি কিছু বুঝার বয়স না হলেও এটুকু বুঝতে পারলাম আজ প্রকৃতি মানব জাতির খুব বেশি অভিমান করেছে। ফলে ধরে নিলাম আজ জাতির ভাগ্যে বড় ক্ষতিকর কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।

স্কুল থেকে ফিরেই আর দশজনের মত রেডিও’র সংবাদ শুনে নিশ্চিত হলাম ভয়ংকর হ্যারিকেন নামক ঘুর্ণিঝড়ের দুঃসংবাদ।

বিকেল গড়াতেই বাতাসের গতি বাড়তে থাকে,
আমি যতটুকু বুঝেছি সেটা থেকে টিনের হ্যান্ড মাইক নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় আবহাওয়ার সংবাদ প্রচার, সিগনাল এর ভয়াবহতা এবং লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য প্রচার করতে থাকি।

তখনো জানতাম না এই ঘূর্ণিঝড় এত ভয়ংকর দানব আকারে আমাদের উপর তেড়ে আসছে।

সন্ধ্যা হতেই বাতাসের গতিবেগ সীমাতিরিক্ত হয়ে গেল।
আস্তে আস্তে রাস্তায় জোয়ারের পানি দেখা যাচ্ছে।
তখন আমার আব্বা (মরহুম) আমাদের সবাইকে নিয়ে উচু জায়গায় চলে যাওয়ার জন্য রওয়ানা দিছেন।
প্রথমে গেলাম পাশে জেঠার উচু ভিটে বাড়িতে।
মাঠির বাড়ি হওয়াতে ভয়ে আবার সবাই গেলাম স্থানীয় মসজিদে।

কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের!! অনেক দেরী হয়ে গেল।
মসজিদে কোমর পরিমাণ পানি এবং তিল পরিমাণ জায়গা খালি নাই দাঁড়ানোর। এর পর রওয়ানা দিতে হল মৃত্যু কুপের দিকে সাগর পাড়ে উত্তর রাজঘাট বাজারে আমাদের সদ্য নির্মিত পাকা দোকান ঘরে।

টিনসেট দোকান ঘরে গিয়ে আমরা প্রায় ৩ ফ্যামিলির ৩০/৪০ জন পুরুষ মহিলা আশ্রয় নিলাম বেড়ার ছাদে।
কিছুক্ষন যেতে না যেতে হুড় করে বেড়ার ছাদ ভেংগে নিচে জমা হওয়া পানির সাথে একাকার হয়ে গেল।
উপরে টিনের ছাউনি, দুপাশে দেয়াল,নিচে পানি, বলা চলে জীবন্ত পানির কবরে ডুব দিচ্ছি সবাই।
যে যার মত আল্লাহকে ডেকে নিয়ে এক জন আরেকজন থেকে বিদায় নিয়ে নিচ্ছে।

ওই মুহুর্তে আমার মেজ ভাই কেমনে বের হয়েছে জানিনা, তৎকালীন সিমেন্ট টিনের উপরে ওঠে জোরে লাতি দিয়ে কিছু অংশ ভেংগে একে একে সবাইকে বের করে আনলেন। সবশেষে আমাকে বের করে আনার সাথে পুরু টিনের চাউনি ভেঁঙে পানির সাথে একাকার হয়ে গেল এবং চার পাশের চারটি দেয়াল ভেংগে গিয়ে সবাই চারদিকে ছিটকে পড়ে গেল।

আমি ছিলাম আমার মায়ের হাতে শক্ত করে ধরা।
এই ধাক্কায় মা ছেলের বাধন ছিড়ে গিয়ে আমার মা যখন ভেসে যাচ্ছে ঠিক ওই মুহুর্তে মা ভেসে যাচ্ছে বলে চিৎকার করে ওঠায় পাশে থাকা মেজ ভাই ঝাপ দিয়ে মায়ের হাত ধরে সেদিনের প্রবল জোয়ারের ভেসে যাওয়া থেকে বাচাইতে পারলেও ২০১২ সালে এসে অর্থ বিত্ত টাকা পয়সা কোনকিছু দিয়ে আটকাতে পারিনাই প্রিয় মাকে। সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

ওইদিন মাকে ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষা করে মা সহ আমি ছোটবোন, বড় ভাই উঠলাম আমাদের দোকানের বারান্দার উপরে।

সেদিন দেখে মনে হচ্ছে বিশাল সমুদ্রের মাঝে এক চিলতে ভ্রাম্যমাণ চাউনির উপর জীবন যুদ্ধে নেমেছি।
এক এক পাহাড়সম ঢেউ এসে মাথার উপর দিয়ে যায়, কোনভাবে টিনের চালের শিক আকডে ধরে বেচে থাকা।
তার উপর অঝোরে লবন বৃষ্টি। বৃষ্টির এক এক ফোটা ভেজা গায়ে শিলা ছুড়ে পড়ার মত লাগছে।

চারপাশে বড় বড় ঢেউ আর খরস্রোত আর মাঝে মাঝে ডেউয়ের তোড়ে ভেসে আসা ভাংগা ঘরবাড়ির অংশ,কত না কিছু যাচ্ছে চোখের সামনে যা এখনও ভাবতে গেলে স্বপ্ন মনে হয়।

এমনিভাবে ২ ঘন্টা প্রকৃতির সাথে জীবন যুদ্ধে আধামরা হয়ে সমুদ্রের পানি একটু কমাতে নিচে নামতে গিয়ে প্রথম যে কদম রাখলাম নিজের অজান্তে একটা লাশের উপর।

ছোট ছিলাম বলে প্রথমে বুঝতে পারিনা কিসের উপর পা রেখেছি, যখন পা পিছলে গেল তখন পানির নিচে হাত দিয়ে উপরে তুলে দেখি একটা লাশ।

প্রথমে ভয় পেলেও এভাবেই বাকি পথ লাশের উপর দিয়ে হেটে একটু নিরাপদ গন্তব্যে পৌছাতে হল।
পরে পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিনা যে কিছুক্ষন আগেও এতগুলু লাশের উপর দিয়ে হেটে এসেছি। যেদিকে থাকাই শুধু লাশ আর লাশ।

আলহামদুলিল্লাহ অক্ষত তবে অনেক ক্লান্ত শরীর নিয়ে অনেক কষ্টে নিজের বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম, গিয়ে দেখি বাড়ীর নিশানা খুজে পাওয়া কস্ট হচ্ছে।
সব শেষ, দেখে মনে হচ্ছে বিরাণ ভুমিতে পা রেখেছি।

বাড়ী ভেংগে চুরমার, চারপাশে লাশের স্তুপ।
শুরু হল না খেয়ে বেচে থাকার সংগ্রামী জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত।

তার পরেও আমার বাবার দৃঢ়তা আর সাহস আমাদেরকে কোন সাহায্য সংস্থার এক চিলতে সাহায্য ছাড়া বেঁচে থাকতে এবং মানুষ হতে শিখিয়েছে।

আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর অপার করুনায় অল্প সময়ের ব্যবধানে আগের অবস্থায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছি পুরু পরিবার।

আজো ২৯ এপ্রিল আসলে দুঃসহ চিত্রগুলু নাড়া দেয়।
অজান্তে জীবন যুদ্ধে বেঁচে আসার কথা মনে পড়লে অঝোরে চোখের পানি চলে আসে।

সে দিনের শহীদদের আত্নার মাগফেরাত কামনা করি।
আল্লাহ তুমি নিস্পাপ মাছুম বাচ্ছা সহ যাদের নিয়ে গেছ তাদের জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করে নিন। আমিন।।

আজকের দিনে দ্বীপ এলাকা আমার প্রিয় মহেশখালী বাসী স্বজন হারাদের পক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করি—
♦ সরকারের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি অবিলম্বে মহেশখালীর চারপাশে রক্ষাবাঁধ দেয়া হউক। বিশেষ করে বন্দর এলাকা মাতারবাড়ী-ধলঘাটার চারিদিকে সুপার ডাইক নির্মাণ করা, তবে এ সুপার ডাইক হত দরিদ্র জনগনকে উচ্ছেদ করে নয়, বেড়িবাঁধের বাহিরে সরকারী পতিত জমিতে করা। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ বাঁচবে এবং জনগনও ভিটে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হবেনা।

♦ পর্যাপ্ত পরিমাণ সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ করা।

♦ প্রাকৃতিক রক্ষাবাঁধ খ্যাত চারপাশের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রক্ষা করা। কেটে ফেলা ম্যানগ্রোভ পুনরায় রোপন করা।

♦ ২৯ এপ্রিল ৯১ সালে বেসরকারি হিসেব মতে ১ লক্ষাধিক শহীদের স্মরনে জাতীয় শোক পালন করা।

♦দ্বীপাঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দ্রুত নিশ্চিত করা।

♦আগত বর্ষা মৌসুমের আগে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার ভাঁঙা বেরিবাঁধ সমুহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করার জোর দাবী জানাই।

———-
লেখক :
রফিকুল ইসলাম
সম্পাদক ও প্রকাশক, নিউজ ভিশন বিডি।।
ও অর্গানাইজিং সেক্রেটারি,
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন(BHRF)
কক্সবাজার জেলা।

700 Views

আরও পড়ুন

আইডিইবির ৫৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আধুনগর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের র‌্যালি ও আলোচনা সভা

দোয়ারাবাজারে এফআইভিডিবি’র স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ

বোয়ালখালীর নব যোগদানকৃত শিক্ষা অফিসার হারুন উর রশীদকে বরণ

জামালপুরে মৃত আইনজীবী হলেন অতিরিক্ত জিপি

তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদ্রাসা, সাইনবোর্ড শাখার বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

সাইফুল ইসলামের কবিতা : শীতের আমেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ইসলামি বক্তা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

পাবনার হেমায়েতপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ : নিহত ১

কাপাসিয়ায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির বিশাল শোভাযাত্রার আয়োজন

কাপাসিয়ায় ইসলাম শিক্ষা শিক্ষক পরিষদের উদ্যোগে সিরাতুন্নবী উপলক্ষে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন

কক্সবাজারের ঈদগাহতে ফুলকুঁড়ি আসরের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন

জবিস্থ শরীয়তপুর জেলা ছাত্রকল্যাণের নেতৃত্বে সৌরভ – মনির