ঢাকামঙ্গলবার , ৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

বাজার পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
১৩ নভেম্বর ২০১৯, ২:০৫ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

অ্যাডভোকেট মো. সাইফুদ্দীন খালেদ :

দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে জীবনযাত্রার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। একটি পরিবার কীভাবে তাদের দৈনন্দিন জীবনকে নির্বাহ করবে তা নির্ভর করে তাদের আয়, চাহিদা এবং দ্রব্যমূল্যের ওপর। প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের মূল্য যখন সহনীয় পর্যায়ে এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, তখন তাদের জীবন কাটে স্বস্তিতে। অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন সাধারণ মানুষের আর্থিক সংগতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যায়, তখন দরিদ্র এবং অতিদরিদ্র পরিবারে শুরু হয় অশান্তি। তাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে একদিকে জনজীবনে নেমে আসে কষ্টের কালো ছায়া| সম্প্রতি পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনক পর্যায়ে উপনীত হওয়ায় তা ‘টক অব দি কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে আলোচিত বিষয় হলো পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। খুচরা বাজারে ৯৫ টাকা থেকে শুরু করে ১৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করা হয়েছে। পেঁয়াজ নিয়ে যেন তুঘলকি কাণ্ড। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। আর এ মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্নের প্রয়োজন সর্বাগ্রে। কিন্তু খাদ্যদ্রব্য, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, মাছ, তরকারি, চিনি, দুধ ইত্যাদি নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি জনজীবনের গতিকে অচল ও আড়ষ্ট করে তুলে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি দেশের অন্যতম সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ন্যায়সঙ্গত মূল্য বলতে বর্তমানে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া যায় না। অতীতের সেই কথাগুলো আজ আমাদের কাছে রূপকথার মতো মনে হয়। যেমন- শায়েস্তা খাঁর আমলে টাকায় আট মন চাল পাওয়া যেত। এখন আর সে মূল্য আশা করা যায় না। এক সের লবণ এক পয়সা, এক পয়সার এক সের দুধ, দু আনায় এক সের তেল, একটি লুঙ্গি এক টাকা এবং একটি সুতি শাড়ি দু টাকা- তা খুব বেশি দিনের কথা না হলেও এটা কেউ এখন আর আশা করে না। ব্রিটিশ শাসনামলেও আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্য একটা নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ছিল। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঘোড়া জনগণকে হতাশার রাজ্যে নিয়ে যাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি বাড়ছে বাসাভাড়া, পরিবহন-ভাড়া, চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতের ব্যয়। সরকারি-বেসরকারি সেবার দামও বাড়ছে। সেই অনুপাতে বাড়ছে না মানুষের আয়। ফলে জীবনযাত্রার মানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাজার অস্থিতিশীল হওয়া মানেই দেশের বেশির ভাগ মানুষের ওপর চাপ পড়া। তাই সরকারকে বাজারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাই শুধু নয়, কর্মসংস্থানও বাড়াতে হবে। তখন উৎপাদন বাড়বে, বাড়বে ক্রয়ক্ষমতা। আয় বাড়লে মূল্যস্ফীতির আঘাতও হয় সহনীয়। কালোবাজারি, মুনাফাখোর, মজুদদার প্রভৃতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য দ্রব্যগুলোর মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন এবং ক্রমে এসব পণ্য সংগ্রহ করা কঠিনতর হচ্ছে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য। জনজীবন আজ বিপর্যস্ত, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বুভুক্ষু মানুষকে অর্ধাহার ও অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য করছে। মানুষের একটু ভালোভাবে বাঁচার দাবি আজ সর্বত্র। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি তাদের প্রতিকূলে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সীমাকে অতিক্রম করে অশ্বগতিতে বেড়ে চলছে ব্যয়ের খাত| এরূপ হারে পানির বিল, গ্যাস বিল, জ্বালানি তেলের মূল্য ও দ্রব্যমূল্যের অতিরিক্ত খরচ জনগণের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। আর নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীই মূল্যের এরূপ বৃদ্ধিতে অসহায় ও নিরূপায় হয়ে পড়েছে। অথচ তারাই মূল্যবোধ দিয়ে সমাজকে ধরে রাখে; তারাই গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের মূল শক্তি হিসেবে কাজ করে। জনগণ আশা করছেন তাদের এরূপ অবস্থার উন্নতি হবে, দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসের মূল্য কমবে। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। বাজারের ওপর সরকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে কি ব্যর্থ হচ্ছে- বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এমন প্রশ্ন দাঁড়ায়। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে বাজারে যাচ্ছেতাই কাণ্ডকীর্তি চালাতে না পারে, এ জন্য টিসিবিকে শক্তিশালী করার তাগিদ ইতিমধ্যে বহুবার নানা মহল থেকে এসেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আশানুরূপ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শুধু যে পণ্যদ্রব্যের দামই বেড়েছে তাই নয়, বেড়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম, পরিবহন ব্যয়, বাসা ভাড়া। অর্থনীতির সূত্রমতে, উৎপাদন ব্যয় ছাড়াও জিনিসপত্রের দাম বাজারের চাহিদা-জোগানের ভারসাম্যের ওপর নির্ভর করে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মূলে বহুবিধ কারণ রয়েছে- স্বার্থপরতা, অসাধু সমাজবিরোধী তৎপরতা, অর্থলোভী মানুষের অমানবিক আচরণ। তাছাড়া প্রাকৃতিক কারণে, অর্থাৎ অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টির কারণে জমিতে আশানুরূপ ফসল উৎপাদিত না হলে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যায়। আবার কৃষি ও শিল্প কারখানাগুলোর উৎপাদনে সীমাবদ্ধ এবং বিদেশী মুদ্রার অভাবে পণ্যদ্রব্য চাহিদা পরিমাণ আমদানি করা সম্ভব না হলে চোরাকারবারি, মজুদদারি ও দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ গ্রহণ করে। তারা জিনিসের কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে, ফলে দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। পণ্যমূল্য নির্ধারণে যুগোপযোগি আইন প্রণয়ন ও তা প্রয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ আইনের আওতায় দ্রব্যমূলের মূল্য নির্ধারণ, চোরাকারবারি প্রতিরোধ, ফড়িয়া ও অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য হ্রাস, দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যেতে পারে। সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় অথবা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এ পদক্ষেপ নিতে পারে। টিসিবিকে আরো শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে কেউ কেনাবেচা করলে তর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ব্যবসায়ী বিশেষজ্ঞ কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করে এ অবস্থার উন্নতি করা যেতে পারে। অবশেষে বলবো ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এর আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হলে দেশের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। বাংলাদেশ কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যে ভবিষ্যতে আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে- এ বিশ্বাস আমাদের সকলের।

লেখকঃ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

136 Views

আরও পড়ুন

উদ্যোক্তার হাট এ্যাওয়ার্ড পেলেন ১৪০ জন উদ্যোক্তা

উদ্যমিতা যুব সংস্থার উদ্যোগে ফ্রি চিকিৎসা সেবা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা টঙ্গী’তে নতুন অধ্যক্ষের যোগদান

দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় এখনই

জবিস্থ চাঁদপুর জেলা ছাত্রকল্যাণের আহ্বায়ক নুরে আলম সদস্য সচিব ফরহাদ

দুই কোটি টাকার লোহা লংকর গোপনে বিক্রি দেয়ার অভিযোগ সরকারি কলেজের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে

টঙ্গী’র এরশাদ নগরের সন্ত্রাসী কামুর শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

শান্তিগঞ্জে আব্দুন নূর চেয়ারম্যান স্মৃতি মেধাবৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

কমলগঞ্জে অয়েকপম ফাউন্ডেশন কর্তৃক মেধাবৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

জামালপুর হসপিটালে দুর্বৃত্তদের হামলা ভাংচুরের প্রতিবাদে ইসলামপুরে মানববন্ধন 

এরশাদ নগরের শৃঙ্খলা ও মাদক নির্মূল নিয়ে কাজ করবেন যুবদল নেতা কামাল হোসেন আজাদ

শান্তিগঞ্জে হাওরের ১০০ বছর ও আমাদের করণীয় শীর্ষক কর্মশালা