ড. এ.টি.এম. সামছুজ্জোহা
এশিয়ায় চীন ভারতের শত্রুতাকে আমরা ইঁদুর বিড়াল খেলার সাথে তুলনা করতে পারি। সাম্প্রতিক সময়েও দেশ দুটোকে সীমান্ত নিয়ে বেশ কয়েকবার সংঘাতে জড়াতে দেখলাম। গত কয়েকদিন আগে ব্রিকস সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের মন্তব্য শুনে অনেকের মনে হয়েছিল দু’পক্ষের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বৈরীতার মনে হয় অবসান হবে।
কিন্তু দিল্লিতে আসন্ন ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বরের সম্মেলনের আগে বেইজিং নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে আকসাই চীন ও অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করেছে যা চীন কর্তৃক আগুনে ঘি ভালা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। শি সরকার এর মাধ্যমে চীনা জনগণের সমর্থন অর্জন ও নিজ দলে তার অবস্থান আরও শক্তিশালী করছেন বলে মনে হয়।
প্রসঙ্গক্রমে,আরেকটি কথা বলতে চাই, মণিপুর রাজ্য কুকি চীন ও মেইতে সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সংঘাত, সেখানেও চীন নৃতাত্ত্বিক মিত্র কুকিদের অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে বলে খবর পাওয়া যায় যা ভারতের জন্য অস্বস্তির কারণ। চীন মূলত পূর্ব শত্রুতার জেরে ভারতকে অভ্যন্তরীণভাবে চাপে রাখতে চায়। দক্ষিণেশ্বর আধিপত্য বিস্তারের ধারায় এ দুটো দেশ বাংলাদেশেও পরাশক্তির রশি টানাটানি করছে।
উত্তরবঙ্গের তিস্তা প্রজেক্টে চীনের অংশ যেমন দিল্লি মানতে পারছে না তেমনি সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণও এর জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও ভারত এবং জাপানের সংশ্লিষ্টতা চীন ভালোভাবে নেয়নি বলেই মনে হয়। শি জিনপিংয় সরকার অনেকদিন ধরেই বঙ্গোপসাগরের রুট দিয়ে ওয়ান রুট ওয়ান বেল্ট নির্মাণের জন্য যে তোড়জোড় চালাচ্ছে ভারতসহ পশ্চিমা দেশগুলো ভালো চোখে দেখবে না এটাই স্বাভাবিক।সুতরাং দক্ষিণ এশিয়া আধিপত্য বিস্তারে দিল্লি- বেইজিংয়ের দ্বন্দ্বের জল কোন পর্যন্ত গড়ায়, সেজন্য আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।
লেখক:
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে চীনে পিএইচডির সাবেক শিক্ষার্থী ও অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।