ঢাকাসোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

পরিবেশ বাঁচাও দেশ বাঁচাও কর্মসুচীর আলোকে--
পাহাড়শীর্ষে প্রাকৃতিক জলাধার বগার লেক – কেওক্রাডং ঘুরে এসে

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
২৮ জানুয়ারি ২০২২, ২:৫৩ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

(১ম পর্ব)
– জিয়া হাবীব আহ্‌সান, এডভোকেট

পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস্ ফাউন্ডেশন(বিএইচআরএফ) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার এর আয়োজনে ʻসবুজ বাঁচলে দেশ বাঁচবে’ স্লোগান নিয়ে একটি টিম বাংলাদেশের পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং এর অভিমুখে যাত্রা করে, (১৪ ও ১৫ জানুয়ারি ২০২২) দুদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত ট্যুরে, আমাদের পরিবেশ ও প্রতিবেদন সংক্রান্ত ব্যাপক অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হয়।দূর্গম পাহাড়ি জনপদ বান্দরবান পার্বত্য জেলার অপরিসীম রূপ মাধুৰ্য ভাষায় প্রকাশ বা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।যেন পাহাড়, মেঘ ও নীল আকাশের মিতালী।যার সৌন্দর্য হিমালয় কন্যা নেপাল কিংবা ভারতের দার্জিলিং এর তুলনায় কোন অংশে কম নয়।মানবাধিকার কর্মকান্ড ও পেশাগত কারণে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখার সুযোগ হয় আমাদের।প্রকৃতি যত প্রতিকূল হোক না কেন তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারলে পাওয়া যায় সীমাহীন আনন্দ।পাহাড়ে একবার গেলে বারবার মন যেতে চায়, তাকে এড়িয়ে যাওয়ার কারও সাধ্যি নেই।বান্দরবান পার্বত্য জেলা হচ্ছে আমাদের দার্জিলিং।ভ্রমণ পিয়াসী প্রকৃতি প্রেমিকদের বার বার কাছে টানে পাহাড়-পর্বত, কাছে টানে বান্দরবানের পাহাড়।একসময় বান্দরবান বলতে অনেকে শুধু মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র, নীলাচল ভিউ (টাইগার হিল), শাপলা চত্বর ও বৌদ্ধমন্দির (স্বর্ণমন্দির), শৈল প্রপাত, চিম্বুক ভিউ, নীলগিরি প্রভৃতিকে বুঝাতেন।এডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকদের প্রচেষ্টায় বান্দরবন জেলার আরো অনেক অকৃত্রিম ও প্রাকৃতিক সৌন্দৰ্য্যময় পর্যটন স্পট আবিষ্কার হতে থাকে।তন্মধ্যে, জীবন নগর, থানছি, বড়পাথর, বগা লেক, কেওক্রাডং, তাজিংডং, ডিম পাহাড় প্রভৃতি এলাকার তুলনাহীন অপরুপ সৌন্দর্য চোখে না দেখলে তা কল্পনাও করা যায় না।বগার লেক যা প্রায় তিন কিলোমিটার পাহাড়ের চূড়ায় এক অলৌকিক প্রাকৃতিক জলাধার, কাঁক চক্ষুর মতো স্বচ্ছ পানির এ লেক দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটক প্রতিনিয়ত ভীড় জমালেও এখানে স্থানীয় বহু মানুষ জানে না তার দেশে কি চমৎকার প্রাকৃতিক পর্যটন সম্পদ রয়েছে।এইবার বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন-বিএইচআরএফ পরিবেশ সচেতনতামূলক টিম অভিযান প্রিয় মানবাধিকার কর্মীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় সময় পরিবেশ বাঁচাও কর্মসূচীতে নেমেছেন; এবারও ব্যতিক্রম নয়, যা বান্দরবানের বগালেক থেকে কেওক্রাডং পর্যন্ত বিস্তৃত।বগালেক থেকে কেওক্রাডং পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার পথ।পার্বত্য এলাকায় দূর্গম ও দুরের স্পটগুলোতে বর্ষা মৌসুমে যাতায়াত বিপদজনক ও কষ্টকর হলেও এ মৌসুমে পাহাড়ী এলাকা নিজ রূপ সৌন্দর্য্য ও মাধুৰ্য অন্য মৌসুমের তুলনায় বেশী প্রকাশ পায়।বর্ষায় পাহাড়ী সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে গত ২০১৩ সালের বর্ষাতেই আমরা তিন মানবাধিকার আইনজীবি যথাক্রমে আমি নিজে, এডভোকেট মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন ও এডঃ সৈয়দ মোহাম্মদ হারুন বগার লেকে গিয়েছিলাম, তবে এইবার আমরা ১৮ জন মানবাধিকার কর্মী বগালেক থেকে কেওক্রাডং যাওয়ার সিধান্ত নিই।অত্যন্ত আনন্দমুখর ও দুর্গম এ ভ্রমণে আমাদের সাথে ছিলেন বিশিষ্ট মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব এডভোকেট এ.এইচ.এম জসিম উদ্দিন, এডভোকেট আবুল খায়ের, এডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ হারুন, এডভোকেট প্রদীপ আইচ দীপু, এডভোকেট মোহাম্মদ হাসান আলী, এডভোকেট জিয়াউদ্দীন আরমান সহ মানবাধিকারকর্মী মোঃ নজরুল হোসেন (শুকরিয়া), আব্দুর রাজ্জাক, কে.এম শান্তুনু চৌধুরী, মোহাম্মদ রিদুয়ান করিম নাভিল, বিএইচআরএফ স্টুডেন্ট কাউন্সিলের ফুয়াদ, সাইদ, যাওয়াদ, রাফিফ, রিয়াদ প্রমুখ।আমাদের অপর এক সঙ্গী ছিলেন বান্দরবানের মানবাধিকার কর্মী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোছলেম উদ্দিন।আব্দুর রাজ্জাক ভাই পার্বত্য এলাকার এককালের বাঁশ ব্যবসায়ী ছিলেন মাঝে মধ্যে আমরা তাঁকে দুষ্টামির ছলে জ্বিনের বাদশাহ্‌ও বলে থাকি, কথাটি লিখতে গিয়ে আমিও আপনাদের মত না হেসে পারলাম না তবে তাঁকে কেন আমরা ভালবেসে এই নামে ডাকি সেটি গল্পের মাঝেই জানতে পারবেন।বান্দরবানের বিজ্ঞ জেলা জজ আদালতে একটি মামলা করতে গিয়ে সেখানকার তদানিন্তন বিজ্ঞ যুগ্ন জেলা জজ জনাব মোঃ আসাদুজ্জামান খান বগার লেক এর অকৃত্রিম সৌন্দর্যের কাব্যিক ও প্রাণবন্ত বর্ননার মাধ্যমে বগারলেক পরিদর্শনে আমাদের অসাধারণ ভাবে প্রলুব্ধ করেন।উল্লেখ্য, পার্বত্য জেলায় কর্মরত থাকাবস্থায় তিনি সেখানের বন্যপ্রানী ও পরিবেশ সংরক্ষনে যুগান্তকারী আদেশ প্রদান করেন।গত ২৪/১০/১১ ইং তারিখে তিনি একটি মামলার শুনানী শেষে ম্যান্ডেটরী নিষেধাজ্ঞা আদেশে রিজার্ভ বা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অনুপ্রবেশ বন্ধ, বন্যপ্রানীর চলাচলের করিডোর চিহ্নিতকরণ, বন্যপ্রানী লোকালয়ে প্রবেশ করলে তাকে নিরাপদে তার বাসস্থান বা করিডোরে ফেরত পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপায় উপকরণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স প্রস্তুত রাখার প্রয়োজনে পুলিশ ও বিজিবির সাহায্য নেয়া, বন্যপ্রানীর দ্বারা আক্রান্ত মানুষের জানমালের ক্ষতিপূরণ নীতিমালা ২০১০ মতে বান্দরবানে সম্প্রতি হাতির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করা, বান্দরবান বন বিভাগের ভূমি লিজ বা বন্দোবস্তি প্রদান না করা এবং আদেশের তারিখ থেকে ৪ মাসের মধ্যে মাতামূহরী রিজার্ভ ফরেষ্টকে বন্যপ্রানী অভয়ারন্য ঘোষনা করা, স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্যগণকে উন্নত ট্রেনিং প্রদান, হাতি মানুষ দ্বন্ধ নিরসনের জন্য হাতি উপদ্রুত এলাকায় গনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষন কার্যক্রম গ্রহন করা, বন বিভাগের ভূমি বন বিভাগকে দ্রুত হস্তান্তর করা এবং ক্ষেত্রমতে রিজার্ভ বা সংরক্ষিত বনাঞ্চল হতে মানুষের ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়া বা পূর্নবাসন, অধিগ্রহন বা উচ্ছেদ করা, বন্যপ্রানী যেন লোকালয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে তৎ জন্য প্রয়োজনীয় স্থানে বেষ্টনীর ব্যবস্থা করা, বন্যপ্রানীর খাবার, বাসস্থান ও প্রজনন ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন ও সুনিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ জারী করেন। তিনি জনস্বার্থে আনীত অপর এক মামলার আদেশে বলেন, বান্দরবান জেলার জনগণ এবং প্রকৃতি প্রেমী পর্যটকদের জীবন মরণের সাথে নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ট বান্দরবান জেলা শহর থেকে জেলার অন্তর্গত অন্যান্য উপজেলা শহরের সংযোগ সড়ক সমূহও পাহাড়ী পথে অত্যন্ত বিপদ সংকুল ও ঝুঁকিপূর্ন।এসব আঁকা-বাকা, উঁচু-নিচু, বিপদ-সংকুল পাহাড়ী ঝুঁকিপূর্ন পথ প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনায় আহত নিহত হচ্ছে স্থানীয় জনগণ বা সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটক, যা নিরাপদ ও পাশাপাশি সৌন্দর্য মন্ডিত করার আইনানুগ দায় রয়েছে বিবাদী সরকার পক্ষের, বিজ্ঞ বিচারক বিবাদী নিবাহী।প্রকৌশলী বান্দরবান সড়ক ও জনপদ বিভাগকে পাহাড়ী রাস্তায় প্রতিটি বাঁক, গিরির এবং সেতুও কার্লভাট এর পার্শ্বে আরসিসি দেয়াল নির্মানের ব্যবস্থা নিতে, সড়কে সতর্কীকরণ ট্রাফিক চিহ্ন ও অধিক বাঁক সম্পন্ন মোড়ে, বিপরীত মূখী গাড়ির অবস্থান দেখতে মিরর বোর্ড স্থাপন এর ব্যবস্থা নিতে, নিরাপদ ব্যবস্থা জোরদার করতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার, বি,আর,টি এ, বাস মালিক সমিতি সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের কতিপয় নিদের্শনা জারী করেন।অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তাঁর আদেশ সমূহ কিছু কিছু বাস্তবায়ন হলেও এর ধারাবাহিকতা বর্তমানে রক্ষা করা হচ্ছে না।ফলে প্রতিনিয়তই দূর্ঘটনার কবলে পড়ছে পর্যটক সহ স্থানীয় অধিবাসীরা মর্মে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেন। বিচারক আসাদ আমাদের আরো জানালেন যে, বান্দরবান এ কর্মরত অবস্থায় তিনি প্রতিটি ছুটির দিনকে এই এলাকায় গুরুত্বপূর্ন পর্যটন স্পট সমূহ দেখে স্রষ্টার সৃষ্টির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে অফুরন্ত আত্মতুষ্টিও পরিবেশ এবং ভৌগলিক জ্ঞান অর্জন করেছেন।এবার আসা যাক আমাদের সফরসঙ্গী আব্দুর রাজ্জাক ভাই এর কথায়।তিনি পার্বত্য জেলায় বাঁশের ব্যবসা করতেন বিধায় তাঁকে আমরা আমাদের পার্বত্য জেলা পরিদর্শনের গুরু মনে করি।বিশেষতঃ মাঝে মাঝে তাঁর কিছুটা অস্বাভাবিক আচরন এবং ভৌতিক বিষয়ের প্রতি আসক্তির কারণে তিনি তাকে আমাদের মধ্যে প্রিয় মানুষে পরিনত হয়েছেন।জ্বিন ভূতের গল্প শুনাতে তাঁর জুড়ি নেই।কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, এই ব্যক্তিটি তাঁর দীর্ঘ ৪০/৪৫ বছরের পাহাড়ী যাতায়াতকালে বগার লেক আমাদের সাথে ২০১৩ সালে প্রথম দেখার সুযোগ পান, এইবার তাঁর ২য় যাত্রা।তবে তাঁর কাছ থেকে বগার লেক নিয়ে স্থানীয়দের একটি রূপকথার গল্প শুনেছি।যা আমাদের বগার লেকের পথে জীপ ড্রাইভারও শুনিয়েছেন।পরে তা পাঠকদের কাছে তুলে ধরবো।ইতিপূর্বে দুর্গম থানছি ও বগালেকের সফরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার পূর্ব থেকে আমি স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী প্রিয় মোছলেম উদ্দিন ভাইয়ের সাথে প্রোগ্রাম সমন্বয় করি।তিনি আমাদের রাত্রিযাপনের জন্য বগালেকের পার্শ্বে বাঁশের একটি পুরো কটেজ ৪টা বড় বড় রুম বুকিং এর ব্যবস্থা ও বগার লেক যাওয়ার উদ্দেশ্যে রুমা উপজেলা সদর পর্যন্ত যাওয়ার জন্য দুটি ল্যান্ড ক্রুজার জীপ ভাড়া করেন।পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ জানুয়ারি শুক্রবার ভোর ০৬.৩০ টায় বদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে এসি বাসে সফর সঙ্গীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করি।
(২য় পর্ব চলবে) ।

লেখকঃ এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট ও জেলা জজ আদালত, মানবাধিকারকর্মী, কলামিস্ট ও সুশাসনকর্মী।

180 Views

আরও পড়ুন

পাঠকের অনূভুতিতে ❝কলিজার আধখান❞

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে বিএনপি সন্দেহ করছে–ড. হুমায়ুন কবির

বিশ্বরূপ চন্দ্র বিশ্বাসের কবিতা:- হাসি

শান্তিগঞ্জে জমিয়তের গণসংবর্ধনা ও কাউন্সিল শুক্রবার

শান্তিগঞ্জে জমিয়তের গণ সমাবেশ সফল করার লক্ষে সংবাদ সম্মেলন

আইডিইবির ৫৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আধুনগর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের র‌্যালি ও আলোচনা সভা

দোয়ারাবাজারে এফআইভিডিবি’র স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ

বোয়ালখালীর নব যোগদানকৃত শিক্ষা অফিসার হারুন উর রশীদকে বরণ

জামালপুরে মৃত আইনজীবী হলেন অতিরিক্ত জিপি

তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদ্রাসা, সাইনবোর্ড শাখার বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

সাইফুল ইসলামের কবিতা : শীতের আমেজ