ঢাকাশুক্রবার , ১১ জুলাই ২০২৫
  1. সর্বশেষ

খেলাপি ঋণ প্রতিরোধে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিবেচ্য বিষয়

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
১৩ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৩১ অপরাহ্ণ

Link Copied!

এডভোকেট মোঃ সাইফুদ্দীন খালেদ

ঋণ খেলাপি সংস্কৃতি আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম বাধা হিসেবে অভিহিত, যা অর্থনৈতিক কার্যধারাকে মূল্যহীন করে দেয়। ব্যাংক সহ সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকার ঋণ যা আদায় করা হয়নি আর ফলেই দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাধার সম্মুখিন হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলো। ব্যাংক তার মুনাফা সর্বোচ্চ করার জন্য সংগৃহিত আমানত থেকে ঋণ প্রদান করে থাকে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান জামানত গ্রহণ করে থাকে। যাকে বন্ধক বলা হয়। সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে ‘বন্ধক’ বলতে ঋণ করবার উদ্দেশ্যে স্থাবর সম্পত্তির স্বত্ব হস্তান্তর করণকে বুঝায়। ইহা কর্জ নিবারনের জন্য একটি ব্যবস্থা। বন্ধকদাতা এই মর্মে সম্পত্তি বন্ধক রাখেন যে, ঋণের টাকা কোন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা হলে বন্ধক গ্রহীতা অতঃপর দাতার রক্ষিত সম্পত্তিটি দাতার বরাবরে ফেরত দিতে বাধ্য। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রথমে তারল্য সংকটের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। তারল্য সংকটে পড়তে হবে কিনা। বিনিয়োগকৃত বা ঋণের টাকা কতো সময়ে উঠে আসবে তা বিবেচনা করে দেখতে হবে। ঋণের বিপরীতে রক্ষিত জামানত পর্যাপ্ত কিনা বিবেচনা করে দেখতে হবে। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে জামানতের সম্পত্তি বা বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রয় করে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্টান ঋণের প্রদত্ত অর্থ ফিরে পাবে কিনা। মুনাফার সম্ভবনার, ঋণ বা বিনিয়োগ খাতটি কতটুকু লাভজনক তা বিবেচনা করতে হবে। ঋণ প্রদানের পূর্বে ঋণ গ্রহীতার পূর্বের রেকর্ড অর্থাৎ সামাজিক সুনাম, পুলিশ রেকর্ড বা ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভবনা আছে কিনা তা যাচাই করতে হবে। অতীতের রেকর্ড খারাপ থাকলে ঋণ প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে। ঋণ গ্রহীতার আর্থিক অবস্থা, ব্যবসায়িক দক্ষতা দেখা জরুরী। এমন খাতে ঋণ প্রদান করতে হবে যা প্রদান করা হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত হবে এবং ফেরত পাওয়ার সম্ভবনা আছে। দরিদ্র, মূলধন, সামর্থ্য, নির্ভরশীলতা, দায়িত্বশীলতা এবং সম্পদশীলতা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। স্বজনপ্রীতি ও বিভিন্নভাবে প্ররোচিত হয়ে ঋণ প্রদান করা যাবে না। ঋণ বা বিনিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রেীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। ব্যাংক কর্তৃক অলিখিত চার্জ ডকুমেন্টে ঋণগ্রহীতা ও জামিনদারের স্বাক্ষর গ্রহনের দীর্ঘ দিনের বেড প্র্যাকটিস প্রচলিত আছে। এ অভ্যাস চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। চার্জ ডকুমেন্ট এক বসায় এক হাতে এক কলমে পূরণ করতে হবে। ঋণ খেলাপিরা যাতে প্রতারনা ও আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে বের হয়ে যেতে না পারে আইনে সে ব্যবস্থার পাশাপাশি ঋণ বা বিনিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকেও স্বচ্ছতার এবং জওয়াবদিহীতার মুখোমুখী করতে হবে। জনগনের অর্থ লুন্ঠনের যুগে যুগে চলে আসা ধারাবাহিক প্রক্রিয়াকে রুখতে না পারলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ব্যাপক বাধাগ্রস্থ হবে। অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ কে আরো গতিশীল করতে হবে। বাংলাদেশে অর্থ ঋণ আদালত আইন- নামে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল ১৯৯০ সনে (১৯৯০ সালের ৪নং আইন)। ঋণ সংগ্রহে আরও অধিকতর কার্যকরী রীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে উক্ত আইনকে রদ করে পরবর্তীতে অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ প্রণয়ন করা হয়। ২০১০ সালে সংশোধনী আনা হয়। এর লক্ষ্য ছিল ঋণ খেলাপিদের হাত থেকে ঋণের অর্থ উদ্ধার করা। ঋণ খেলাপিরা ব্যাংক ও অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে রাতারাতি দামী দামী গাড়ী বাড়ীর মালিক বুনে যায়। জনসাধারণের একটি বিশেষ অংশ বিভিন্নভাবে ঋণ গ্রহণ করে থাকে আবার স্বেচ্ছায় ও পরিকল্পিতভাবে ঋণ খেলাপিও হয়ে থাকে, যা একটি সংক্রামক ব্যাধির ন্যায় আত্মপ্রকাশ পেয়েছে। ভদ্রবেশী ঋণ খেলাপিদের হাতে যাতে দরিদ্র জনগনের অর্থ না যায় তার জন্য সচেতন থাকতে হবে। এ সমস্যা সমাধানে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার সহ পর্যবেক্ষক দলের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রকৃত সৎ, পরিশ্রমী, মেধাবী ও যোগ্য ব্যবসায়ী/শিল্পপতিদের প্রয়োজনীয় ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা সহ প্রণোদনা ও উৎসাহ প্রদান করতে হবে। ব্যাংকের পক্ষে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয় চোখে পড়ে। ঋণ গ্রহনের উদেশ্যে প্রস্তাবকৃত জামানত বা সম্পত্তির প্রকৃতি যাচাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্পত্তি কারো নিকট দায়বদ্ধ আছে কিনা বা পূর্বে কোথাও বন্ধক প্রদান করেছে কিনা তা সংবাদ পত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রচারের মাধ্যমে যাচাই করা জরুরী। উক্ত সম্পত্তি সংক্রন্তে আর,এস রেকর্ডীয় মালিক হইতে স্বত্বের ধারাবাহিকতা মিলিয়ে দেখতে হবে। স্বত্বের ধারাবাহিকতার সংশ্লিষ্ট সকল বায়া দলিল, আর,এস খতিয়ান, বি,এস খতিয়ান, দায়মুক্ত সনদ, বি,এস নামজারী খতিয়ান, ডিসিআর, হালসন খাজনা পরিশোধের দাখিলা, সিডিএ অনুমোদন পত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), হাউজিং সোসাইটির প্লট এর ক্ষেত্রে এনওসি বা অনুমতি পত্র, সার্ভে রিপোট বা আর,এস দাগের সাথে বি,এস দাগ মিলামিল সংক্রান্ত সংবাদের দরখাস্ত ইত্যাদি গ্রহন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট খতিয়ান সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট এ.সি (ল্যান্ড)/ সংশ্লিষ্ট কালেক্টরেট এর রেকর্ডরুমে তল্লাশীক্রমে সঠিক আছে কিনা যাচাই করে দেখতে হবে। জমির স্কেচ ও চৌহদ্দি নির্ধারণ সহ তপশীলভুক্ত সম্পত্তিতে মালিকের সরেজমিন পৃথক চিহ্নিত মতে বাস্তব দখল সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। সম্প্রতি খেলাপি ঋণের কারণ এবং তা কমিয়ে আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণগ্রহীতা নির্বাচনে দুর্বলতা, ঋণের বিপরীতে রক্ষিত জামানতের অপর্যাপ্ততা, অতিমূল্যায়ন ও ঝুঁকি বিশ্লেষণে দুর্বলতা, এক ব্যাংক কর্তৃক অন্য ব্যাংকের খারাপ ঋণ অধিগ্রহণ, চলতি মূলধনের পরিমাণ নির্ধারণ না করা, একাধিক ব্যাংক থেকে চলতি মূলধন গ্রহণ, স্বজনপ্রীতি ও বিভিন্নভাবে প্ররোচিত হয়ে ঋণ প্রদান, শাখা পর্যায়ে ঋণ প্রদানের ক্ষমতা সীমিতকরণ, ঋণ পুনঃতফসিলকরণের সুবিধার অসৎ ব্যবহার খেলাপি ঋণ বাড়ার অন্যতম কারণ।
অবশেষে বলবো আমাদের দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করবেন এটাই আমার কামনা।

লেখকঃ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

246 Views

আরও পড়ুন

আজ এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল

১৪ জুলাই পাবলিক হল ময়দানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিশাল জনসভা

ইসলামী ছাত্রশিবির নীলফামারী শহর শাখার নতুন দায়িত্বে যারা

টেকনাফে মিনি ড্রাম-ট্রাকে মিললো৫০হাজার ইয়াবা,আটক-২

মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে সমন্বিত সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভা

গাজীপুরে বিএনপি নেতা সাথী বহিষ্কার ও গ্রেফতার সমীকরণে : নিরব ক্ষোভে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা

কাপাসিয়ায় খাল বিলে অভিযান চালিয়ে ২৫ টি ম্যাজিক চাই ও জাল পুড়িয়ে ধ্বংস

মাদারীপুর জেলা জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার উদ্যোগে সাগরকন্যা কুয়াকাটা ভ্রমণ

কেরোয়ার একমাত্র রাস্তাটি আজ জনভোগান্তির প্রতীক

টেকনাফে বিজিবি অভিযানে৮১হাজার৩৫৫পিস ইয়াবা ও নগদ টাকাসহ স্ত্রী আটক,স্বামী পলাতক

গর্জনিয়া কচ্ছপিয়া নদী ভাঙ্গন পরিদর্শনে সাবেক এমপি কাজল

উখিয়ায় কেন্দ্র প্রতিনিধি সমাবেশে জেলা আমীর আনোয়ারী