উজিপুর প্রতিনিধি :
বরিশালের উজিরপুরে এক সন্তানের জননী ও গৃহবধূ রিমা বেগম (২৪) এর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করেছে করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৮)। যৌতুকের দাবি না মামায় গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যা করে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে পাশন্ড স্বামী ও শাশুরী।
এই ঘটনায় ঘাতক স্বামী মিজানুর রহমান বেপারী (২৮) ও তার মা আকলিমা বেগম (৫০) কে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতার পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে তারা র্যাবের কাছে এমন স্বীকারক্তি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-৮ এর উপ-অধিনায়ক মেজর খান সজিবুল ইসলাম। গ্রেফতারকৃতরা উজিরপুর উপজেলার শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা।
গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, গত সাত বছর পূর্বে মান্নান বেপারীর ছেলে মিজান বেপারীর সাথে বিয়ে হয় রিমা বেগমের (২৪)। বিয়ের পরে মিজান তার পরিবারের লোকেদের যোগসাজোসে এক লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে রিমা’র উপর নির্যাতন শুরু করে।
মেয়ের সুখের কথা ভেবে রিমার পরিবার এক লাখ টাকা যৌতুকের দাবি পূরণ করে। এর ফলে দেড়-দুই বছর মোটামুটি ভালোভাবে সংসারজীবন কাটলেও পরবর্তীতে দুই লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে পুনরায় শুরু হয় নির্যাতন। পরিবারের কু-প্ররোচনায় পড়ে মাছের ঘের ও মুরগীর ফার্ম করার জন্য রিমাকে তার বাবার বাড়ি থেকে ২ লাখ টাকা এনে দিতে বলে। এতে অপরাগতা প্রকাশ করেন রিমা।
দুই লাখ টাকা যৌতুকের দাবী প্রত্যাখ্যান করায় ক্ষুব্ধ স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির লোকজন রিমার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। এর প্রেক্ষিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর মিজান ও তার স্বামী রিমার মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। এরপর ২২ সেপ্টেম্বর রাতে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গৃহবধূকে শারীরিক নির্যাতনের পরে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে এটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে গৃহবধূর মৃতদেহ গলায় ফাঁস লাগিয়ে বাড়ির পার্শ্ববর্তী আমগাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে।
র্যাব-৮ এর মেজর খান সজিবুল ইসলাম বলেন, গৃহবধূর মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র রহস্যের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া সেই রহস্য থেকেই হত্যার অভিযোগ তুলে গত ২২ সেপ্টেম্বর উজিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। যার নম্বর-২২। পাশাপাশি রিমার হত্যাকারীদের গ্রেফতারে র্যাবের সহযোগিতা চান তার পরিবার।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৯টার দিকে উজিরপুর উপজেলার শিবপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামী মিজান বেপারী এবং তার মা আকলিমা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তারা র্যাবের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে বর্ননা দেয়। পরবর্তীতে মঙ্গলবার তাদেরকে উজিরপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে র্যাব-৮ কার্যালয় থেকে প্রেরিত ই-মেইল বার্তায় জানানো হয়েছে।