ঢাকামঙ্গলবার , ৭ মে ২০২৪
  1. সর্বশেষ

কোনটি বিজ্ঞানসম্মত? হাই কমোড, নাকি বাংলা প্যান?

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
২৫ মার্চ ২০২৩, ১:৩০ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

রেজাউল করিম :

—–
১৯৭৮ সাল। ক্রিসমাসের ঠিক আগে তীব্র হেমোরয়েডে (পাইলস) আক্রান্ত হলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। বাধ্য হলেন ছুটি নিতে। কিছুদিন পর টাইম ম্যাগাজিন একজন প্রস্টোলজিস্টের(পায়ূপথের রোগ-বিশেষজ্ঞ)কাছে প্রেসিডেন্টের অসুখ সম্পর্কে জানতে চাইল। জানা গেল, প্রেসিডেন্ট অসুস্থ হয়েছেন কমোড ব্যাবহার করার কারণে।

কমোডঃ কিভাবে এলো?

হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ হাটু উঁচু করে, উবু হয়ে বসে মলত্যাগ করে এসেছে। এ অভ্যাসে বড় পরিবর্তন এল উনিশ শতকের মাঝামাঝি। দ্রুত নগরায়নের ফলে ইওরোপে নতুন মধযবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব ঘটল। নব্য ভোক্তাদের নিত্যনতুন পন্যের প্রতি আকৃষ্ট করতে ইওরোপের বড় বড় শহর গুলোতে বানিজ্যমেলার আয়োজন শুরু করলেন ব্যাবসায়ীরা।

১৮৫১ সালে লন্ডনের এক বানিজ্যমেলায় এক ইংরেজ স্যানিটারি ব্যাবসায়ী হাজির করল তার নতুন পণ্য- হাই কমোড। নাম দি’ল ফ্লাশ টয়লেট। সেকালের লেটেস্ট গেজেট!

টয়লেট ব্যাবহারের জন্য খরিদ্দারকে গুনতে হবে এক পেনি। সাথে একটা তোয়ালে এবং চিরুনি ফ্রি। এমন কি পালিশ করে দেয়া হবে তার জুতা জোড়াও। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মানুষ ভিড় জমাল। সাড়ে পাঁচ মাস মেলা চলল। আট লক্ষ ২৭হাজার ২৮০জন মানুষ এক পেনি দিয়ে ফ্লাশ টয়লেট ব্যাবহার করল। ব্যাস! হাই কমোডের জয়জয়কার শুরু।

উনিশ শতকের শেষ দিকে এটি বৃটেন থেকে পুরো ইওরোপে ছড়িয়ে পড়ল। এর পর যুক্তরাষ্টে। প্রথমে অভিজাত ও বিত্তবানদের অট্টালিকা ও নাম করা হোটেল গুলোতে কমোড লাগানো হয়। জার্মানিতে প্রথম কমোড বসল রাণী ভিক্টোরিয়ার প্রাসাদে। সাধারন মানুষ বরাবরই অভিজাতদের অনুকরন করে। ফলে বিংশ শতাব্দীতে এসে পাশ্চাত্যের বাসাবাড়িতে কমোড হয়ে গেল আবশ্যিক অনুষঙ্গ।

আমাদের দেশে কমডের প্রচলন হল আশির দশকের শুরুতে। এখন প্যান হয়ে গেছে লো-ক্লাস আর কমোড হচ্ছে জাতে ওঠার প্রতীক। পাশ্চাত্যে কিন্তু উলটো স্রোত বইতে শুরু করেছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কমোডের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে প্রথম সচেতন হলেন গত শতকের পঞ্চাশের দশকে। ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয় খ্যাতনামা মার্কিন পরিপাকতন্ত্রবিদ হেনরি বোকাস প্রণীত গ্যস্ট্রোএন্টেরোলজির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পাঠ্যবই ‘বোকাস গ্যস্ট্রোএন্টেরোলজি’। এতে স্পষ্ট বল হয়- ‘মল ত্যাগ করার সময় পেটের সাথে দুই উরু লেগে থাকবে। এটি মলত্যাগের জন্যে সঠিক ভঙ্গি’।
আসলে কমোড কেন ক্ষতিকর তা বুঝতে শরীরে মল তৈরির প্রক্রিয়াটি আগে জানতে হবে। হজম ও বিপাকক্রিয়া শেষে খাদ্যবর্জ্য কোলনে এসে জমা হয়। শরির অতিরিক্ত পানিটুকু শুষে নেয়, বাকিটা মলে পরিনত হয় ও মলদ্বারে পৌছায়। ইউ(U) আকৃতির পেশি ‘পিউবোরেকটাইলিস’ এখানে মল ধরে রাখে। যখন আমরা squatting position-এ বা বঙ্গাসনে বসি, পেশিটি শিথিল হয় ও সমস্ত টক্সিনসহ মল শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু যখন কমোডে বসে মলত্যাগ করার সময় সংশ্লিষ্ট যায়গাটি সরু হয়ে যায়। ওপরদিকে চাপ পড়ে, তখন মল নির্গমনের প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয়। প্যানে বসলে মলদ্বার ও রেক্টামের মাঝের এঙ্গেলটি থকে ১২৬ ডিগ্রি। কমোদে বসলে সেটা ২৬ ডিগ্রি কমে ১০০ ডিগ্রি হয়। ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চাপ পরে,পায়ুপথের শিরা টান খায় ও ফুলে যায়।
কমোড ব্যাবহারে যে-সব রোগ হতে পারেঃ

হেমোরয়েডঃ

দীর্ঘদিন ধরে যারা কমোডে অভ্যস্থ তারা হেমোর্যে ডে আক্রান্ত হতে পারে। মেরিকন কলেজ অব গ্যস্ট্রোএন্টেরোলজির পরিসংখ্যান মতে, বয়স ৫০ হওয়ার আগেই হেমোরয়েডে ভুগতে শুরু করে।তাদের পায়ুপথের শিরা ফুলে থাকে। মলত্যাগের সময় রক্ত পরে। মার্কিন চিৎসকেরা তাই রোগীদের উদ্বুদ্ধ করছেন প্যানে বসে মলত্যাগ করতে। যে সব রোগী উপদেশ মানছেন তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। কারন কমোডের চেয়ে প্যানে বসে মলত্যাগ করতে সময় লাগে তিন ভাগের এক ভাগ।
ইসরায়েলি চিকিৎসা-গবেষক ডাভ সিকিররভ বিষয়টি নিশ্চিত হতে চেয়ে কয়েক ডজন রোগীর ওপর পরীক্ষা চালালেন। তিন রকম টয়লেট আসনের ব্যাবস্থা করলেন। ১৬ ইঞ্চি, ১২ ইঞ্চি উঁচু কমোড এবং বাংলা প্যান। দেখা গেল, কমোডে মলত্যাগ করতে রোগীদের সময় লাগছে ১৩০ সেকেন্ড আর বাংল প্যান ব্যাবহার করলে মাত্র ৫১ সেকেন্ড। অভিজ্ঞতাও কমোডের চেয়ে স্বস্তিদায়ক।

কোষ্ঠ কাঠিন্যঃ

কলোরেক্টাল সার্জনদের মতে মলত্যাগে অখন সময় বেশি লাগে, কোষ্ঠ কাঠিন্য হওয়ার ঝুকিও বেড়ে যায়।
কোষ্ঠ কাঠিন্যকে এখন বলা হচ্ছে ‘অ্যান আমেরিকান এপিডেমিক’। কারন আমেরিকায় ৪০ লক্ষ মানুষ দীর্ঘ মেয়াদি কোষ্ঠ কাঠিন্যে ভুগছে। ৩ কোটি ৩০ লক্ষ আমেরিকান ভুগছে অনিয়মিত কোষ্ঠ কাঠিন্যে। প্রতি বছর ২৫ লক্ষ আমেরিকান কোষ্ঠ কাঠিন্য-জনিত সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায় এবং ৯২হাজার রোগীর অবস্থা এত গুরুতর থাকে যে, হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সেখানে প্রতি বছর ৮০ কোটি ডলারের ল্যাক্সেটিভ(মল নিস্কশনে সহায়ক ঔষধ) বিক্রি হয়। ল্যাক্সেটিভ দীর্ঘ মেয়াদে বাড়ায় করোনারি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুকি।

পেলভিক ফ্লোর ডিজঅর্ডারঃ

মুত্রাশয়, মলদ্বার ও মহিলাদের ক্ষেত্রে জরায়ুসহ পুরো জায়গাটিকে বলে পেলভিক ফ্লোর। মূলত মলত্যাগ বাধাগ্রস্থ হলে বা মলত্যাগে নিয়ন্ত্রণ হারালে পেলভিক ফ্লোরের কার্যক্রমে গরবর দেখা দেয়।কোষ্ঠ কাঠিন্য, মলদ্বার ফুলে যাওয়া বা ব্যাথা এবং ইউরিন লিকেজ ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।

এ ছাড়া আই বি এস, ক্রনিক বাওয়েল ডিজিজ ইত্যাদি নানা রোগের অন্যতম কারণও হাই কমোড ব্যাবহার।
হাই কমোড ছাড়ুন, পাশ্চাত্যের স্বাস্থ সচেতন মানুষেরা ধিরে ধিরে কমোড ছেড়ে বাংলা প্যানের দিকে ঝুঁকছেন। হাই কমোড যথাসাধ্য বর্জন করুন। বাংলা প্যান ব্যাবহার করুণ। সুস্থ থাকুন।

…………………………………………………..
তথ্যসুত্রঃ
ডাইজেস্টিভ ডিজিজেজ এন্ড সায়েন্সেস, জুলাই ২০০৩।
একাডেমি অব ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান্স, সেপটেম্বর ২০১৫।
হেলথলাইন, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮: আমেরিকান।
অ্যাথেরোক্সেরোসিস, ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯।
হার্ভার্ড হেলথ, এপ্রিল ২০১৯।

364 Views

আরও পড়ুন

লোহাগাড়ায় বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক উৎসব‌ সম্পন্ন

নাগরপুরে শিক্ষক নেতৃত্বে সর্বোচ্চ ৫৬৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত ছানোয়ার

নাগরপুরে দুর্নীতিবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০২৪ অনুষ্ঠিত

বাইশারী বাজারে অগ্নিকাণ্ডে ফ্যামিলি বাসাসহ ৪ দোকান পুড়ে ছাই !!

সুন্দরবন’র আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও শংকা কাটেনি এখনও

শেরপুরে ‌’কানেক্ট জাপান এডুকেশন’ ট্রেনিং সেন্টারের উদ্বোধন

আদমদীঘিতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত

চলছে তীব্র তাপদাহ এতে জনজীবন অতিষ্ঠ গ্রীন ভয়েস কক্সবাজার জেলার বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ

রাসিক মেয়রের সাথে ফটোজার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ।

নাগরপুরে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নতুন নেতৃত্বে হোসেন-ওয়াহিদ-কানিজ

রাঙামাটির কাউখালীতে বজ্রপাতে মৃত্যু-১ আহত-৪

বজ্রপাতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে খাগড়াছড়িতে নিহত-৩