শামসুল হুদা লিটন:
বিগত সরকারের আমলে কথিত পুরস্কার প্রাপ্ত কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আজ করুন দশা। গত কয়েকদিন যাবত হাসপাতালটি মিডিয়ার অন্যতম অনিয়মের শিরোনামে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবার নিন্মমান, ব্যাপক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা, বিপুল পরিমাণ সরকারী ঔষদ স্টোর রুমে মজুদ করে নষ্ট করারমতো চাঞ্চল্যকর সংবাদ ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করতে এবার মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২৮ এপ্রিল সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় গাজীপুরের কর্মকর্তাগণ এ অভিযান পরিচালনা করেন।
স্থানীয় ভুক্তভোগী জনগণ ও গণমাধ্যম কর্মীরা এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে।
অভিয়ানের সময় স্বাস্থ্য সেবার মান, লাখ লাখ টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, অব্যবহৃত বিকল যন্ত্রপাতি ও নানা কাগজপত্রে অনিয়ম পাওয়া গেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তাগণ।
তারা জানান প্রাথমিকভাবে আমরা কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনিয়মের সত্যতা পেয়েছি।
জানা যায়, কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ২০২৩ ও ২৪ সালে বরাদ্দ পাওয়া বিপুল পরিমাণ বিনামূল্যেল সরকারি ঔষধ রোগীদের মাঝে বিতরণ না করে স্টোর রুমে মজুদ করার কারণে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে উপজেলার লাখ গরীব মানুষ চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হয়। সরকারের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে কাপাসিয়ায় হাসপাতালে মজুদ লাখ লাখ টাকার সরকারি ঔষধ মেয়াদ উত্তীর্ণ-এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হলে বিষয়টি দুদকের নজরেও আসে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুদক, গাজীপুর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের কর্মকর্তাগণ হাসপাতালে দিনব্যাপী অভিযান চালায়।
দুদকের এ অভিযানে অংশ নেন দুদক গাজীপুরের সহকারী পরিচালক মোঃ সেলিম মিয়া, উপ সহকারী পরিচালক প্রান্তিক সাহা।
অপরদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির সদস্যরাও একই দিন হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। তদন্ত কমিটির সদস্যদের মধ্যে ডিজি হেলথের উপজেলা হেলথ কেয়ার বিভাগের উপপরিচালক ডা. আজিজ, ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক ডা. হারুনর রশীদ এবং ঢাকা বিভাগের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. জমির মো: হাসিবুস সাত্তার দিনব্যাপী তদন্ত কাজ পরিচালনা করেন।
এ সময় গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন ও সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রহমান, বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান, সাবেক স্টোর কিপার আব্দুর রাজ্জাক ও বর্তমান স্টোর কিপার আজহারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তদন্ত কমিটি ও দুদক কর্মকর্তাগণ পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
দুদক গাজীপুরের সহকারী পরিচালক মোঃ সেলিম মিয়া জানান, কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা প্রদানে অনিয়ম ও হয়রানি এবং সরকারি ওষুধ বিতরণে অবহেলার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনফোর্সমেন্ট পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার মান, ওষুধের মজুত রেজিস্টার, ওষুধ বিতরণ রেজিস্টার, রোগীদের খাবারের মানসহ অন্যান্য বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে বিপুল পরিমাণ মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ এবং যন্ত্রাংশ স্টোরে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়া ওষুধ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
অভিযোগ ওঠেছে, কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলার হাজারো মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। তাদের মধ্যে রয়েছে অনেক গরীব অসহায়ও অসচ্ছল মানুষ। তাদের অনেকে সরকারি হাসপাতালের বিনামুল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ পাওয়ার আশায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায়। কিন্তু সরকারি বিনামূল্যের ঔষধ রোগীদের না দিয়ে চুরি করে বিক্রির জন্য হাসপাতালেরে স্টোরে মজুদ করা হয়। কিন্তু সুযোগ না পাওয়ায় ঔষধগুলো স্টোর থেকে বের করে বাইরে নিয়ে বিক্রি করতে না পারায় স্টোরেই ঔষধগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে নষ্ট হয়ে যায়।
স্থানীয় জনগণের অভিমত,
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিগত সরকারের আমলে দেশ সেরা হাসপাতাল হিসেবে কয়েকবার পুরস্কার লাভ করে। কিন্তু এমন দুর্ণীতি অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় নিমজ্জিত একটি হাসপাতাল কী করে কীভাবে পুরস্কৃত হয় তাও তদন্ত করে বের করা দরকার। হাসপাতালের চিকিৎসকদের কর্মদিবসে উপস্থিতি নিশ্চিত করার ও আহবান জানান সচেতন জনসাধারণ।