আর্তনাদ
তাসলিমা আফরিন মিম
তুমি নেই আজ তেত্রিশ বছর!
শুধু তুমিই না এ শহর থেকে তোমার –
হাসিটুকুও মুছে গেছে চিরতরে।
জীবন আমাকে সুদূর বিলাতে বিলাসী
জীবনযাপনে লোভ দেখিয়েছে বহুবার।
আমি যেতে পারি নি,মন সায় দেয়নি।
এ শহরে আমার কেউ নেই,কিচ্ছু নেই।
কিন্তু কি বলতো,ঐ যে সাড়ে তিন হাত জমিন,
যেখানটায় তুমি শুয়ে আছো-
আমি যে তার পাশে কুঁড়েঘর বেঁধেছি।
জীবন থাকতে এ বাসস্থানের অন্যথা হবে না।
গত তেত্রিশ বছরে কত-শত বার গিয়েছি তোমার কবরের সামনে।
কবরের ভেজা মাটির ভ্যাপসা গন্ধে আমি তোমার
দেহের গন্ধ খুঁজে পাই।
ঐখানেই মিশে আছো কিনা!
সারাজীবন একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতি করেছিলে,
কিন্তু বিধির বিধানের কাছে আমাদের
প্রতিজ্ঞাগুলো যে বড্ড ঠুনকো।
তবুও তো তোমাকে পেয়েছিলাম।
এই টুকুই বা ক’জনে পায় বলো!
কত ফুল অঙ্কুরেই ঝরে পড়ে,
কত নদী অকালে শুকায়,
সাগরে মিলিত হওয়ার ভাগ্য কই?
দেখতে পারছো তো তুমি?
বয়সের ভাড়ে কুঁজো হয়েছি কেমন!
ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ-নানা জটিলরোগ
বাসা বেঁধেছে এই ক্ষয়ে যাওয়া শরীরে।
এ বারই হয়তো শেষ,এ মাটির গন্ধ –
আমার আর নেওয়া হবে না।
খুব সাধ ছিল জানো,
তোমার কবরের পাশে আমার কবর হোক।
শুনলাম সাহেবরা জমিটুকু কিনে নিয়েছে।
মস্তবড় কারখানা হবে।
দেখলে!জীবনের শেষে এসে,যখন শরীর ক্ষয়ে যাচ্ছে,
তখনও কেমন নিত্য নতুন ক্ষতের আগমন।