আকতার কামাল মহসিন, চট্টগ্রাম :
চট্টগ্রাম বন্দরনগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হাজী চাঁন্দমিয়া সড়ক এক সময় ছিল ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথগুলোর একটি। অথচ আজ এই সড়ক যেন পরিণত হয়েছে এক পরিত্যক্ত, জীর্ণ-শীর্ণ, দুর্ভোগে ভরা কর্দমাক্ত জনপথে।
এই সড়ক ঘিরেই রয়েছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান—চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, জামেয়া দারুল মা-আরিফ আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা এবং হাজী চাঁন্দ মিয়া সওদাগর উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থী, রোগী ও তাদের স্বজনদের চলাচলের একমাত্র ভরসা এই পথ।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সড়কটির বেহাল অবস্থা আজ জনদুর্ভোগের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষা মৌসুমে সড়কের গর্তগুলো পানিতে ডুবে যায়, সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা ও দুর্ঘটনার ফাঁদ। বাইক আরোহীরা পড়েন প্রাণহানির ঝুঁকিতে, রিকশা উল্টে যাত্রী পড়ে যাওয়া হয়ে উঠেছে নিত্যদিনের চিত্র। আর রোগীদের জন্য এই সড়ক যেন এক নির্মম দুর্বিপাক—যেখানে হাসপাতালে পৌঁছানো উচিত নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক, সেখানে তা পরিণত হয়েছে আতঙ্কের যাত্রায়।
ইটবাঁধানো রাস্তার বেশির ভাগ অংশ উঠে গেছে, কোথাও কোথাও কাদা-পানি মিশে তৈরি হয়েছে কর্দমাক্ত খাদ। গাড়ি মাঝপথে আটকে যাচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। অথচ এই পথ ব্যবহার করেন জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাসহ বহু প্রভাবশালী ব্যক্তিও। কিন্তু তবুও অব্যবস্থাপনার বৃত্ত যেন কাটছেই না—কারো ভ্রুক্ষেপ নেই, দায়িত্ববোধ যেন নির্বাসিত।
বছরের পর বছর ধরে সংস্কারের নামে চলছে সময়ক্ষেপণ। কাজ শুরু হলেও তা বারবার থেমে গেছে, আর বর্ষা এলেই দুর্ভোগ হয়ে ওঠে বহুগুণ। বিশেষ করে হাজীপাড়া, শমসেরপাড়া, হাদুমাজিপাড়া, খতিবেরহাট, অদুরপাড়া, হাজিরপুল এবং ডালিপাড়ার হাজার হাজার বাসিন্দারা যেন প্রতিদিন হাঁটেন এক দুর্যোগপথে।
চট্টগ্রাম মহানগরী দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী—এ শহরের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের এই করুণ চিত্র কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং যোগাযোগ ও সড়ক বিভাগের নিকট জোরালোভাবে আহ্বান জানাই—অবিলম্বে যেন এই সড়কের সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়।
রাস্তার বাকি কাজ যদি দ্রুত শেষ না হয়, তবে শুধু যানবাহন চলাচলই নয়, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হবে। জনজীবনে নেমে আসবে এক মানবিক বিপর্যয়। তাই আজই সময়—হাজী চাঁন্দমিয়া সড়কের সংস্কার কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে শিক্ষার্থী, রোগী ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করা।