শরণখোলার ইউএনওর অপসারণ ও চাকরিচ্যুত’র দাবিতে সংবাদ সম্মেলন:

——

চাঁদাবাজি ও আওয়ামী লীগের সাথে সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুদীপ্ত কুমার সিংহকে অপসারণ ও চাকরিচ্যুত করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার ২১ শে জুন, ২০২৫ সন্ধ্যায় শরণখোলার ফ্যাসিবাদ বিরোধী জনগণের ব্যানারে উক্ত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ‘অদম্য জুলাই’ নামের একটি প্লাটফর্ম থেকে তার দুর্নীতি-অনিয়মের তথ্য প্রকাশ পায়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক চোখের আলো হারানো রোমানুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি ১২ টি অভিযোগ তুলে ধরেন। 

১) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামীলীগের পক্ষ নিয়েছেন এবং আওয়ামীলীগের পতনের পরও আওয়ামী লীগের-শেখ হাসিনার লেখা সকল বইপত্র সযত্নে অফিসে রেখে দিয়েছিলেন আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুদীপ্ত কুমার সিংহ। আমাদের আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে তা সরিয়ে নেন তিনি।

২) ব্যবসায়ীদের ৪ টি ড্রেজার আটকিয়ে প্রতিটি ড্রেজার থেকে ২ লাখ টাকা করে প্রায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেছেন তিনি। এমনকি মহান বিজয় দিবসে একই কাজ করেছেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেছেন যার প্রতিবাদে উপজেলায় মানববন্ধনও হয়েছে।

৩) আওয়ামী লীগের লোকজন কমিটিতে না রাখলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না, সে কমিটিতে সাইন করবেন না বলে মন্তব্য করেন। সম্প্রতি শরণখোলা পাবলিক লাইব্রেরির কমিটি তিনি দীর্ঘদিন এই কারণ দেখিয়ে সিগনেচার করেননি।

৪) আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-মেম্বাররা পলাতক থাকলেও তাদেরকে উপস্থিত দেখিয়েছেন, যার ফলে কেউ সেবা না পেলেও ঠিকই উল্টো বেতন পাচ্ছেন তারা এবং তাদের নামে আসা কাজ থেকে করছেন কমিশন বাণিজ্য।

৫) উপজেলায় মাত্র ৭২ টি মন্দির এবং প্রায় পাঁচশত মসজিদ রয়েছে। সেখানে তিনি মন্দিরের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন প্রায় ১১ লাখ টাকা আর মসজিদের জন্য মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকা।

৬) জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতরা ভালো নেই-চিকিৎসা নিতে পারছেন না যখনই তাকে একথাগুলো বলা হয়েছে তিনি ১০ কেজি চাউল দিতে চেয়েছেন। আমাদের জুলাইয়ে আহত বীর যোদ্ধারা কী ভিক্ষুক? তারা রক্ত দিয়ে-দেশের জন্য পঙ্গু হয়ে কী অপরাধ করেছেন? গত ঈদুল ফিতরে আহতদের জন্য ৫ প্যাকেট ঈদ সামগ্রী প্রদান করে তিনি এখন ৫০ প্যাকেট বলছেন। তাকে আমরা আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে চ্যালেঞ্জ করে বলছি আপনার বাসার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখাবেন যে, পাঁচ প্যাকেটের বেশি এক প্যাকেটও খাবার দিয়েছেন।

৭) আওয়ামীলীগের আমলে মামলা ও জেল খাটা রাজনৈতিক নেতাদের নামে মিথ্যাচার করেন তিনি। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সুবিধা দিতে চাইলে সেটিতে বাধা দিলে বিএনপি-জামায়াতের  নেতাদের নামে বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যাচার করেন। 

৮) আওয়ামীলীগের সময়ে চলমান বিভিন্ন অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ এবং আওয়ামী ঠিকাদারদের বিভিন্ন কাজের কমিশন বাণিজ্য করেছেন।

৯) আওয়ামীলীগের আমলেই ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ যে এখনও ভারতে বসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে তারই শ্যালক ও আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্তর কর্মী না হওয়ায় জেলে কার্ডের চাল দেননি এই ইউএনও। আওয়ামী লীগের পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষদের মধ্যে বাজে ধারণা তৈরি করতে এরপরও কয়েকবার জেলা কার্ডের সুবিধাসহ বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত করছেন এই ইউএনও।

১০) আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত থাকা লোকদের বিভিন্ন বরাদ্দ প্রদান করছেন এবং তাদেরকে বিভিন্নভাবে পুনর্বাসন করছেন। আপনারা কেউ বলতে পারবেন না যে, ৫ ই আগস্টের পরে তার দ্বারা কোনো আওয়ামীলীগের লোকজন উপকৃত ছাড়া আইনের মুখোমুখি হয়েছে।

১১) উপজেলার যাতায়াতের অন্যতম রায়েন্দার ব্রীজটি বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। উপজেলায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি যেমন প্রতিদিন চুরি-ছিনতাই-গরুর মাংস কেটে নিয়ে যাওয়া এ সমস্ত বিষয়ে তিনি কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। তিনি ফেইসবুকে ছোটখাটো বিষয়ের পোস্ট দিয়ে মানুষের চোখে ধূলা দিয়ে অবাধে অনিয়ম দুর্নীতি করে যাচ্ছেন।

১২) ৬ মে, ২০২৪ তারিখে তিনি শরণখোলায় দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তার ভূমিকা কী ছিল? কয়দিন তাকে মাঠে কাজ করতে দেখেছেন? আমরা তাকে বার বার অনুরোধ জানালেও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তীতে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতির সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত থাকায় আত্মগোপনে থেকেছেন, কোনো পদক্ষেপ নেননি।

এসময় তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা এবং সচিবের কাছে, শরণখোলার বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুদীপ্ত কুমার সিংহকে আগামী দুই কার্য দিবসের মধ্যে শরণখোলা থেকে অপসারণ এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত করে তাকে চাকরিচ্যুত করার দাবি জানান।

জানা গেছে, এর আগে মে মাসের ৪ তারিখে তারা বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক বরারবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন।