সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে মসজিদের মিনার ও মেহরাব ভাংচুর ঘটনায় সৃষ্ট সংঘর্ষে ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত আজিজুর রহমান (৫৫) কে ছাতকের কৈতক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা
দেয়া হয়েছে। খবর পেয়ে দোয়ারাবাজার থানা পুলিশের একটি ফোর্স ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকালে উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের খাইরগাঁও গ্রামের দক্ষিণ মহল্লায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের খাইরগাঁও দক্ষিণ মহল্লায় পুরাতন জামে মসজিদটি শতাধিক বছর আগের নির্মিত। ওই মসজিদের জমি নিয়ে বিরোধ ছিল দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে আদালতে মামলা-মোকদ্দমা ও হয়েছে। পরবর্তীতে প্রায় এক দশক পূর্বে জনৈক সৌদি নাগরিকের অর্থায়নে নতুন আরেকটি জামে মসজিদ নির্মিত হয় পুরাতন জামে মসজিদের একই আঙ্গিনায়। তখন থেকে মুসল্লিসহ পঞ্চায়েতের লোকজনও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় মসজিদ ও মসজিদের জমি নিয়ে দু’পক্ষের মুসল্লিদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ওই সময় সংঘর্ষে মসজিদের জনৈক ইমামও প্রহৃত হয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকালে নতুন মসজিদ পঞ্চায়েত পক্ষের আব্দুর রহমান গং লোকজন পুরাতন মসজিদের মিনার ও মেহরাব ভাঙতে যান। এ সময় পুরাতন মসজিদ পঞ্চায়েত পক্ষের আজিজুর রহমান গং লোকজনের নিষেধ-বাঁধা উপেক্ষা করে ভাংচুর অব্যাহত রাখলে উভয়পক্ষ সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়েন। এ সময় পাথর, ইট-পাটকেলের আঘাতে অন্তত ১০জন আহত হয়েছেন।আহতরা হলেন- ওই গ্রামের মৃত হাজি ইছবর আলীর পুত্র আজিজুর রহমান (৫৫) ও মো. বকুল্লাহ (৪৫), আজিজুর রহমানের পুত্র দিলোয়ার হোসেন (৩০), মৃত মকবুল আলীর পুত্র আব্দুছ ছত্তার (৫০), আব্দুছ ছত্তারের পুত্র মোহাম্মদ আলী (৫০), ফয়জুর রহমানের স্ত্রী সমতেরা বেগম (৩৮), দিলোয়ার হোসেনের স্ত্রী মিনারা বেগম (২৬)।
ভাংচুর ও সংঘর্ষের আভাস পেয়ে সকাল থেকেই জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সালিশ বৈঠকে বসেন। তার পরেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় নতুন মসজিদের আওতাধীন লোকজন পুরাতন মসজিদে ভাংচুর ও তছনছ শুরু করেন। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজন বাঁধা দিতে এগিয়ে এলে এলোপাতাড়ি সংঘর্ষ বাঁধে। সালিশসহ উপস্থিত জনতা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েও ভাংচুর ও সংঘর্ষ দমাতে পারেননি। এ সময় মসজিদের মাইক, ব্যাটারি লুটসহ দরজার তালা ভেঙে ভিতরে সেলফে রাখা কিতাব ও আসবাবপত্র তছনছ করার অভিযোগও উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে খবর পেয়ে পুলিশের একটি ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌছলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রবীন ব্যক্তি হাজি ইছাক মিয়া বলেন, খাইরগাঁও গ্রামের দক্ষিণ মহল্লায় একই স্থানে পাশাপাশি দুটি মসজিদ নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার মুরব্বিরা আপস নিস্পত্তির মাধ্যমে সৃষ্ট বিরোধটি নিরসনের অনেক চেষ্টা চালিয়েও আমরা ব্যর্থ হই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আমির হোসেন, সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম খান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া, সাবেক চেয়ারম্যান প্রার্থী মাঈন উদ্দিন, রুবেল ভূঁইয়া, হাজি ইছাক মিয়া, ফয়জুল হক, হাজি ফখরুল হক, ছিদ্দেক আলীসহ এলাকার অর্ধ শতাধিক সালিশ ব্যক্তিত্ব লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দোয়ারাবাজার থানার ওসি আবুল হাশেম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে পাঠালে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পাশাপাশি অবস্থিত ওই দুটি মসজিদ ও মসজিদের জমি নিয়ে বিরোধটি দীর্ঘদিনের। দীর্ঘদিনের বিদ্যমান বিরোধটি নিস্পত্তির স্বার্থে বুধবার উভয় পক্ষকে থানায় হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।