এম এ মোতালিব ভুঁইয়া :
নেপিয়ার ঘাস একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গবাদি পশু পালনের জন্য। বিশেষ করে দুগ্ধবতী গাভীর জন্য সবুজ ঘাসের কোনো বিকল্প নেই। গাভীকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে সবুজ ঘাস দিলে প্রচুর দুধ উৎপন্ন হয়। আগে আমাদের দেশে চারণ ভূমিতে গরুকে খাওয়ানো হত কিন্তু বর্তমানে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চারণ ভূমির পরিমান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। কৃষকেরা তাই অল্প জমিতে উন্নত জাতের ঘাস চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের ঘাস চাষ হয় তারমধ্যে পাকচং,নেপিয়ার, পারা, জাম্বু, জার্মান ও পাপচন ঘাস অন্যতম। এসব জাতের মধ্যে বাংলাদেশে নেপিয়ার ঘাস খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় নেপিয়ার ঘাস খুব ভালো হয়। কচি অবস্থায় পুষ্টিমান বেশি থাকে। গবাদি প্রাণীর জন্য নেপিয়ার অত্যন্ত উপাদেয় ও পুষ্টিকর খাদ্য। কারণ এ ঘাসটি অল্প সময়েই বৃদ্ধি পায় এবং চার বৎসর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। বর্ষা মৌসুমে দেশের নিম্ন ভূমিগুলো পানিতে তলিয়ে যায় এসব অঞ্চলের গরু-মহিষের জন্য ঘাসতো দূরের কথা কয়েক মুঠো খড় যোগানোও কঠিন হয়। এ সময় কৃষক অভাবের তাড়নায় অনেক গরু-মহিষ কম দামে বিক্রি করে দেন। অনেকের গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া খাদ্যাভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে। তাই বাংলাদেশে এরকম লাখ লখ একর পতিত জমি সারা বছরই খালি পড়ে থাকে। একটু সচেতন হলেই আমরা এই জমি কাজে লাগিয়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করতে পারি।
সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে জানাগেছে বছরে এমন একটা সময় আসে যখন গো খাদ্য সংকটে পরতে হয় সেই সংকট নিরশনে তারা প্রথমে নেপিয়ার ও পরবর্তিতে পাকচং ঘাস চাষ করছে। তারা জানান এই গুলো দুগ্ধ জাত গাভীকে খাওয়ালে বেশী পরিমানে দুধ পাওয়া যায় এছাড়াও গার্ভবতী গরুকে খাওয়ালে বাছুর অন্ধত্ব থেকে রক্ষা ও স্বাস্থ্যবান হয়। এসব কারনে দোয়ারাবাজারে এ ঘাসের জনপ্রিয়তা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কুশিউড়া গ্রামের মহিউদ্দিন,আকবর আলী,ঢালিয়া গ্রামের আব্দুল বারিক,বাশতলা গ্রামের জুটন ভুঁইয়া, লালচান, পাইকপাড়া গ্রামের তাজুল ইসলাম,চৌধুরীপাড়া গ্রামের মোরশেদ মিয়া জানান তারা বেশ কয়েক বছর থেকে কুশিউড়া গ্রামের পশু চিকিৎসক মহিউদ্দিনের পরামর্শে নেপিয়ার,পাকচং ও জার্মান ঘাস চাষ করে আসছে। তাদের দেখাদেখি আনেকেই এখন এ ঘাস চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ঘাসের চাহিদা বৃদ্ধি ও ভাল দাম পাওয়ায় অনেকেই ঘাস চাষে ঝুকে পড়ছে। ঘাস চাষে তেমন কোন পুজির প্রয়োজন হয় না। উৎপাদন ব্যায় ধান চাষের চেয়ে তুলনা মুলক অনেক কম। মহিউদ্দিন জানান ঘাস একবার লাগালে আর লাগাতে হয় না। ঘাসের গোড়া থেকে এক ফিট উপড়ে কাটলে পড়ে সেখান থেকে আবার ঘাসের আগা বের হয়। উপজেলার দরিদ্র চাষীদের পৃষ্টপোষকতা করলে এবং পরিত্যাক্ত খাস জমিতে লীজের মাধ্যেমে ঘাস চাষের ব্যবস্থা করলে এলাকায় গো-খাদ্য সংকট থাকবে না এবং কৃষকের বাড়তি আয়ের উৎস তৈরীসহ দুগ্ধ উৎপাদনে অগ্রনী ভুমিকা রাখবে।