হাসান আহমদ,
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার খুরমা দক্ষিন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আ.লীগ শত্রু আ.লীগ। এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ভোটের যুদ্ধে মাঠে নেমে প্রচার প্রচারনা করছেন ৬ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে বেশীভাগ আ.লীগ দলীয় নেতাকর্মীরা চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। আ.লীগ স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ইউনিয়নের দলীয় প্রার্থীতা ঘোষণার পর স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহীরাও জোর প্রচার প্রচারনা অব্যাহত রেখেছেন।
এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির (নৌকা), ইউনিয়ন আ.লীগ (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আবু বকর সিদ্দিক (বিদ্রোহী), সাধারন সম্পাদক আব্দুল খালিক (বিদ্রোহী), উপজেলা যুবলীগের যুগ্মসাধারন সম্পাদক জয়নাল আবেদীন (বিদ্রোহী), আবুল কাশেম হাসান (বিদ্রোহী), গোলাম আজম তালুকদার নেহার (বিদ্রোহী।
তবে তিন বারের নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মছবির এর বিরুদ্ধে কাবিকা, টিআর, জন্মসনদ, বিধবাভাতা, বয়স্কভাতাসহ নানা অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ করছেন আ.লীগ বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদে (স্বতন্ত্র) প্রার্থী আব্দুল খালিক। এসব দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ তোলে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
জানা যায়, দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের মধ্যে সিংহভাগই সরকার দলীয়। অনেকেই দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। ইউনিয়নের হাট বাজার, গ্রাম, পাড়া মহল্লায় নির্বাচনী আমেজ এখন তুঙ্গে। চেয়ারম্যান পদে আ.লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বিরকে নিয়ে দলীয় তৃণমুল কর্মীদের নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে নিয়ে নিজেদের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন তৃণমুল নেতা-কর্মীরা। কিন্ত প্রার্থীরাও আগে পরের চিন্তাভাবনা না করে যে যার মতো করে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছিটাচ্ছেন। এদিকে আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা সবাই জয়ী হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তারা গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সাধারণ মানুষের সমর্থন আদায়ে দিনরাত প্রচারণা চালাচ্ছেন। পোষ্টার লিফলেট এর মাধ্যমেও চলছে ব্যাপক প্রচার-প্রচারনা।
১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। আ.লীগ ঘরের শত্রু আ.লীগ আর এই সুযোগে সুবিধাজনক অবস্থান খোঁজছেন দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীরা। সব মিলিয়ে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খুরমা দক্ষিন ইউনিয়নে প্রতিটি মানুষের মাঝে বিরাজ করছে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা। নির্বাচনের সাফল্য ঘরে তুলতে আ.লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা আপ্রাণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একক প্রার্থী দিতে পারলেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের টেকানোর ব্যাবস্থা না করায় নৌকার ভরাডুবির আশংকা করছেন তৃণমুলকর্মীরা। আর এতে করে নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীক ও আ.লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। ভোটাররা জানান, আ.লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী সক্রিয় থাকায় তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক স্থানে রয়েছেন সাবেক ইউপি সদস্য ইউনিয়ন আ.লীগ (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক (বিদ্রোহী)। তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মছবিরে সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
আ.লীগ দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আ.লীগ প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে কাজ করছে আ.লীগ। এতে আসছে ১১ নভেম্বর নির্বাচনে ভোট দেয়া নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। তবে তৃণমুলকর্মীরা বলেছেন, বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির এর বিরুদ্ধে কাবিকা, টিআর, জন্মসনদ, বিধবাভাতা, বয়স্কভাতাসহ নানা অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ থাকার পরও পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় বিস্ফোরক প্রচারনার সুযোগ পেয়েছেন বিদ্রাহী প্রার্থীরা। এই দ্বিধাবিভক্তির কারনে এই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী আবু বকর সিদ্দিক জয়ী হতে পারেন। নির্বাচনের দিন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন ভোটাররা।
এ বিষয়ে জানতে খুরমা দক্ষিন ইউনিয়নে আ.লীগ দলীয় (নৌকা প্রতীক) চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ইউনিয়নের বাইরে এক আত্মীয়ের বাড়ীতে আছি, আমাকে পাবেননা।
ইউনিয়ন আ.লীগ (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আবু বকর সিদ্দিক (বিদ্রোহী) প্রার্থী বলেন, জনসেবাকে ইবাদত মনে করি। আমি আমৃত্যু জনগণের পাশে থেকে সেবা করতে চাই। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ চলার সময়ে মানুষের যে ভালোবাসা এবং সমর্থন পেয়েছি, আমি সত্যিই আপ্লুত। জনপ্রতিনিধি হলে ব্যাপক পরিসরে মানুষের সেবা করার সুযোগ রয়েছে। ইউনিয়নবাসী আমাকে সেই সুযোগ দিলে আমি সেবক হয়ে কাজ করতে চাই। তিনি আরো বলেন, মুসলিম, হিন্দু সকল ধর্মের মানুষ আমাকে যেভাবে কাছে টেনে নিয়েছেন আপন জনের মত, তাতে বোঝা আরো ভারী হয়েছে। আমৃত্যু মানুষের কাছে থেকে এই ঋণের বোঝা কিছুটা হালকা করার সুযোগ চাই।
ইউনিয়ন আ.লীগ সাধারন সম্পাদক ও (বিদ্রোহী) প্রার্থী আব্দুল খালিক বলেন, স্থানীয় সরকারের যে উন্নয়ন রয়েছে আমাদের ইউনিয়নে তার সুষম বন্ঠন হয়নি। ব্যাপক বৈষম্য করা হয়েছে। এছাড়াও বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তনাধিন রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি সাংগঠনিকভাবে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে অবহিত করেছি। এর পরও তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এসব অনিয়ম ও লুটপাটের বিরুদ্ধে সাধারন মানুষ ফুসে উঠেছে। তাই ইউনিয়নবাসী তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
যুবলীগ নেতা ও (বিদ্রোহী) প্রার্থী জয়নাল আবেদীন এবং আবুল কাশেম হাসান এর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে বক্তব্য দেয়নি।
আসছে ১১ নভেম্বর অনুষ্টিত হবে খুরমা দক্ষিন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ১০টি কেন্দ্রের ৪৯টি বুথ কেন্দ্র্র প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে ১৬ হাজার ৬শত ৩২ জন পুরুষ, ৮হাজার ৪শত ৮৫ জন মহিলা ভোটার রয়েছেন।