রফিকুল ইসলাম জসিম :
প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারীর অধিকার’ প্রতিপাদ্যে প্রতি বছরের মতো চলতি বছরও দেশ জুড়ে আজ ৮ মার্চ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর অধিকার বাস্তবায়নে ১৯৭৫ সাল থেকে বিশ্ব ব্যাপী দিবসটি পালন করা হচ্ছে যথাযথ মর্যাদায়। নারীদের ওপর হওয়া বৈষম্য, নির্যাতনের বিরুদ্ধে করা প্রতিবাদে নারীদের জাগ্রত করাই নারী দিবস পালনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ৷ নারীদের জন্য নিবেদিত একটা গোটা দিন৷ এই দিনটিকে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে বিশ্বজুড়ে চিহ্নিত করা হয়। নারী দিবস নিয়ে নারীর সমান অধিকার নিয়ে বিশেষ এই দিবসে এদেশের প্রান্তিক নৃগোষ্ঠী নারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন.. রফিকুল ইসলাম জসিম……
মানবজন্ম থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে নারীর প্রয়োজন।- চিত্র শিল্পী কনক চাঁপা চাকমা।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রখ্যাত চাকমা চিত্রশিল্পী কনক চাঁপা চাকমা বলেন, ‘সমাজ, রাষ্ট্র নারীদের অবহেলা করে। কিন্তু বাস্তবে নারী ছাড়া পৃথিবী চলতে পারে না। মানবজন্ম থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে নারীর প্রয়োজন। সমাজ, সংসারে একজন নারীর অনেক ভূমিকা।
প্রখ্যাত এই চিত্রশিল্পী মনে করেন, নারীর অস্তিত্ব থাকবে, তা কখনই বিলীন হবে না। আজকে নারীরা এগিয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে এখনো অনেক নারী পিছিয়ে আছে। ২০২০ সালে আমার একটাই প্রত্যাশা—সবদিক থেকে নারী যেন তার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারে। সব ব্যথা, যন্ত্রণা থেকে যেন মুক্তি পায়।’
চা শ্রমিক নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট থাকব, গীতা রানী কানু :
বাংলাদেশ চা শ্রমিক নারী ফোরাম প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গীতা রানী কানু বলেন,
এ দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে এই পরিশ্রমী নারীরা এক বিরাট ভূমিকা পালন করছেন, অথচ তাদের ভাগ্যের উন্নতির জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে নারী সমাজের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও নারী চা শ্রমিকের ভাগ্য উন্নয়নে কেউ এগিয়ে আসছে না। এমনকি নারী সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানেও এই নারীরা কোনো সেবা পাচ্ছেন না।
চা শ্রমিকের এই নেত্রীর আরো বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও উপেক্ষিত হচ্ছেন আমাদের নারী চা শ্রমিকরা। বিশ্বব্যাপী নারী সমাজের উন্নয়নে যেসব আইন-নীতি, উন্নয়ন-পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয় তাতে আমাদের নারী চা শ্রমিকরা স্থান পান না।
নারী অধিকার নিশ্চিত হলে নারীরা সকল ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যাবে। – লেখিকা রওশন আরা বাঁশি
মণিপুরি মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রথম মহিলা লেখিকা রওশন আরা বাঁশি বলেন, নারী দিবসের গুরুত্ব অনেক। আন্তর্জাতিক নারী দিবস আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় কেন নারী দিবসের প্রয়োজন হয়েছিলো। নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা সামাজিক সকল বিষয়ে গুরুত্ব পায়।
মণিপুরি এই লেখিকা মনে করেন, ৩৬৫ দিনে একদিন নারীদের নিয়ে চিন্তা চেতনা আলোচনা মন্দ নয়। যদিও আমি সম অধিকারে বিশ্বাসী। দিবসটি নিয়ে আমার কাছে দ্বিমত নেই অবশ্যই দিবসটির গুরুত্ব আছে।নারী অধিকার নিশ্চিত হলে নারীরা সকল ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যাবে।
নারী দিবসটির তাৎপর্য কোন নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষার্থী কৃষ্ণা শর্ম্মা
কমলগঞ্জ সরকারি কলেজে মণিপুরি শিক্ষার্থী
কৃষ্ণা শর্ম্মা বলেন, নারী দিবসটির তাৎপর্য কোন নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কর্মক্ষেত্রে বঞ্চিত নারীদের ন্যায্য দাবি হরণের যে করুণ আখ্যান তা থেকে যদি তারা বেরিয়ে আসতে না পারে সে দিনটির মূল বৈশিষ্ট্য কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটা ভাবাও বোধ হয় সময়ের দাবি।
এই শিক্ষার্থী মনে করেন, শুধু ৮ মার্চের মধ্যে দিনটির গুরুত্ব আটকে রাখলে দিবসটি তার মর্যাদা হারাতে পারে। প্রতিদিনের কর্মযোগে নারীরা যতক্ষণ না তার যথার্থ অধিকার এবং মর্যাদা অর্জন করতে পারবে সেই অবধি দিবসটির তাৎপর্য সত্যিকার অর্থে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে।
আমরা নারী দিবস পালন করি সমঅধিকারের দাবীতে নারীদের অর্জনের স্বীকৃতি, সংগ্রামের ঐতিহ্যকে স্মরণ করা এবং নারী পুরুষের সমঅধিকার প্রচেষ্টায় আগামীতে করনীয় নির্ধারণ করা।এ সকল নির্ধারণে সবার আগে প্রয়োজন নারী দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে জানা।