রাকিবুল আওয়াল পাপুল, শেরপুর প্রতিনিধিঃ
দারিদ্র্যতা আর নানা প্রতিকুল পরিবেশ কোনটাই অধম্য দুই যুবকের অগ্রগতিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কেকের চর ইউনিয়নের ভাটি লঙ্গরপাড়ার দুই দরিদ্র পরিবারের সন্তান শামীম ও আল আমিন। তারা দুজনই হয়েছেন ৪১তম বিসিএস ক্যাডার। তাদের দুজনের বাবাই প্রান্তিক বর্গাচাষী। এতে গর্বিত তাদের পরিবার ও এলাকাবাসী।
শ্রীবরদী উপজেলার কেকের চর ইউনিয়নের ভাটি লঙ্গরপাড়া গ্রামের প্রান্তিক বর্গাচাষি আ: কুদ্দুস ও হোসনে আরা দম্পতির ছেলে শামীম মিয়া। বর্তমান ডিজিটাল যুগেও শামীমের মা হোসনে আরা বেগম লাকড়ি ও শুকনো পাতা দিয়ে রান্না করেন। তাদের পরিবারের অবস্থা দেখে বুঝার উপায় নেই, সদ্য ঘোষিত ৪১তম বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি তাদের ঘর। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন। খুব কষ্ট করে বড় ছেলে শামীমসহ তিন ছেলেকে লেখা পড়া করিয়েছেন। কষ্টগুলো একদিন ঘুচে যাবে বলে স্বপ্ন দেখেছেন। অবশেষে সেই স্বপ্ন আজ পুরণ হয়েছে। এখন তারা বিসিএস ক্যাডারের বাবা-মা। তার বড় ছেলে শামীম মিয়া ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
একই এলাকার আল আমিন দিনমজুর বকুল আহমেদ একজন দিনমজুর, মা অর্ধ পাগল। তার দাদা মৃত চান মিয়া (দফাদার) বেঁচে থাকাকালীন বড় নাতি আল আমিনকে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে আর তার ছোট ভাই মনিরকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। আল আমিনের মেধা দেখে দাদা তাকে বড় অফিসার বানানোর স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু সেও অসময়ে মারা যায়। অসহায় হয়ে পড়ে আল আমীন। এরপরে নানা প্রতিকুল পরিবেশে লেখাপড়া করে। এত দরিদ্রতার মধ্যেও হাল ছাড়েনি আল আমিন। লড়ে গেছেন জীবন সংগ্রামে। অবশেষে সেই স্বপ্ন আজ পুরণ হয়েছে। এখন তারা বিসিএস ক্যাডারের পরিবারের সদস্য। তার বড় ছেলে আল আমিন ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় কৃষি বিপনন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
খোজ নিয়ে জানা যায়, শামীম মিয়া ও মোঃ আল আমিন স্থানীয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে লেখাপড়া করে কৃতিত্বের সাথে পাস করে। শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে। পরে শামীম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করে। এরপর ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃষি বিপনন বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
আর আল আমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ কর। এরপর ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শিক্ষা বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
কথা হয় বিসিএস ক্যাডার শামীম ও তার পরিবারের লোকজনের সাথে।
শামীমের বাবা আ: কুদ্দুস বলেন, আমরা গরীব মানুষ। আমাদের ছোট সংসার। খুব কষ্ট করে বড় ছেলে শামীমসহ তিন ছেলেকে লেখা পড়া করাইছি। অভাবের সংসার আমার। আমার ছেলে খেয়ে না খেয়ে লেখাপড়া করেছে। আমার ছেলে বিসিএস চান্স পাইছে। আমার দেহ ডা আল্লাহ শান্তি করে দিছে।
মা হোসনে আরা বলেন, আমার তিনটা ছেলে খুব কষ্ট করে লেহাপড়া করছে। আল্লাহ আমার মনের আশা পুরণ করছে। আমি খুব খুশি।
বিসিএস ক্যাডার শামীম মিয়া বলেন, আমার এ চলার পথটা আসলেই মসৃণ ছিলো না। বলা যায় এটা আসলে বন্ধুর পথ। অনেক প্রতিকুল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করেই আজকের এই সাফল্যে এসেছি। আমার এ সাফল্যের পিছনে আসল কারিগর আমার বাবা ও মা। আমার সাফল্যটুকু তাদেরকে দিতে চাই।
কথা হয় বিসিএস ক্যাডার মোঃ আল আমিন ও তার পরিবারের লোকজনের সাথে।
আল আমীনের বাবা বকুল বলেন, আমরা পোলা খুব কষ্ট করছে। একবার খাইছে একবার খায় নাই। কিছু পাইছে কিছু পায় নাই। তাও লেখাপড়া কইরা গেছে। আমার পোলা বিসিএস এ টিকছে আমি এডার জন্য খুব খুশি।
চাচা চৌকিদার শাহজাহান বলেন, আজকে আল আমিন এ পর্যায়ে আসায় আমি গর্ববোধ করি ও খুব খুশি।
বিসিএস ক্যাডার মোঃ আল আমীন বলেন, আমার এ দীর্ঘ পথের যাত্রায় আমি অনেক মানুষের কাছে চির কৃতজ্ঞ চির ঋণী। আমার পরিবারের পাশাপাশি অনেক মানুষ আমাকে সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
একই গ্রামের অতি দরিদ্র পরিবারের দুই জনের এমন সাফল্যে খুশি স্থানীয়রা।
স্থানীয় সামছুল বলেন, অনেক প্রতিকুলতার মধ্যে লেখাপড়া করেও আমাদের এলাকার দুজন বিসিএস ক্যাডার হওয়ায় আমরা গর্বিত৷ মেধার মাধ্যমেই যে সব সম্ভব তা আবার প্রমানিত।
স্থানীয় খোকন বলেন, গ্রামের মানুষের ধারণা টাকা না হলে বড় অফিসার হওয়া যায় না, চাকরিও পাওয়া যায় না। কিন্তু এ দুই যুবকের সাফল্যে এ ধারণা পাল্টে গেছে।