রফিকুল ইসলাম জসিম :
তৃণমূল সাংবাদিকতায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড গুণী সম্মাননা পেয়েছেন মৌলভীবাজার জেলার তৃণমূল সাংবাদিকতার প্রাণপুরুষ গবেষক আহমদ সিরাজ। গুণী সম্মাননা পাওয়া সারাদেশের ৬৪ জন সাংবাদিকের মধ্যে তিনি একজন।
সোমবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আসিসিবি) মিলনায়তনে এক জমকালো অনুষ্ঠানে তার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। এমন বিরল সম্মানে ভূষিত করায় বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী এই নিভৃতচারী মানুষটি আজ অভিভূত। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে গবেষক আহমদ সিরাজ বলেছেন, প্রায় চল্লিশ বছর ধরে সাংবাদিকতা ও এই ঘরানার কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও একটি বৃহৎ পরিসরে জাতীয় অঙ্গন থেকে এমন সম্মাননার গৌরব লাভে সত্যিই চমকিত।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এমপি, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম, জুরিবোর্ড প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ক সায়েম সোবহান আনভীর। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ‘বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ দেওয়া হয়েছে ১১ জন অনুসন্ধানী সাংবাদিককে। মৌলভীবাজার জেলার একমাত্র প্রবীন সাংবাদিক হিসাবে আহমদ সিরাজ গুনী সম্মাননায় ভূষিত হন। অনুষ্টানে উনা কে ১ লাখ টাকার চেক, ক্রেষ্ট ও উত্তরীয় প্রদান করা হয়।
চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও চিত্রনায়িকা বুবলির সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ সংসদ সদস্য, বুদ্ধিজীবী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা ও আমন্ত্রিত অতিথিরা।
উল্লেখ্য, ত্যাগী নিভৃতচারীর কর্মমুখর জীবন আহমদ সিরাজ ১৯৫৬ সালের ১ মার্চ বর্তমান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শ্রীনাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাতা তমিলা খাতুন ও বাবা মৃত চান মিয়া চৌধুরী। ছোটবেলা থেকেই প্রবল ঝোঁক ছিল বই পড়ায়। সেই থেকে নেশায় পায় লেখালেখি ও সাংবাদিকতা।
কলেজে ভর্তি হয়েই তিনি ‘শুকতারা’ নামে দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯৭৬ সালে সিলেটের মর্যাদাশীল যুগভেরী পত্রিকায় প্রথম লেখা প্রকাশ হয়। এছাড়া সিলেট সমাচার, সিলেট কন্ঠসহ একাধিক পত্রিকায় লিখতে থাকেন তিনি। বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনেও নিরন্তর লিখে চলেন। জাতীয় দৈনিক সংবাদ-এর নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে ৫ বছর কাজ করেন আহমদ সিরাজ। এছাড়া দৈনিক প্রথম আলো,কালের কন্ঠ, সমকাল এবং এককালের স্বনামধন্য বাংলাবাজার পত্রিকায়ও ফিচার-নিবন্ধ ছাপা হয়েছে । একসময় তিনি শিক্ষকতা করেন এবং পরে কমলগঞ্জ সরকারী গণ মহাবিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার হিসেবে যোগ দিয়ে ২০১৬ সালে অবসর নেন। বর্তমানে তিনি আম্বিয়া কে,জি স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি দায়িত্ব পালন করছেন।
তৃণমূল সাংবাদিকতার পাশাপাশি এই কর্মপাগল মানুষটি নানান সংগঠন গড়ে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকণ্ডে নেতৃত্ব দানকারী, স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর ১২টি ভাষার সমন্বিত ভাষা উৎসব উদযাপন করেছেন ২০১৮ সালে। তিনি বইও লিখেছেন বেশ কয়েকটি। যেমন : ফকির ইয়াছিন শাহ ও তাঁর সাধনতত্ত্ব, সুরমা থেকে সাগরে, আদিবাসী জাতপাত সমাজ ও সংস্কৃতি, বাঙালী বৃদ্ধিজীবীর দায়, ভানুবিলের কৃষক বিদ্রোহ ও অন্যান্য, ভাষা সংগ্রামী মোহাম্মদ ইলিয়াস-এর জীবন ও কর্ম, ভাবনার প্রজাপতি, লোকসংস্কৃতি মৌলভীবাজার জেলা (সংগ্রাহক গ্রন্থ)। এছাড়া ‘দিলওয়ার’সহ একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনার পাশাপাশি এশিয়াটিক সোসায়টির গবেষণাপত্র, বাংলা একাডেমীর লোকসংস্কৃতি সংগ্রাহক হিসেবে পাণ্ডুলিপি প্রণয়নসহ বহুমুখী সৃজনশীল ও মননশীল কাজ করেছেন এবং এখনও করে চলেছেন নিভৃতচারী এই গুণী মানুষটি।
তৃণমূল সাংবাদিকতায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড লাভ করায় প্রবীণ সাংবাদিক আহমেদ সিরাজকে মৌলভীবাজার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানানো হয়েছে।