নিজস্ব সংবাদদাতা
সৈয়দ শহীদ, দূরবীন ব্যান্ডের ভোকালিস্ট। যার গান মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে খুব সহজে। যিনি প্রচার বিমুখ, কাজ করেন নীরবে। ব্যবসা, গান আর মানবিক কাজ নিয়েই কণ্ঠ শিল্পী শহীদের পথচলা। তিনি এবার নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন নিজের স্বপ্নের কথা, জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার কথা। শিল্পী শহীদের নিজের টাইমলাইনে শেয়ার করা লেখাটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
আজকে পুরনো অনেক খবরে কাগজ কাটিং পেলাম। আমার গান নিয়ে অনেক গল্প। আজকে তবে আমার আসল গল্প লিখলাম…একজন সপ্নবাজ কামলার গল্প
১৯৯৬ সালে মাত্র গ্রাজুয়েশন শেষ করেছি, একদিন বড় ভাই বল্লেন মাস্টার্স করার পাশাপাশি বাসায় বসে না থেকে ফ্যাক্টরীতে প্রোডাকশনের কাজ শিখতে। বলা মাত্র শুরু করে দিলাম। চট্টগ্রামের সানজি টেক্সটাইলে আগুন পানি আর সুতার সামনে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকা। আমার এখনো মনে পড়ে, সেসময় বড় ভাই যদি আমাকে চেয়ারে বসা দেখতেন, খুব রাগ করতেন। তখন আমার খুব মন খারাপ হত, এখন আমি বুঝি কেন…(?)
তারপর ঢাকায় এসে (এম বি এ) শুরু করি আর পাশাপাশি অফিসে বসি, বড় ভাই বললেন এমব্রয়ডারি সুতার মার্কেটিং করা যায় কিনা দেখতে। শুরু করে দিলাম দৌঁড়াতে… ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বাহন ছিলো বাস, টু স্ট্রোক আর রিক্সা। অনেক চড়াই উতড়াই পেরিয়ে এখন “ওয়েল এমব্রয়ডারি সুতা ” বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান সুতা।
তারপর শুরু হয় নতুন যাত্রা গার্মেন্টস এক্সেসরিস নিয়ে। গাজীপুর নতুন বিল্ডিং তৈরির কাজ শুরু হলো , নতুন চ্যালেঞ্জ, নতুন উত্তেজনা… কিছুই বুঝিনা, কিন্তু স্বপ্ন অবারিত। খাওয়া নেই, দাওয়া নেই, সুধু সপ্ন দেখা, তখন গাজীপুরের এই এলাকার আশেপাশে কোন খাওয়ার দোকান ছিলোনা। ফ্যাক্টরী চালু হল, নতুন মেশিন নতুন প্রোডাক্ট সব কিছুর সাথে আন্ডারস্ট্যান্ডিং হচ্ছিলো না। আমি ফ্রাস্ট্রেটেড হলাম। এতো সবের মাঝে ভালো লাগার মত ছিলো গান, আমি কেমন জানি গানের নেশায় চলে গেলাম।গান ছাড়া কিছু বুঝতামনা। ফলে ফ্যাক্টরী বন্ধ হওয়ার দ্বার প্রান্তে। এ অবস্থায় নিজেকে ঠিক করে গোছাতে চেস্টা করলাম, ২০১৩ থেকে আবারও শুরু করলাম। প্রথমে ফ্যাক্টরী ছিলো একতলা ভবন, জায়গা ছিলোনা, কমপ্লাইন্স ঠিক মত পালন করা কঠিন ছিলো।এরিমধ্যে “ওয়েল ফুড” ঢাকায় একই বিল্ডিংয়ে যাত্রা শুরু করেছে। গার্মেন্টস এক্সেসরিসের অর্ডার বাড়তে লাগলো কিন্তু মেশিন আর জায়গার দরকার। সে সময়ে বড় ভাইয়েরা সিদ্ধান্ত নিলো নতুন বিল্ডিং আরো নতুন মেশিন। আবার নতুন বিল্ডিং নতুন স্বপ্ন, সারাদিন আর ঘুমের মধ্যেও দেখতাম কোন মেশিন কোথায় বসাবো। নতুন বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ, ইঞ্জিনিয়ারের পাশাপাশি আমিও মেশিন বসানোর কাজে লেগে গেলাম। প্রতিটি মেশিন নিজে চালালাম, তাতে আমার লাভই হলো বেশী। আমার সপ্ন ছিলো যাতে বিদেশি বায়াররা বলে বাংলাদেশেও উন্নত মানের গার্মেন্টস বেকোয়ার্ড এক্সেসরিস ফ্যাক্টরী আছে। আমাদের “ওয়েল এক্সেসরিস” এখন বিশ্বের অন্যতম।
আমি যাদের কাছে ঋনি বড় ভাই আব্দুস সালাম, মেজ ভাই নুরুল ইসলাম, সেজ ভাই কমু।
বড় ভাই আমাকে শিখিয়েছেন কিভাবে ধৈর্য ধরতে হয়, কিভাবে কাজ করিয়ে নেয়া যায়,শুদ্ধ পরিকল্পনা করা।
মেজ ভাই শিখিয়েছেন কিভাবে মার্কেটিং করতে হয়।
সেজ ভাই শিখিয়েছেন কিভাবে প্রোডাকশন এবং তার সাথে জড়িত সব কিছু মেনেজ করা যায়।
আমি কৃতজ্ঞ পরিবারের সকল সদস্যদের কাছে, কৃতজ্ঞ ওয়েল গ্রুপের সকল কর্মকর্তাদের কাছে।