নেত্রকোনা প্রতিনিধি
ঈদুল আজহার আজ (২৫ জুলাই ২০২১ ইং) ৫ম দিন অতিবাহিত হলেও একটুকরো গোশত খেতে পাননি শতবর্ষ বয়সী অসহায় একবৃদ্ধা মা। স্বামীহারা বিধবা এই মায়ের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার খালিশাপাড়া গ্রামে। তাঁর নাম আদরজান বেগম। দুইসন্তানের জননী শতবর্ষী এই মহিলাটি জন্মসূত্রে এই এলাকার অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হলেও নিজ সন্তানদের অবহেলা ও অবজ্ঞায় বর্তমানে অত্যন্ত দুঃসহ ও বেদনাবিধুর জীবন যাপন করতেছেন।
সরেজমিনে বৃদ্ধাকে দেখতে গেলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, অনেক কষ্টে দুই ছেলেকে বড় করেছিলাম। আজ ঈদের পাঁচদিন হলো, তাও একটুকরো কুরবানির মাংস খেতে পেলাম না। এমন কুসন্তান যেনো আর কোনো মায়ের গর্ভে জন্ম না হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওনার দুই সন্তান হলো একই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদির ও আব্দুল সালাম। তাদের পিতা মৃত রহেদ আলী ছিলেন আদরজানের পিতা আলীম মন্ডলের বাড়িতে ঘরজামাই।
পিতা আলীম মন্ডল থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া আদরজান বেগমের জমিজমাসহ সমস্ত সম্পত্তির ভোগদখল করছেন তার দুই পুত্র আব্দুল কাদির ও আব্দুল সালাম। নিজ সন্তান, পুত্রবধূ, নাতি-পুতিদের অনাদর আর অবহেলার শিকার হয়ে আজ পনেরো ষোলো বছর বছর যাবত তিনি দরিদ্র ভাগ্নী নাসিমা বেগমের সাথে বসবাস করছেন।
নাসিমা বেগম জানান, আমার খালা আদরজান বেগম বর্তমানে চোখে দেখে না। ডাক্তার বলেছিলো অপারেশন করালে চোখ ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু আমার খালাতো ভাইয়েরা এব্যাপারে একদম বেখেয়ালি। অথচ আমার নানারবাড়ি থেকে ওয়ারিশসূত্রে পাওয়া আমার খালার সমস্ত সম্পত্তি কাদির-সালাম কৌশলে আত্মসাৎ করেছেন। আমার খালুর কোন সম্পত্তি ছিলো না। তিনি ছিলেন ঘরজামাই। আজ আমার খালাতো ভাইয়েরা যে জমির উপর বসবাস করতেছে, যে সম্পত্তি ভোগ করতেছে সবই আমার খালার। এতো জমিজিরাতের মালিক হয়েও আমার খালা বর্তমানে খুব কষ্টে আছে। আদরজান বেগমের বোন আয়েশা বেগম জানান, কপাল দোষে আমার বোনের এই অবস্থা। এমন কুসন্তানের জন্ম যেনো আর কোনো মায়ের পেটে না হয়।
এব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল লতিফ বলেন, এই বৃদ্ধা মহিলার দুরবস্থা দেখে আমি বয়স্ক ভাতার বন্দোবস্ত করে দিই। ভাগ্নি নাসিমা বেগমের দাবি, বয়ষ্ক ভাতার টাকাও ওনার খালাতোভাই ও ভাতিজারা আত্মসাৎ করেন। আদরজান বেগম বলেন, তাঁর দুইছেলে ভরণপোষণের দায়িত্ব মুখেমুখে ছয়মাস করে ভাগ করে নিলেও পর্যাপ্ত খাবারটাই তিনি পাচ্ছেন না।তিনি মরে গেলেই যেনো তারা উদ্ধার হয়।
তার সেবাযত্নকারী দরিদ্র ভাগ্নী নাসিমা বেগমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি কেঁদে ফেলেন।