বিশেষ প্রতিবেদনঃ
করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষের উপরে। এই অবস্থায় তাদের জীবন যাত্রার ব্যয় নির্বাহ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। করোনার আশঙ্কায় মানুষের স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে ফুটপাথের ব্যবসায়ী, চা দোকানদার, রিকশাওয়ালা এবং দিন মজুরদের জীবন যাত্রায়।
খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ এখন বাহিরে কম বের হওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে ফুটপাথের ব্যবসায়ী এবং রিকশা চালকরা। গণপরিবহন শ্রমিকরাও আছে অস্বস্তিতে। সাপ্তাহিক সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় অন্যান্য সময়ে শনিবারে ক্রেতা সাধারণের চাপ থাকতো মারাত্নক রকমের ফুটপাথের অস্থায়ী দোকানগুলোতে। কিন্তু এর উল্টোচিত্র দেখা গেলো আজকে।
ঢাকা শহরের রিকশাওয়ালারা যখন একটু বিশ্রাম নেয়ার ফুরসত পান না সেখানে আজ তারা যাত্রী ডেকে ডেকে হয়রান। আকবর আলী নামে একজন বয়স্ক রিকশাওয়ালার সাথে কথা বলে জানা গেলো, করোনার আশঙ্কায় মানুষ এখন আর রাস্তায় বের হয় না, তাই তাদের রোজগার একদমই ভালো না। দুপুর ১টা পর্যন্ত মাত্র তিনজন যাত্রী পরিবহন করেছেন বলেও জানান। এসময় অন্যান্য রিকশাওয়ালাদের যাত্রীর আশায় বসে থাকতে দেখা যায়।
গুলিস্তান থেকে পল্টন মোড়ের ভাড়া যেখানে সাধারণ দিনে ৪০ টাকা সেখানে আজকে ৩০ টাকায়ও যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেলো এক রিকশাওয়ালাকে। তিনি বললেন, যাত্রী চাপ কম থাকায় রিকশার মালিককে ভাড়া দেয়ার তাগিদে কম টাকায় যেতে হচ্ছে। রিকশা মালিককে দৈনিক ভাড়া দেয়ার পরে যা থাকবে তা দিয়ে তার পরিবারের জন্য বাজার করবেন বলেও জানালেন।
করোনা ভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবের সময়কালে এক শ্রেনির অসাধু ব্যবসায়ী তৈরি করেছে পণ্যে কৃত্রিম সংকট। করোনার চেয়ে দেশে অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্মই যেনো দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের এমন অস্বাভাবিক অবস্থার শিকার এমনই এক শ্রমজীবি রিকশাচালক কান্না জড়িত কণ্ঠে আক্ষেপে বলে ফেলেছেন—
“আমি করোনায় মরবো না আমি মরবো খিদায়। কারন এখন রাস্তায় মানুষ বের হয় কম সারাদিনে আমি যে টাকা রিকশা চালিয়ে পাই তা দিয়ে চাল কিনতে পারবো না, পারবো না ডাল কিনতে, পারবো না আমার ছোট মেয়েটার জন্য ঔষধ কিনতে! আমাদের তো করোনা হবে না আমাদের হবে না খেয়ে থাকার রোগ।
এমনই জানা অজানা হাজারো শ্রমজীবি মানুষের খাবার কেনার সুযোগ হারিয়ে বেঁচে থাকার সংশয়ে আদরের অসুস্থ পরিবার নিয়ে রাত্রি যাপন হচ্ছে শুধু আমাদের একার গোটা দু’মাসের দ্রব্য কিনে ফ্রিজ কিংবা খাটের নিচে জমা করে রাখায়।
অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরতে পারলেই অদেখা করোনার ভাইরাসের ভয়ের মধ্যেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে শ্রমজীবী মানুষ।
এনভি/সৌদিপ/জবি/ঢাকা