সারা বাংলাদেশের মধ্যে আম শব্দ টি আসলেই চলে আসে ম্যাংগো সিটি আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাম। কারণ শিবগঞ্জের আদি চমচম যেমন শিবগঞ্জেই হয় ঠিক তেমনি গোপালভোগ, রিশেপাত, আশ্বিনা, ফজলি, আম চাঁপাইনবাবগঞ্জেই সর্বোউৎকৃষ্ট হয়। বিরাট একটা অংশের মানুষ আম কেন্দ্রিক নির্ভরশীল। পরম মমতায় আম গাছ ও ফল ফলিয়েই আমের রাজধানী খেতাবটা পেয়েছে এ জেলার মানুষ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনেক মানুষ কোন না কোন ভাবে আমকে পূঁজি করেই কোটিপতি হয়েছেন। কেউ নিজে বাগান কিনে, কেউ শেয়ার নেয়, কেউ গাছ বিক্রি করে দেয়, কেউ অধিক বছরের জন্য বাগান লিজও নিয়ে নেয়। মানুষ দিন দিন আম বাগান কেটে সাবাড় করছে আবার নতুন নতুন ভিন্ন বাগানও তৈরি করছেন। তবে বাগান তৈরি কমে গেছে।
শিবগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র গণমাধ্যম কর্মী আহসান হাবিব। কাজ করেন কালের কণ্ঠ ও এসএ টিভিতে। সাদা মনের মানুষ আহসান হাবিব আন্তর্জাতিক মানের প্যাকিং, আমের বিকল্প পণ্য উৎপাদন, ম্যাংগো প্রটেকশন ব্যাগ ব্যবসা, আমের ব্রান্ডিং সব কিছুতেই সবার চেয়ে আলাদা ছাপ রেখে চলেছেন। দেশে তো বটে বিদেশেও তার বাগানের আম এখন চলে যাচ্ছে। সরকারি বড় পৃষ্ঠ পোষাকতা পেলে আম বাগান তৈরিতে বিপ্লব ঘটাতে সম হবেন আহসান হাবিব। আর এসব কারনেই তাকে আম মানব হিসেবে চিনে অনেকেই।
তিনি জানান, আমের নানান বিষয় নিয়ে থেকেছি, আম উৎপাদনকারীদের সাথে সব সময় উঠাবসা করেছি। এ কারণেই মনে হয় আম বিষয়ে একটু বেশি জানা হয়েছে। এলাকায় আমাকে অনেকেই বলে আম মানব। আম মানব বলে ডাকে। ভালোই লাগে ডাকটি শুনতে।
আহসান হাবিব আরও জানান, আম নিয়ে যারা মিথ্যাচার ও নাটক করে, তসরুপ করে তাদের জিহ্বাটা টেনে ধরাটাও আমার কাজ এ জেলার সন্তান হিসেবে। বর্তমানে করোনা কালীন সময়েও আম ক্রেতা-বিক্রেতাদের কোন সমস্যা হচ্ছেনা। আপনারা দলবেঁধে সকল গুজবকে উড়িয়ে চলে আসুন বাণিজ্য ও আম খেতে আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
আম ব্যবসায়ীদের সহজে বাজারজাত ও সরবরাহে সহায়তার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভুল করেননি গণমাধ্যম কর্মী আহসান হাবিব।
আহসান হাবিব জানান, দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল গতানুগতিক না করে ভিন্ন কিছু করার। যেহেতু চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের জন্য বিখ্যাত। তাই আম নিয়ে কাজ শুরু করি। প্রথমত বড় গাছের একটি বাগান লীজ নেই। ফাঁকা জায়গা গুলোতে দামি আম গাছ রোপণ করি। প্রথম বছর তেমন ফলন ভাল হয়নি। তারপরও প্রায় ৫০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। পরের বছর আরও বেশি ফলন হয় ফলে লাধিক টাকা পেয়েছি। বর্তমানে যেগুলো আম রয়েছে সেগুলো থেকে প্রায় ১০ ল পাব মনে করছি। এখন ও আশপাশে বর্তমানে প্রায় পঞ্চাশ বিঘা জমিতে ম্যাংগো প্রজেক্ট করেছি। আরও বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।
আহসান হাবিব আরও বলেন, সাধারণ আম চাষীর আমের থেকে আমাদের আম স্বাদে ও গুনে ভিন্ন। কোন ক্রেতা একবার আম ক্রয় করলে, পরের বছর ৫ গুন বেশি আম ক্রয় করে থাকেন। শুধু তাই নয়, উনি আরও কয়েকগুন ক্রেতা পাঠিয়ে দেন আমার নিকট। এর বড় বিশেষত্ব হচ্ছে, পরিপূর্ণ পরিপক্ক না হলে আম নামায় না বা বিক্রি করিনা। শতভাগ নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও ফ্রুট ব্যাগিংকৃত আম, কোন প্রকার আঘাত ছাড়াই বোটাসহ নামাই এবং প্রতিটি আমে নিজ্বস্বদেও স্টিকার লাগিয়ে নিজস্ব পরিবহণে আন্তর্জাতিক মানের প্যাকেট করে সরবরাহ করে থাকি। এছাড়াও বাগানে জৈব সার ও জৈব বালাইনাসক ব্যবহার করে থাকি। যা স্বাস্থ্যর জন্য কোন পাশর্^প্রতিক্রিয়া হয় না। আমাদেও উৎপাদিত আম রপ্তানির সকল বিধিনিষেধ মেনে চলি।
কয়েকটিসহ প্রায় ৫০ বিঘার বাগান প্রকল্পে আম ধরা শুরু হয়েছে গত চার বছর থেকে। ৫ জুন থেকে আম বিক্রি শুরু হয়। এবার আম বিক্রি করে প্রায় ১০ লাখ টাকা পাব বলে আশা করছি।
গত বছর আমের মৌসুমে এ বাগান থেকে ৫ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছিলেন আহসান হাবিব। ব্যতিক্রম বাগান করে জনমনে তাক লাগিয়েছেন তিনি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাগান পরিদর্শনে আসেন বহু লোক এবং এমন বাগান তৈরির পরামর্শও নেন তার কাছ থেকে। এমনকি বিদেশী রাষ্ট্রদূতরাও বাগান পরিদর্শনে যান। বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন সকলেই।
আম ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যবছর থেকে এবছর আমের তুলনামূলক ফলন বেশি। চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুনের প্রথম সপ্তাহে লকডাউন থাকার কারণে বাইরে থেকে আম রপ্তানীকারক আম ক্রয় করতে তেমন আসেনি। এছাড়াও আম চাষীরা গাছ থেকে আমও নামাতে পারেনি। কারণ আম বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় ছিল। তবে গত তিন চার দিন থেকে কানসাট আম বাজারে ক্রয় বিক্রয় শুরু হয়েছে পুরোদমে।
আম চাষী আব্দুল আওয়াল জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর আমের দাম কম। গত বছর রিসাপাত আম ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকা ছিল। এবার ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। শুধু রিসাপাত নয়, গোপালভোগ, লখনা, গুটিরও দাম কম। তবে এবার গতবারের থেকে তুলনামূলক আমের ফলন বেশি হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে ২০১৬ তে ফজলি,ল্যাংড়া,হিমসাগর ও আম্রপালি প্যাকিং আম রপ্তানী হয় ১৮৬ মেট্রিক টন । ২০১৭ তে রপ্তানী হয় মাত্র ৫/৬ মেট্রিক টন,২০১৬ তে বেশীর ভাগ আম রপ্তানী হয়েছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে। এবারো প্রথম গত ৫ জুন প্রায় আড়াই মেট্রিক টন রিসাপাত আম সুইডেনে রপ্তানী করেছে আম চাষী আহসান হাবিব। আহসান হাবিব জানান আমরা বরাবরই নিরাপদ ও স্বাস্থ্য সম্মত অভম উৎপাদন করি এবং রপ্তানীর ১৮ টি বিধিনিষে মেনে আম উৎপাদন করে থাকি। এবার আন্তর্জাতিক মানের নিজস্ব প্যাকেট করে প্রতিটি আমে স্টিকার লাগিয়ে দেশে ও বিদেশে পাঠাচ্ছি।