মোস্তাকিন হোসেন,হিলি স্থলবন্দর সংবাদদাতা :
হাতে কাপড়ের ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে গাড়িতে (বাসে) উঠায়ে দিয়ে ছেলে ও ছেলের বউ বলে আর কোন দিন এই বাড়িতে আসবে না। সেই বৃদ্ধা মা শাকিলা বেগম (৮০) দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলি সি পি মোড়ে একজনের বাসার বারান্দায় আশ্রয় নেয়। পরে বিষয়টি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পরে প্রশাসনের নজরে আসে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আজ উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় তাঁকে “সাফল্যের গল্প শোনাবো ফাউন্ডেশন’ বৃদ্ধাশ্রমে রংপুরে পাঠানো হয়েছে।
রবিবার (২৩ জুলাই) বিকেল সাড়ে পাঁচটায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুর রেজা শাহীন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শ্যামল কুমার দাস, হাকিমপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সায়েম মিয়া, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মাসুদ রানা ও গণমাধ্যমকর্মী জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওই বৃদ্ধা মাকে রংপুর সাফল্যের গল্প শোনাবো ফাউন্ডেশন বৃদ্ধাশ্রমের নিজস্ব গাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.শ্যামল কুমার দাস জানান, নির্বাহী কর্মকর্তা সঙ্গে আলোচনা করেই ওই বৃদ্ধাকে গতকাল রাতে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে বৃদ্ধার বিষয়ে জানার পর আমি নিজেই মর্মাহত। আজ উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় তাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে তার শরীর অনেক দুর্বল।
হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আবু সায়েম মিয়া জানান, গত সাত দিন ধরে এক বৃদ্ধা গণমাধ্যম কর্মী রবিউল ইসলাম সুইট এর বারান্দায় আশ্রয় নেয়। পরে বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ ক্রমে গতকাল রাতে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ঢাকার কোন বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো মৌখিক সিদ্ধান্ত নেয়। পরে আমারা জানতে পারি আমাদের রংপুর মেট্রো পুলিশে কর্মরত এসআই রেজাউল করিম এর একটি সমাজসেবা কতৃক নিবন্ধনকৃত বৃদ্ধাশ্রম আছে। আজ সকলের পরামর্শ ক্রমে তার সাফল্যের গল্প শোনাবো ফাউন্ডেশন বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী জাহিদুল ইসলাম জাহিদ জানান, ওই বৃদ্ধা গত সাতদিন ধরে হিলি চেকপোস্ট রোডের একটি বাসার সামনে শুয়ে বসে কাটাচ্ছিলেন। গতকাল রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পরামর্শ ক্রমে তাকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। আজ তাকে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের ব্যবস্থাপনায় রংপুর বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো হয়েছে।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় জানান, আনুমানিক ৮০ বছর বয়সী সেই বৃদ্ধার বিষয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে গত শুক্রবার আমি জানতে পারি। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপরে আমি জেলা প্রশাসক দিনাজপুরকে অবগত করেছি। তাছাড়া বিষয়টি উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকেও আমি জানাই।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বৃদ্ধা দীর্ঘ সাত দিন থেকে একই জায়গায় খেয়ে না খেয়ে অবস্থান করছেন। তার শরীরের অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। তাই তাকে গতকাল রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে জেলা প্রশাসক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান’র সাথে পরামর্শ করে বৃদ্ধার দেখ ভালের জন্য বা যতদিন সঠিক ঠিকানা না পাওয়া যাচ্ছে ততদিন সমাজসেবা কতৃক নিবন্ধনকৃত বৃদ্ধাশ্রমে ওই বৃদ্ধাকে পাঠানো হয়েছে।
বৃদ্ধা মা শাকিলা বেগম (৮০) কে তার ছেলে এবং ছেলের বউ হাতে কাপড়ের ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে একটি গাড়িতে উঠিয়ে দেন এবং বলেন, আর কোন দিন এই বাড়িতে ফিরে আসবে না। কান্না স্বরে এইসব কথা বলেন বৃদ্ধা শাকিলা বেগম।
পুর্বের নিউজ :
বৃদ্ধা মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে ছেলে ও ছেলের বউ।