সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, এখন জনগণের প্রতিপক্ষ সরকার। নির্বাচন যাদের মাধ্যমে হবে তারাও সরকারের পক্ষে। সবকিছুই এখন সরকারদলীয় হয়ে গেছে। সরকার যখন পক্ষ হয় তখন অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন আর হয় না, বরং পক্ষপাতিত্ব হয়। সরকারি কর্মকর্তারা, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরাসরি সরকার দলীয় হিসেবে কাজ করে। এ জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যেমন সম্ভব নয়, তেমনি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডও সম্ভব নয়।
বৃহস্পকিবার (২ মার্চ) দুপুরে রংপুরের পল্লীনিবাসে শায়িত প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন জিএম কাদের।
স্বাধীন নাগরিকদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে একটা অনীহা দেখা দিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। রাষ্ট্রীয় সকল কাজকর্ম জনগণের ইচ্ছেমতো হবে, এটাই আমাদের প্রজাতন্ত্র বা গণতন্ত্র। কিন্তু জনগণের প্রতিনিধি যেভাবে প্রতিনিধিত্ব করবে, তা এখন আর হচ্ছে না। জনপ্রতিনিধি কথা মতো না চললে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাকে পরিবর্তন করবে। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় জনগণ এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। একারণে জনগণ এখন রাজনীতি ও নির্বাচন বিমুখ হয়েছে।
জিএম কাদের বলেন, দেশের মালিক জনগণ। কিন্তু যেভাবে বি-রাজনীতিকরণ চলছে তা দেশের জন্য কখনোই মঙ্গলজনক নয়। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের যে মূল চেতনা, তা এখন সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কারণ জনগণ এখন দেশের প্রকৃত মালিক নয়। সঠিক নির্বাচন যতদিন হবে না, ততদিন আমরা প্রজাতন্ত্রে বা গণতন্ত্রে আছি এটা বলা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের সংবিধান এবং ভারতের সংবিধানে মিল রয়েছে। কিন্তু ভারতের মতো আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারছি না। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। একারণে এখন জবাবদিহিতামূলক নির্বাচন হচ্ছে না। সার্বিকভাবে রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠান এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। সরকার সবকিছু নিজের কুক্ষিগত করে রেখেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতির কথা জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু এখন যে দেশের সার্বিক অবস্থা তা থেকে উত্তরণে সরকারকে আগে উদ্যোগ নিতে হবে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারের ইচ্ছা থাকতে হবে এবং সবাইকে নিয়ে বসে এর সমাধানও বের করতে হবে। কারণ এখন সরকারই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। একারণে সামনের দিকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনিশ্চিত। নির্বাচনের আগের পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে জাতীয় পার্টি সিদ্ধান্ত নিবে।
এসময় সাংবাদিকের এক প্রশ্নের উত্তরে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, জাতীয় পার্টি কোনো সুযোগ নেওয়ার রাজনীতি করে না। আমরা দেশ ও জনগণের জন্য রাজনীতি করছি। মানুষ এখনো জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। আমাদের প্রতি জনগণের সমর্থন রয়েছে। আর বিএনপি-আওয়ামী লীগ যেভাবে একে অপরকে কামড়াকামড়ি করছে, একারণে দেশের ৮০ ভাগ মানুষ এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কাকে ভোট দিবে। কাজেই এটি জাতীয় পার্টির জন্য একটা বড় সুযোগ। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে জনগণের প্রত্যাশার রাজনীতি করতে পারি, তাহলে ৮০ ভাগ মানুষের অনেকেই ভোট দিবে।
এ সময় দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান আদেল এমপি, রংপুর জেলা ও মহানগর জাপার সভাপতি রসিক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসীর, জেলার সদস্য সচিব হাজী আব্দুর রাজ্জাক, মহানগরের সহসভাপতি লোকমান হোসেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট মোকাম্মেল হক চৌধুরী মহানগর যুব সংহতির সভাপতি শাহিন হোসেন জাকির দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।