নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, আওয়ামী লীগের সকল গুম, খুন ও দুর্নীতির বিচার করতে হবে। আ’লীগের লুটেরা এখন কোথায়? যারা পুকুর চোর, সাগর চোরের সাথে জড়িত। মাঝেমধ্যে দুই একটা পাওয়া যায়। ধরা পড়ে। আপনারা অভিযানে নামেন। খুঁজে বের করেন। তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যাদের নির্দেশ ও প্ররোচনায় মায়ের বুক খালি হয়েছে, সবার বিচার এদেশের মাটিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগষ্ট) বিকেলে হোটেল শৈবালের জারা কনভেনশন হলে কক্সবাজার শহর জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হামিদুর রহমান আযাদ উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। শহর জামায়াতের আমীর আব্দুল্লাহ আল ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান ও কক্সবাজার জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা নূর আহমদ আনোয়ারী।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, শেখ হাসিনা পালানোর পর ভারতের বিভিন্ন মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এখানে মৌলবাদের উত্থান হয়েছে বলে সংবাদ করছে। এসব অপপ্রচারে আওয়ামী লীগের হাত রয়েছে। আমরা কি করেছি, ছাত্রজনতা কি করেছে দেশবাসী সাক্ষী। সকল সম্প্রদায়ের সম্পদ, মানইজ্জত রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। জামায়াতে ইসলামীর কাছে সবাই নিরাপদ।
হামিদুর রহমান আযাদ আরো বলেন, আগামীতে ভূ-রাজনীতি নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হতে যাচ্ছে, তার মোকাবেলায় জামায়াতের প্রতিটি কর্মীকে পাহারাদের ভূমিকা পালন করতে হবে। এক ইঞ্চি মাটিও কারো হাতে তুলে দিতে দেওয়া হবে না। দেশের পুনর্গঠন; স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
তিনি বলেন, গেল ৫ আগষ্ট পুলিশ, প্রশাসন দলীয় কর্মীর মতো ভূমিকা রাখলেও সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশে সুন্দর একটি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে, সেটি সবার প্রত্যাশা। তবে আমরা তাদের সময়সীমা বেঁধে দেইনি। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি র হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
আওয়ামী লীগের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে হামিদ আযাদ বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের সময় দুর্নীতির মহোৎসব হয়েছে। ১৮ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ রেখে পালিয়ে গিয়েছেন শেখ হাসিনা। মেগা প্রকল্পের নামে জনগণের মাথার উপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, ২০১৩ সালে ৫৭ জন মেধাবী ও চৌকস সেনা অফিসার হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছিল। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী বেঁচে থাকলে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধার সম্মুখীন হবে। তাই জঘন্য এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতাদের ফাঁসি দিয়ে আমাদেরকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এখন আওয়ামী লীগই নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।
শাহজাহান বলেন, আমরা অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে পারিনি। শেষ পর্যায়ে কোটা আন্দোলন ইস্যুতে মেধাবী শিক্ষার্থীরাই বাঘের মত গর্জে উঠে। যে আন্দোলন ১ দফা দাবিতে রূপ ধারণ করে। শেষ পর্যন্ত কঁচিকাঁচা মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতেই শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে। এসব শিক্ষার্থীরাই আগামীতে আশা আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা পালন করে করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন সকলকে ধন্যবাদ জানান মুহাম্মদ শাহজাহান। সেই সঙ্গে মুক্তির সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করেন।
দলীয় নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এই বিজয় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ নেয়ামত। এই নেয়ামত ভুলে গেলে চলবে না। সময়কে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
এ বিজয়ের জন্য মহান আল্লাহর কাছে সবসময় মাথানত করতে হবে। সব ধরণের বাড়াবাড়ি বন্ধ করে, অহংকারকে কবর দিয়ে বিনয়ী হতে হবে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া আহ্বান জানান জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান।
বিশেষ অতিথি বক্তব্যে জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, এই বিজয় চূড়ান্ত নয়। আমাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যমাত্রা আছে। বাংলাদেশে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র না করা পর্যন্ত আমাদের চূড়ান্ত বিজয় আসবে না। ছাত্রজনতাই আমাদের চূড়ান্ত বিজয়ের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে। রক্ত গরম, মাথা ঠান্ডা রেখেই কাজ করে যেতে হবে।
এবং ঘরে ঘরে জামায়াতের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান জেলা জামায়াতের আমীর।
শহর সেক্রেটারি রিয়াজ মু. শাকিলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, জাহেদুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি ও উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আবুল কালাম সিদ্দিকী, জেলা জামায়াতের আইন সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জাফরউল্লাহ ইসলামাবাদী, প্রচার সেক্রেটারি আল আমিন মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, কক্সবাজার সদর উপজেলা আমীর অধ্যাপক খোরশেদ আলম আনচারী, শহর জামায়াতের নায়েবে আমীর কফিল উদ্দিন চৌধুরী, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক ককসু ভিপি শহীদুল আলম বাহাদুর, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সেক্রেটারি মোঃ মহসিন, সদর জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মোস্তাক আহমদ, শহর সাংগঠনিক সেক্রেটারি দরবেশ আলী মোঃ আরমান, শহর কর্মপরিষদ সদস্য জাহেদুল ইসলাম নোমান, জেলা শিবির সভাপতি মুসা বিপ্লব, শহর সেক্রেটারি সালমান নূরী। কর্মী সম্মেলনের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করেন মাওলানা আব্দুর রশিদ।