‘শিক্ষা বাঁচলে বাঁচবে দেশ, দেশ বাঁচলে সমাজ বাঁচবে’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে এগিয়ে চলার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ বসবাসরত মনিপুরি মুসলমান সম্প্রদায়ের শিক্ষকদের সম্মিলিত সমাজিক শিক্ষা সহায়তা সংগঠন বাংলাদেশ মণিপুরী মুসলিম টিচার্স ফোরাম’র উদ্যোগে দ্বিতীয়তম উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ৩ সেপ্টেম্বর (শনিবার) মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জেম দক্ষিণ তিলকপুর গ্রামের চেরাগ উদ্দিন বাবু’র বাড়িতে “উঠান বৈঠক” অনুষ্ঠিত হয়৷ বৈঠকে মণিপুরী মুসলিম টিচার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ এর সঞ্চালনায় ফোরামের সভাপতি শাহাজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন মৌলভীবাজার জগৎসী স্কুল এন্ড কলেজ অবসর প্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ নুরুল ইসলাম।
বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জনাব বিলকিস বেগম, টিচার্স ফোরামের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মোঃ রসিদ উদ্দিন, ফোরামের উপদেষ্টা ও তেতইগাঁও রসিদ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল মতিন, বাংলাদেশ মণিপুরি মুসলিম ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (বামডো) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক। গ্রামবাসীর পক্ষে বক্তব্য রাখেন, ৭ নং আদমপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোঃ হেলাল উদ্দিন, বামডো’র কোষাধ্যক্ষ মোঃ নূর মোহাম্মদ, সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাফেজ শফিকুর রহমান ও মুরুব্বি চেরাগ উদ্দিন বাবু। বৈঠকে দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য রাখেন তেতইগাঁও রসিদ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও টির্চাস ফোরামের সহ সাধারণ সম্পাদক তমিজুর রহমান ইকবাল, ফোরামের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক হুমায়ুন রেজা সোহেল ও শিক্ষক আব্দুল আজিজ। এসময় উপস্থিত ছিলেন তেতইগাঁও রসিদ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কোষাধ্যক্ষ কামাল উদ্দিন, সহঃ প্রচার সম্পাদক বাহার উদ্দিন সহ শিক্ষক জহিরু ইসলাম প্রমুখ৷ এছাড়াও এলাকার বিজ্ঞ মুরুব্বীদের উপস্থিতে শিক্ষক অভিভাবক,শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্খীগণ মিলিত হয়ে সমাজের শিক্ষার মান কিভাবে আরও উন্নত করা যায় সে বিষয়ে দীর্ঘ আলাপ আলোচনা করেন।
টিচার্স ফোরামের শিক্ষকদের বক্তব্যে বক্তরা বলেন, আমরা চাই একজন শিক্ষক হিসেবে নিজেদের দায়বদ্ধতা ও অভিভাবক হিসেবে ছেলে মেয়েদের স্মার্ট ফোনের অপব্যবহার থেকে ফিরিয়ে এনে সুস্থ ও স্বাভাবিক শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেদের পড়াশোনা চালিয়ে আগামীর ভবিষ্যৎ জীবন যাতে পরিবার ও সমাজের কল্যাণময় হয় সেই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় টিচার্স ফোরাম এই উদ্যোগ। এসময় তারা জানান, মণিপুরি মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষা ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ের শিক্ষাবিমুখ শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির অপব্যবহার, মাদকাসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ স্বরুপ প্রতিটি গ্রামে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সচেতনতা মূলক “উঠান বৈঠক কার্যক্রম চলমান থাকবে। এবং কার্যক্রমে সমাজের সংশ্লিষ্ট সকালের সহযোগিতা কামনা করেন৷
বৈঠকে মণিপুরি মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষাবিস্তারে সামাজিক সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করা হয়। তা হলো-
শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার উদাসীনতা, স্মার্ট ফোনের অপব্যবহার, শিক্ষার্থীদের বাজারহাটে দলগত আড্ডা,শিক্ষার্থীরা পারিবারিক শিক্ষা গ্রহণ ব্যর্থ হাওয়া, বাবা মা অবিভাবকের অদক্ষতা ও অসর্তকতা, শিক্ষার্থীর হাতে দামি মোবাইল ফোন তুলে দেয়া। ফলে সময়ের ব্যবধানে মণিপুরী মুসলিমদের স্বাক্ষরতার হার এখন শতভাগ হলেও মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার হারও শতকরা আশির ওপরে। তবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল ভর্তির হার দিন দিন কমে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় অবিভাবকের প্রতি শিক্ষা বিস্তারে ফোরামের বিভিন্ন পদক্ষেপ সমূহ তুলে ধরেন৷
উল্লেখ্যঃ ২৫ ডিসেম্বর ২০১০সালে বাংলাদেশ মণিপুরি মুসলিম টিচার্স ফোরাম প্রতিষ্ঠাতা লাভ করেন৷ প্রতিষ্ঠাতা কাল থেকে মণিপুরি মুসলিম পাঙাল সম্প্রদায়ের এসএসসি পরীক্ষার শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিশেষ পাঠদান করে আসছে৷ প্রতিবছর মুসলিম টিচার্স ফোরামের পক্ষ থেকে গবিরমেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ প্রদান করে থাকেন। গত মাসের ৯ আগস্ট মণিপুরি মুসলিম টিচার্স ফোরাম এর উদ্যোগে শিক্ষা বিস্তারে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সচেতনতামূলক কেওয়ালীঘাট গ্রামের প্রথম উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷