– মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার
প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ জানতে না পারলেও জিনিয়া গত এক সপ্তাহে এটি জেনে গেছেন যে উপাচার্যের কাজ কী। একইভাবে সারা দেশের শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও সাধারণ মানুষও উপাচার্যের কাজ সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসির উদ্দিনকে দেখানোর চেষ্টা চালাচ্ছে সারা দেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
জিনিয়াকে উপাচার্যের ক্ষমতা দেখাতে এক সপ্তাহ সময় লাগলেও শিক্ষার্থীদের লেগেছে মাত্র কয়েক ঘন্টা। এক লাফে চৌদ্দটি দাবি মেনে নিয়ে নোটিশ জারি করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। নিজের পায়ের মাটি জোগাড় করতে উপাচার্য নাসির উদ্দিন উঠে পড়ে লেগেছেন। কীভাবে তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে মিনি টর্চার সেল গড়ে তুলেছেন তা এই ১৪ দাবি মেনে নেয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ কাজের একটি দুর্নীর্তি নিয়ে মেয়েটি সংবাদ করেছিলো, সেই ম্যুরালটির কাজ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। তিনটি সংবাদে উঠে এসেছিল, উপাচার্য নাসির উদ্দিন কীভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ক্ষমতার দাপটে দমিয়ে রেখেছিল। মিথ্যাচার করে পার পাওয়ার চেষ্টা করলেও তা আর সম্ভব হলো না। বিশ্ববিদ্যায়ের ভর্তি ১ শতাংশ কোটা নিজের জন্য সংরক্ষণ করে নিয়েছিলেন তিনি।
১৫ দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসা শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি বলে দিচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমিতে গড়ে ওঠা বিদ্যাপীঠের কালো অধ্যায়ের গল্প। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের অনিয়ম, সীমাহীন দুর্নীতি রুখতে আশা জাগিয়েছে এইসব নিপীড়িত শিক্ষকদের। নারী কেলেঙ্কারি, ভর্তি বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতিতে শিক্ষক নিয়োগসহ এমন কোন কাজ নেই এই উপাচার্য করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করা এই শোষক উপাচার্য মনে করেছিল বহিষ্কার, পদোন্নতি আটকে দেয়া, বিদেশে স্কলারশিপ পেলেও যেতে না দেয়া, শিক্ষার্থীদের বেতন নিজের মতো করে বাড়িয়ে দেয়ার ঘটনা গত কয়েক বছর বিনা বাধায় করে এসেছিলেন। কিন্তু তার দিন বুঝি ফুরিয়ে এলো। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চাপা ক্ষোভ বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি আলোর পথ দেখতে শুরু করেছে।
উপাচার্য বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হলো তোমাদের মতো বেয়াদব তৈরি করা।’ শুধু সে বিশ্ববিদ্যালয় নয়, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আর কতটা ভালো আছে? যেখানে হাফিজুর মোল্লাকে পরপারে পাড়ি দিতে হয়, বদরুলের হাতে খাদিজাদের জীবনে অশুভ ছায়া নামে, শহীদদের রক্তে ভেজা শহীদ মিনার বার বার শিক্ষার্থীদের বক্তে রঞ্জিত হয়, ক্যাম্পাসের পাহাড়ের পাদদেশে পড়ে থাকে ভিন্ন মতের শিক্ষার্থীদের নিথর দেহ। সেখানে এ তো তার ১ শতাংশ বেয়াদবিও নয়। ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার মতো বেয়াদবিও না করতে পারলে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব সত্তা তো ক’দিন পর জাদুঘরে জায়গা করে নিবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ যেখানে শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজস্ব একটি সত্তা তৈরি করা, তাদের অধিকার সচেতন হিসেবে গড়ে তোলা, সেখানে অধিকারের জন্য কথা বলাই হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ মহা অপরাধ হিসেবে।
দেশে এখনো শত শত ভালো যোগ্য মানুষ রয়েছেন। নাসির উদ্দিনকে সরানোর জন্য শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের আন্দোলনের চেয়ে সরকারের ইচ্ছাই যথেষ্ট। এমন বিশ্ববিদ্যায়ের প্রত্যাশা শিক্ষার্থীরা করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তা জানার জন্য আর কোন শিক্ষার্থীকে স্ট্যাটাস দিতে হবে না।
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার
লেখক: শিক্ষার্থী, টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।