– কাজী আশফিক রাসেল
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে স্থানীয় সংসদ সদস্যের উদ্যোগে কৃষক আনন্দমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। ব্যতিক্রমধর্মী এই অনুষ্ঠান নিয়ে এলাকায় দেখলাম অনেক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। আখেরে লাভ হলো কার? এসব প্রশ্ন ছোড়াছুড়ি এড়িয়েও এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা স্থানীয় সংসদ সদস্যকে অন্তত ধন্যবাদ দেওয়া যায়। কারণ, তিনি অবহেলিত কৃষক সমাজকে নিয়ে একটু হলেও ভেবেছেন। কৃষিই তো আমাদের অর্থনীতির প্রধান খুঁটি। কৃষককে নিয়ে ভাবার অর্থই হচ্ছে স্থানীয় জনগণকে নিয়ে ভাবা, আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির শিকড়কে সম্মান জানানো।
একজন জনপ্রতিনিধির সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হলো জনগণের মনের ভাষা বুঝতে পারা। জনগণের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, আনন্দ, বেদনা, মিলন, বিরহ, সংকটে জনগণের কাতারে শামিল হতে পারার ক্ষমতা। বর্তমান সময়ে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সবচেয়ে বড় সংকট হলো বিরিশিরি-ময়মনসিংহের অনিরাপদ সড়ক। যেখানে কয়েক বছর ধরে অতি মুনাফালোভী বালু খাদকদের দৌরাত্ম্যের কারণে ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়েছে হাজারো সাধারণ মানুষের স্বপ্ন। যেখানে মিশে আছে সন্তানহারা মা-বাবার করুণ আহাজারি, পিতা-মাতাকে বিসর্জন দেওয়া সন্তানের নীরব কান্না, স্বজনহারাদের শোকের মাতম। তাই এই সড়ককে এখন আর সড়ক মনে হয় না। এ যেন এক কান্নার নদী। যেখানে কেবল অশ্রু না, ভেসে বেড়ায় জলজ্যান্ত মানুষের রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত লাশেরাও। যেখানে মিশে আছে কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-শিক্ষক ও সব শ্রেণির মানুষের গভীর আবেগ।
এবার তো কৃষকের আনন্দমেলা হয়ে গেল। সামনে আসবে হয়তো আরও ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন। এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে মূলত জনপ্রতিনিধিরা জনগণের কাছাকাছি যেতে চান। জনগণের আবেগকে সম্মান জানাতে চান। ভবিষ্যতে কোনো জনপ্রতিনিধি যদি এমন আরও ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন করতে ইচ্ছুক হন, তাহলে আমার পরামর্শ থাকবে তিনি যেন জনগণের আবেগের জায়গা স্পর্শ করেন। তিনি যেন বিরিশিরি-ময়মনসিংহ সড়কে স্বজন হারানো শোকগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিয়ে একটি ছোট্ট শোক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। যেখানে স্বজনহারা মানুষগুলো মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে দোষী ব্যক্তিদের অন্তত অভিশাপটুকু দিতে পারে। আমার মনে হয়, এতে অনুষ্ঠান আয়োজক প্রকৃতপক্ষেই জনগণের আবেগের রাজ্যে প্রবেশ করতে সক্ষম হবেন।
লেখকঃ অধিকারকর্মী ও সাবেক ছাত্রনেতা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।