–ফায়াজ শাহেদ :
পদ্য গদ্য গল্প ছোটগল্প উপন্যাস ইত্যাদি এসব আমরা ছাত্র জীবনে পাঠ্যপুস্তকে পড়ে থাকি। লেখক পরিচিতি যখন পড়তে হয় অধিকতর লেখকের জন্ম সালের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু সালটাও স্ফুলিঙ্গের মত জ্বলজ্বল করে উঠে। মৃত্যু সাল যখন পড়া হয় তখন চিন্তার জগতে সূক্ষ্মভাবে কয়েকটি প্রশ্ন নাড়া দিয়ে উঠে,
★ভাল মানের সাহিত্যিকগণ কি সবাই মারা গেছেন?
★ মারা গেলেই কি পাঠ্যপুস্তকে লেখা অন্তর্ভুক্ত হয়?
★ চলে যাওয়া সাহিত্যিকগণই কি লেখা ছাপানোর অগ্রাধিকারটা বেশি পান?
★ উচ্চাঙ্গের সাহিত্য বলতে কি তাঁদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এবং এখন কেউ সাহিত্য রচনা করতে পারেন না?
এ সকল প্রশ্ন যখন মনে মনে আন্দোলিত হয় তখন বাংলা সাহিত্য বলতে মৃতু লেখকদের সাহিত্য পারদর্শীতা এবং গত শতাব্দিতে বাংলা সাহিত্য প্রাণ হারিয়ে তাঁদের সঙ্গে সমাধিস্থ হয়ে যাওয়াকে বলে মনে হয়। ষাট সত্তর কিংবা একশো বছর আগের লেখকদের ভাষা স্বভাবতই কঠিন ও দুর্বোধ্য হওয়াতে সমকালের সাহিত্য পাঠকমহল বই বিমুখ হচ্ছে। এবং সাহিত্যকে একটি কঠিন ও দুর্বোধ্যশ্রেণির বিষয় বলে মনে করা হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টকর্মের আলোচনায় ‘গোরা’ কিংবা ‘শেষের কবিতা’ এর খুব নামডাক শোনা যায়। সেই আগ্রহে সেসব বই পড়তে গিয়ে দুর্বোধ্য শব্দে হোঁচট খেয়ে পাঠরুচি নষ্ট হয় এবং অনীহা জন্ম নেয়। সেজন্যে স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার পাঠ্যবইয়ে মৃতু লেখকদের পাশে অধিকহারে সমকালের তরুণ লেখকদের অন্তর্ভুক্তি জরুরি। গত শতাব্দির তুলনায় এ শতাব্দিতে প্রযুক্তিশিল্পের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যশিল্পের আনাগোনা কোন অংশে কমে যায়নি। বিশেষ করে সমকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাহিত্যচিন্তক ও সৃজনশীল হাজারো সুকান্তের মত তরুণ লেখকদের জাদুকরী লেখা দেশীয় নানা পত্র পত্রিকায় ছাপানো হচ্ছে। যা দেশপ্রেম উন্নতির অবতরণ এবং সুশীল সমাজ বিনির্মাণে ইতিবাচক আবেদন রাখে। এ মূল্যবান লেখাগুলো পত্রপত্রিকায় ছাপানো হলেও জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির কোন ব্যতিক্রম চিন্তা কর্তৃপক্ষ করেনি। তরুণদের লেখা পাঠ্যপুস্তক করণের কথাটি কৌতূহলের হলেও এটি তারুণ্যের সাহিত্যচিন্তা ও মননকে নতুনভাবে উচ্ছ্বাসিত করে তোলবে এবং একপ্রকার স্বীকৃতি স্বরূপ সাহিত্যিক আবিষ্কারের যুগান্তকারী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। আমাদের দেশে এমনও তরুণ লেখক রয়েছে যাদের কল্পনাশক্তি এবং বস্তুচিন্তায় কবিতাতে যোগায় শৈল্পিক প্রাণ। যা কোন অংশে রবীন্দ্র-নজরুলের চেয়েও কম নয়। ফলে তারোণ্যের সাহিত্যচিন্তা ও বাংলা সাহিত্যকে আরো গতিময় করবার জন্যে প্রয়াত সাহিত্যিকদের পাশাপাশি তরুণ সাহিত্যিকদের লেখা পাঠ্যপুস্তককরণ জরুরি বলে মনে করছি।
শিক্ষার্থী: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।