——–
বাতাসে বহিছে প্রেম,নয়নে লাগিলো নেশা
কারা যে ডাকিলো পিছে,বসন্ত এসে গেছে…….
এই গানটি ছাড়া’বসন্ত উৎসব’যেন পরিপূর্ণতা পায় না।
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। বসন্ত হচ্ছে ছয় ঋতুর শেষ ঋতু। বাংলাদেশের ফাল্গুন ও চৈত্র মাস মিলে বসন্ত উদযাপিত হয়। যা ঋতুরাজ নামে পরিচিত।তাই বসন্ত এলে গাছে গাছে ফলের কুড়ি,ফুল ফুটতে দেখা যায়।ঋতুর রাজা বসন্তকে অনেক আনন্দ ও উৎসবের মধ্যে দিয়ে উদযাপন করা হচ্ছে।কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা নতুন সাজে সেজেগুজে বের হয় উৎসব করার জন্য। তারা আকর্ষণীয় হতে মাথায় ফুলের মুকুট দিয়ে মেয়েরা ফুলকুমারী সাজে।বসন্তে ফোটা ফুলের মধ্যে হচ্ছে অশোক, আখ আরকাটা, হিমঝুড়ি, রক্তকাঞ্চন, কুসুম, কুরচি, পলাশ, দেবদারু, নাগেশ্বর সহ নানা রকমের ফুল।
বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদ্যাপন করার রীতি চালু হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্তোৎসব পালনের রীতি চলে আসছে। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব নিয়মিত আয়োজন করে আসছে।পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব বাঙালির প্রাণের উৎসব। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের ১ তারিখে এই উৎসব পালিত হয়। এদিনটি পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত বরণ নামে পরিচিত। ১৯৯৪ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বসন্ত উৎসব উদযাপন শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায়। জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন কমিটি তখন থেকেই নিয়মিত চারুকলার বকুলতলায় এবং ধানমণ্ডির রবীন্দ্রসরোবরে বসন্ত বরণের জন্য উৎসবের আয়োজন করছে।আবার পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্ক, লক্ষ্মীবাজারেও।এবছরেও বসন্তের প্রথমদিনটি বরণ করে নিতে নগরের সবচেয়ে বড় আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায়”।বসন্ত আবাহনের এসব আয়োজনে সন্ধান মেলে বাঙালির মনন আলোড়িত করা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, অতুলপ্রসাদ, জসীমউদদীন, শাহ আবদুল করিমের অমূল্য সৃষ্টিসম্ভারের।
পহেলা ফাল্গুন,ইংরেজি ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বসন্ত উৎসব ২০২৩’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।বিকাল ৪টায় একাডেমির নন্দনমঞ্চে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে বরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে সংগীত, কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, নৃত্য, বসন্তের পোশাক প্রদর্শনী ও কোরিওগ্রাফির নান্দনিক আয়োজন করা হয়েছে।একাডেমি সূত্র জানায়, নব ফাল্গুনের এই বর্ণিল উৎসবে বিশেষ আয়োজন হিসেবে সকল নারী দর্শকদের মাথায় ফুলের রিং ও পুরুষদের হাতে ফুলের মালা রাখার আহ্বান জানানো হচ্ছে। উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ ১০ জনকে পুরষ্কৃত করা হবে।
কোকিলের স্বতঃস্ফূর্ত কুহু কুহু ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠছে চারপাশ। পশুদের রাজত্বে নব সৃষ্টির উদ্দীপনা জাগছে মহা সমারোহে। উদ্ভিদজগৎ পত্র-পল্লবে শোভিত হয়ে আরোহণ করছে জীবনোচ্ছ্বাসের চূড়ান্ত শিখরে। ধরণী তার ধ্যান-বন্দনা শেষে পরমানন্দের শিহরণকে প্রাণশক্তি রূপে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিশ্বপ্রকৃতির চেতনা জুড়ে। এভাবে বসন্ত হয়ে উঠেছে নব জীবনের জাগ্রত জয়গানের চিরায়ত প্রতিচ্ছবি।বিবর্ণ প্রকৃতিতে জেগে উঠেছে বর্ণালী ঢেউ।প্রতিবছর অত্যন্ত আনন্দদায়ক পরিবেশে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে পহেলা ফাল্গুন পালিত হয়ে থাকে। গাছের নতুন পাতা গজায় আর কোকিলের কণ্ঠে মনে ইঙ্গিত দিয়ে যায় বসন্তের ছোঁয়ার।পহেলা ফাল্গুন বর্তমানে তরুণ-তরুণীদের মাঝে ব্যাপক ভাবে পালন করতে দেখা যায়। এই দিবসে মেয়েরা শাড়ি পড়ে ছেলেরা পাঞ্জাবি পড়ে ট্রেডিশন অনুযায়ী দিবসটি পালন করে।বাঙালির এই অসাম্প্রদায়িক উৎসব কে পালন করার জন্য অনেকে আগ্রহী হয়ে থাকে।প্রতিবছর জাতি,ধর্ম,বর্ণ, নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে এ দিনটি অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে পালন করে আসছে।তাইতো কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়—
“ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত।
শান-বাঁধানো ফুটপাথে পাথরে পা ডুবিয়ে এক কাঠখোট্টা গাছ
কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে হাসছে।
ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত।“
– সামিনা আক্তার
শিক্ষার্থী- পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়