নুরুল ইসলাম নূর
পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর শব্দটি হচ্ছে মা। জগৎ সংসারের শত দুঃখ-কষ্টের মাঝে যে মানুষটির একটু সান্ত্বনা আর স্নেহ-ভালোবাসা আমাদের সমস্ত বেদনা দূর করে দেয় তিনিই হলেন মা। মায়ের চেয়ে আপনজন পৃথিবীতে আর কেউ নেই। দুঃখে-কষ্টে, সংকটে-উত্থানে যে মানুষটি স্নেহের পরশ বিছিয়ে দেয় তিনি হচ্ছেন আমাদের সবচেয়ে আপনজন মা। প্রত্যেকটি মানুষ পৃথিবীতে আসা এবং বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা মায়ের। মায়ের তুলনা অন্য কারো সঙ্গে চলে না। মা হচ্ছেন জগতের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ন্যায় ও সমতার ধর্ম ইসলাম মায়ের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইসলাম মাকে উচ্চাসনে স্থান দিয়েছে। ইসলামে ঘোষণা হচ্ছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। মায়ের সেবা শুশ্রুষার দ্বারা জান্নাতের লাভ করা যায়।
রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ ব্যতীত যদি কাউকে সেজদা করার নির্দেশ দেওয়া হতো, তবে সন্তানকে নির্দেশ দেয়া হতো তার মাকে সেজদা করার জন্য। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) পরিণত বয়সে মায়ের সান্নিধ্য পাননি। এ জন্য তিনি আফসোস করতেন। মায়ের সেবা করতে না পারার কষ্ট তার অন্তরে সর্বদা পীড়া দিত। এ জন্য তিনি দুধমাতা হালিমা সাদিয়াকে (রা.) নিজের গায়ের চাদর বিছিয়ে দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেছেন। সন্তানের ওপর মায়ের যে হক তা কখনো আদায় হওয়ার মতো নয়। মায়ের বুকের এক ফোঁটা দুধের মূল্য সন্তানের গায়ের চামড়া দিয়ে জুতা বানিয়ে দিলেও আদায় হবে না।
সন্তানের জন্য পিতার অবদানও কোন অংশে কম নয়। তিনি নিজের গায়ের ঘাম পায়ে পেলে রাতদিন পরিশ্রম করে এবং সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যায়। পিতাকে সন্তুষ্টি করতে পারলে মহান আল্লাহ ও সন্তুষ্টি হয়ে যায়। হাদিস শরীফে রয়েছে আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। আল্লাহ তায়ালা পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়ে সূরা বনী ইসরাঈলের ১৭ নং আয়াতে ইরশাদ করেন, তোমার পিতামাতার সাথে ব্যবহার করো। যদি তোমাদের কাছে তাদের কোন একজন বা উভয়ে বৃদ্ধাবস্থায় থাকে, তাহলে তাদের ‘উহ’ শব্দ পর্যন্ত বলো না এবং তাদের ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না, বরং তাদের সাথে মর্যাদা সহকারে কথা বলো। আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থেকো এবং দু’আ করতে থেকো এই বলে যে, হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করুন, যেভাবে তাঁরা দয়া, মায়া সহকারে আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছিলেন।
যে ব্যক্তি বৃদ্ধ অবস্থায় তার বাবা-মাকে পেল কিন্তু তাদের সেবা-যত্ন করল না, তার মতো হতভাগা আর কেউ নেই। পাশ্চাত্য মনীষী রাস্কিন মনে করেন পৃথিবীতে মানুষের তিনটি কর্তব্য আছে-‘‘Duty towards God, duty towards parents and duty towards mankind’’.
বর্তমানে পেশাগত সফলতা টিকিয়ে রাখতে এবং তথাকথিত অভিজাত সমাজে নিজের মূল্যবোধ বজায় রাখতে গিয়ে কিছু কিছু সন্তানের কাছে তার নিজের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে। এই অপসংস্কৃতির হাওয়া আমাদের দেশেও বইছে এবং দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অপসংস্কৃতি বন্ধ করা প্রয়োজন। এত কষ্ট করে সন্তানকে লালন-পালন করে বড় করার পর বৃদ্ধ অবস্থায় কেন মাতাপিতার স্থান হবে বৃদ্ধাশ্রমে? যাদের মাতাপিতার স্থান বৃদ্ধাশ্রমে তাদের মত অভিশপ্ত সন্তান এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। তাদের শান্তি এই পৃথিবীতেও হবে না, পরকালেও হবে না। শুধু ইসলাম ধর্মে নয় প্রতিটি ধর্মে পিতামাতার প্রতি ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। পিতামাতাকে সেবা করার মধ্যে দিয়ে মহান স্রষ্টাকে পাওয়া যায়। যারা মাতাপিতাকে সেবা না করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয় তাদের জায়গা হবে জাহান্নামে। কারণ মাতাপিতা সন্তানের বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে তার যথাযথ লালন-পালন, তাকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলা এসব ঘিরেই পিতা-মাতার জগৎ। পিতামাতা সন্তানের জন্য সীমাহীন কষ্ট স্বীকার করেন। সব বাবা-মার একটাই প্রত্যাশা-‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। সন্তানের সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠার পেছনে বাবা-মায়ের নিরলস সাধনা বিরাট ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেক মাতা-পিতাই চায় তাদের ছেলেমেয়েরা সুসন্তান হিসেবে সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াক, সকল প্রকার অন্যায় ও মিথ্যাকে প্রতিহত করার ক্ষমতা অর্জন করুক। তারা সবসময় সন্তানের কল্যাণ চায়। মাতাপিতা সন্তানের জন্য এত কষ্ট করার পরও কিছু কিছু নর পশুর কাছে বৃদ্ধা বয়সে থাকার জায়গাটুকু পর্যন্ত পাই না।
প্রতিটি ধর্মে মাতাপিতাকে সর্বোচ্চ স্থানে আসীন করেছেন। ধর্ম যাই হোক সন্তান এবং পিতা-মাতার মধ্যকার ভালোবাসার অনুভূতিগুলো একই রকম ও অকৃত্রিম। প্রত্যেক ধর্মেই মাতাপিতাকে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। মাতা-পিতাকে সর্বোচ্চ আসনে ভূষিত করা হয়েছে। পৃথিবীতে যদি সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত অন্য কাউকে নামকরন করা হয় বা দেওয়া হয় তবে তা হলো মাতা-পিতা। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ আছে ‘জননী স্বর্গ অপেক্ষা গরীয়সী। পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাই পরম তপস্যার ব্যক্তি। খ্রিস্টান ধর্মেও একই রকমের কথা উল্লেখ আছে।
বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটকে বলা হয়েছে ‘মাতাপিতার সেবা করাই সবচেয়ে উত্তম’।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পৃথিবীতে মরেও যারা অমর এবং চিরস্মরণীয় হয়ে মানুষের হৃদয়ে আজও বেঁচে আছেন। তারা পিতামাকে ভালোবাসতেন। হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রাহ) পিপাসার্ত জননীকে পানি পান করাতে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঘুমন্ত মায়ের মাথার কাছে সারা রাত দাঁড়িয়ে থাকার কারণ মায়ের নেক দোয়ায় মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পেরেছেন। আর মিয়ানমারের সন্তানেরা জঘন্য বর্বর বৌদ্ধদের পৈশাচিক-লোমহর্ষক নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড হতে মাতা-পিতাকে বাঁচাতে শত শত মাইলের অধিক দুরত্বের রাস্তা দিয়ে মাতা-পিতাকে অতি কষ্টে বহন করে বাংলাদেশে নিরাপদ স্থানে নিয়ে এসেছেন। আর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম ইতিহাসে মাতৃভক্তদের তালিকায় চিরকালই স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। রাম পিতৃসত্ব পালনের উদ্দেশ্যে চৌদ্দবছর বনবাস কাটিয়েছিলেন। হাজী মুহম্মদ মহসীন, জর্জ ওয়াশিংটন ও আলেকজান্ডার প্রমুখ মহান ব্যক্তিগণ মাতা-পিতার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ইতিহাসে যুগ-যুগান্তর ধরে চির স্মরণীয় ও বরণীয়।
যে ব্যক্তি মাতাপিতাকে খুশি রাখবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে খুশি করবেন। আবূ কাহিল বলেন, রাসুলুল্লাহ (স) আমাকে বলছেন, হে আবূ কাহিল! আল্লাহ নিজের জন্য কি সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে, তা কি তোমাকে বলবো?
আমি বললাম, হে রাসুল (স) বলুন। রাসুলুল্লাহ (স) বললেন, আল্লাহ তোমার হৃদয়কে উজ্জীবিত করুক এবং যেদিন তোমার দৈহিক মৃত্যু হবে, সেদিন তোমার হৃদয়ের যেন মৃত্যু না হয়। হে আবূ কাহিল শুনো! যে ব্যক্তি জীবিত অথবা মৃত্যু উভয় অবস্থায় নিজের মাতাপিতার সাথে ভালো ব্যবহার করবে, কিয়ামতের দিন তাকে খুশি করা আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যাবে। আমি বললাম, মৃত্যু মাতাপিতার সাথে কিভাবে ভালো ব্যবহার করবো?
রাসুলুল্লাহ (স) বললেন, তাদের উভয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করাই তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা।
মাতাপিতার সেবা করার মাধ্যমে হজ্জ, ওমরা এবং জিহাদের প্রতিদান পাওয়া যায়। হযরত আনাস (রা) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (স) এর কাছে এসে বলল, আমি জিহাদে যেতে চাই, কিন্তু আমার সে সামর্থ্য নেই। রাসুল (স) বললেন, তোমার মা-বাবা কেউ কি বেঁচে আছেন? সে বলল, আমার মা আছেন।
রাসুলুল্লাহ (স) বললেন, তুমি তোমার মায়ের সাথে সদাচারের মধ্য দিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করো। এটা করলেই তুমি হাজী, ওমরাকারী ও জিহাদকারী হিসেবে গণ্য হয়ে যাবে।
যে ব্যক্তি মাতা-পিতাকে শ্রদ্ধা করবে কাল কিয়ামতে আল্লাহ তাকে আশ্রয় দিবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। হাদিস শরীফে রয়েছে, যাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (স) বলছেন, তিনটি গুণ যার ভেতরে থাকবে, আল্লাহ তাকে তাঁর আশ্রয়ে নিয়ে নিবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। দূর্বলের প্রতি নম্র আচরণ, মাতা-পিতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং অধীনস্থদের প্রতি সহানুভূতি।
প্রত্যেক সন্তানেরই উচিত তাদের পিতামাতার আদর্শ ও ন্যায়নীতি অনুসরণ করে চলা। সমাজে তাদের মান সম্মান ক্ষুন্ন হয় এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়। পিতামাতার ভালোবাসা এতটাই গভীর যে সন্তান বিপথগামী হলেও তাকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না। তাই সব সময় তাদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে হবে। তবে পিতামাতা যদি ধর্মবিরোধী কোনো কাজ তবে সে ক্ষেত্রে তাদের নির্দেশ মানা যাবে না। সমাজে যারা পিতা-মাতার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মী তাদের সাথে সুসম্পর্ক রেখে পিতামাতার সম্মান বৃদ্ধি করা। পিতামাতার সাথে সব সময় সদাচরণ করা এবং কোমল কণ্ঠে ও মার্জিত ভাষায় কথা বলা। কোনো অবস্থাতেই পিতামাতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে পিতা তার ভরণ-পোষণ ও লালন পালনের ব্যবস্থা করে। মাতৃদুগ্ধ সন্তানের আহারের সংস্থান করেন। সুতরাং সন্তানের সাথে পিতামাতার রক্তের এবং নাড়ীর বন্ধন। বিপথগামীতা এবং অবাধ্যতার দ্বারা এই বন্ধনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা উচিত নয়।
পিতামাতার অবাধ্যতার পরিণাম :
মনস্তত্ত্ববিশারদ প্রফেসর মিলান কিস বলেছেন, পিতামাতার শুভ কামনার প্রভাব হাজার হাজার মাইল দূর থেকেও সন্তানের ওপর পতিত হয়। পিতামাতা অসুস্থ হলেও তাদের অদৃশ্য রশ্মি নিষ্প্রভ দুর্বল হয় না; বরং বৃদ্ধি পায়। সন্তানের অবাধ্যতাও পিতামাতার অদৃশ্য আলোক রশ্মিতে তোলপাড় সৃষ্টি করে, কিন্তু যেহেতু সে রশ্মি পিতামাতার ক্রোধ, লোভ, ফরিয়াদ এবং দুশ্চিন্তা অন্তর্ভুক্ত থাকে, এ কারণে সেই রশ্মি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির মাধ্যমে সন্তানের ক্ষতি করে।
প্রফেসর ডাক্তার নূর আহমদ নূর বলেছেন, একজন চিকিৎসক হিসেবে চোখের সামনে নানা ধরণের মৃত্যুদৃশ্য আমাকে দেখতে হয়। এ সকল মৃত্যুর মধ্যে কিছু কিছু মৃত্যু আমাদের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছু রেখে যায়। আমি দেখেছি, যারা পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করে, মহান আল্লাহ তাদের পার্থিব জীবনের অনেক সমস্যার সমাধান করে দেন। পিতামাতার আনুগত্যকারী সন্তানের মৃত্যু ভালোভাবে হয়। পক্ষান্তরে যারা পিতামাতার অবাধ্যতা করে, তাদের সাথে খারাপ আচরণ করে, তারা পার্থিব জীবন শাস্তি ভোগ করে এবং কষ্টকর মৃত্যুবরণ করে। তিনি আরো বলেন, আমার পিতার এক বন্ধু তার মা মৃত্যুশয্যায় থাকাকালীন তার সাথে খারাপ আচরণ করেন। এমনকি তার মা মৃত্যুশয্যায় কষ্ট পেয়ে এক সময় নিঃসঙ্গ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আমি এ বিষয়ে অনুসন্ধানী ছিলাম, পিতামাতার সাথে যারা খারাপ ব্যবহার করে তাদের মৃত্যুকালীন অবস্থা কেমন হয়। মায়ের মৃত্যুের তিনবছর পর উক্ত ব্যক্তি ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েন। আমার পিতা আমাকে তার বন্ধুর চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। আমি গিয়ে দেখলাম তিনি খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছেন এবং কাঁদছেন। আমি তাকে সেবা শুশ্রূষা এবং খাওয়া দাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান যে, তার তিনটি সন্তান রয়েছে, অথচ তারা কেউ এ অসুস্থতার মধ্যেও পিতাকে একবার দেখতে আসেনি। নিঃসঙ্গ অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে এক সময় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পাড়ার লোকেরা পরদিন সকালে দেখতে পায়, মৃত ব্যক্তির লাশ অসংখ্য পিঁপড়ায় কামড়াচ্ছে। মায়ের সাথে খারাপ আচরণের শাস্তি দুনিয়াতেই পেয়ে যান।
তিনি আরো একটি তার দেখা বাস্তব ঘটনা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমার এলাকার এক যুবক হার্ট এ্যাটাক করেছিল। সে এত কষ্টের সাথে মৃত্যুবরণ করলো যে, গত ২০ বছরে আমি কাউকে এমন কষ্টকর অবস্থায় মৃত্যুবরণ করতে দেখেনি। তার চেহারা নীল হয়ে গিয়েছিল। চোখ যেন ঠেলে বেরিয়ে আসছিল। মুখ থেকে গোঙানির শব্দ বের হচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিলো কেউ যেন তার গলা টিপে ধরেছে। মৃত্যুর একদিন আগে তার অবস্থা এমন চরম আকার ধারণ করলো যে, তাকে দেখে হাসপাতালের অন্য রোগীরা ভয়ে শয্যা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলো। এ রকম অবস্থা দেখে তাকে দূরে আলাদা একটি রুমে স্থানান্তর করা হয়। তার পিতা এসে আমাকে বললো, আমি তার কষ্ট দেখে সহ্য করতে পারছি না। তাকে বিষের টিকা দিয়ে দিন, সে তাড়াতাড়ি মরে যাক। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সে কী এমন গুরুতর পাপ করেছে আমাকে বলুন। তিনি বললেন, সে তার স্ত্রীকে খুশি করার জন্য তার মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করতো এবং প্রহার করতো। আমি বাধা দিতাম কিন্তু সে শুনতো না। তার মৃত্যুকালীন এ কষ্ট তার মায়ের বদ দোয়ার ফল। আল্লাহ তায়ালা পিতামাতার অবাধ্যতার শাস্তি দুনিয়াতেই প্রদান করেন।
পৃথিবীতে হাজারও সম্পর্কের মাঝে সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্কের বন্ধন গড়ে ওঠে সন্তান এবং মাতাপিতার মধ্যে। যারা আমাদেরকে এই পৃথিবীতে এনে এর অফুরন্ত সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ করে দিল বৃদ্ধা অবস্থায় যেন তাদের স্থান বৃদ্ধাশ্রমে না হয়। পিতামাতার সাথে নফরমানী করলে পার্থিব জীবনেও লাঞ্চনার স্বীকার হতে হবে এবং পরকালেও কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। অন্যান্য ধর্মেও পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের ব্যাপারে কঠোর বাণী উচ্চারিত হয়েছে। সুতরাং ইহকালীন এবং পরকালীন মুক্তির পথ সুগম করতে হলে পিতামাতার প্রতি কর্তব্যগুলো ঠিকভাবে পালন করতে হবে। প্রতিটি সন্তান যদি মাতা-পিতাকে ভালোবেসে বৃদ্ধা অবস্থায় তাদের সেবাযত্ন করে তাহলে আমরা বৃদ্ধাশ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হব। পরিশেষে একটাই কথাই বলতে চায়, মাকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। নির্দিষ্ট একদিন মা দিবস নয়, প্রতিদিনই মা দিবস মনে করুন।
নুরুল ইসলাম নূর
শিক্ষার্থী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।