চীনের উহান শহর থেকে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি লাভ করে খুব দ্রুত পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাসের ব্যপক সংক্রমনের ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে বিশ্ব মহামারী হিসেবে ঘোষনা দেয়। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের তালিকা থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশ ও। ৮ই মার্চ ২০২০, বাংলাদেশ এ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়।আর তারপর থেকেই করোনা আঘাত হানে বিশ্ব অর্থনীতিতে।করোনা ভাইরাস পুরো বিশ্ব অর্থনীতিকেই ওলটপালট করে দিচ্ছে, যে ধাক্কা থেকে মুক্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই বাংলাদেশেরও। আর এ করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ বেশ বড় রকমের পরিক্ষার সম্মুখীন হয়েছে। যেহেতু এটা এটি পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ধস নামতে থাকে অর্থনৈতিক সকল খাতে। করোনা ভাইরাস শুধু স্বাস্থ্য ঝুঁকি নয়, গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকেই নাড়িয়ে দিচ্ছে৷ এর ফলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিও কমে যেতে পারে৷ চাকুরি হারাতে পারেন মানুষ৷ অনেক অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে করোনাভাইরাসের অতিমারীর কারণে বিশ্বজুড়ে গত কয়েক শতকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও সুদূরপ্রসারী যে মন্দাটি ঘটবে বাংলাদেশেও তার বিরাট এক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। এতে বাংলাদেশের সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে । শিল্পোৎপাদন, পণ্য বিক্রি ও জনগণের আয় কমে যাবে এবং কর্মী ছাঁটাই, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান বিশ্বের উন্নয়নশীন দেশ হিসেবে এসমস্ত সমস্যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বিরাট হুমকি।
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান দুই চালিকা শক্তি রপ্তানি ও রেমিট্যান্স৷ রপ্তানি আয় কমে গেলে দেশের শিল্প কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের আয় কমে যাওয়া বা কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা তৈরি হবে৷ অন্যদিকে প্রবাসীরা টাকা পাঠানো কমিয়ে দিলে তাদের পরিবার দেশে আগের মত খরচ করতে পারবেন না৷ এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যবসা বাণিজ্যে৷ কমে যাবে বেচাকেনা৷ চাহিদা কমে গেলে ভোক্তা পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে৷ আবার বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এর কারণে অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে যাবে৷ সব মিলিয়ে চলতি বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ বড় চ্যালেঞ্জ হবে সরকারের জন্যে৷ পুরো দেশ জুড়ে অবরোধ থাকায় জনজীবন ও বিপর্যস্ত। এদিকে কুমছে আমদানি। উৎপাদন হ্রাসের কারনে রপ্তানি ও যেন আটকে গেছে। সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তৈরি পোশাক খাত ও বিপাকে। উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি বন্ধ হচ্ছে কারখানা চাকরি হারাচ্ছেন লক্ষ লক্ষ শ্রমিক। চলমান মহামারি বাংলাদেশে নতুন ধরনের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ডিজিটাল বিভাজন সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশের অর্থনীতির সূচক সমূহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অপরদিকে, ঋণপত্র খোলা বা নিস্পত্তি অনেক পরিমানে কুমেছ অন্য সময়ের তুলনায়। প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো বিদেশি আয়ের পরিমাণ ও কুমে এসেছে এবং অর্থনীতিবিদরা ধারনা করছেন আরো কমবার।
বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাঠানো প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) অর্থনীতিকে অনেকটা চাঙা করে রাখে, কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন। এতে রেমিট্যান্সের ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন। সারাদেশে জুড়ে লকডাউন চলাই কমেছে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা ও আয় পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা নাই বললেই চলে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ঋণ নিচ্ছে না বেসরকারি উদ্যোক্তারা। করোনার এ তান্ডবে হুমকির মুখে পড়েছে বাংলাদেশর অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি কৃষি খাতও। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে মতে, বাংলাদেশের ৮৭% মানুষের আয়ের উৎস কৃষিকাজ।যার ফলে কৃষি নির্ভর লোকজন ভুগছেন অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে।
সবকিছুর পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়নশীল দেশ হবার দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ এর অর্থনীতি।তাই বিশেষজ্ঞরা এখন থেকে উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্যসংকট নিরসন ইত্যাদির দিকে নজর দিতে বলছেন।জনসম্পদই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ অর্থনীতির ভরসা। সুতরাং প্রান্তিক মানুষগুলোকে শুধু বাঁচিয়ে রাখা নয়, তারা যাতে সক্ষম থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সংকট কত দিন স্থায়ী হবে জানা না থাকায় আগামী ছয় মাস কিংবা এক বছরের পরিকল্পনা নিয়ে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে।
মারুফ হাসান
শিক্ষার্থী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়